|
|
|
|
ক্ষতি, বিপাকে ফুলচাষিরা |
টানা প্রচারে উৎসাহ |
সঞ্জয় চক্রবর্তী • শিলিগুড়ি |
বিকল্প চাষের ব্যাপারে উদ্যান পালন দফতরের লাগাতার প্রচারের জেরে ফুল চাষে নেমে বিপাকে পড়েছেন শিলিগুড়ি মহকুমার কয়েকশো চাষি। বছর দুয়েক ধরে মহকুমার ফাঁসিদেওয়া এবং খড়িবাড়ি এলাকায় গাঁদা, গ্ল্যাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গোলাপ চাষ শুরু হয়েছে। কিন্তু সেই ফুল শিলিগুড়ির বাজারে বিক্রি করতে গিয়ে নাজেহাল হতে হচ্ছে চাষিদের। একটি ভাল জাতের গোলাপ কিনতে শিলিগুড়ি বাজারে যেখানে কমপক্ষে ৪-৫ টাকা দিতে হয় সেখানে কৃষকদের বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ৩০ পয়সা দরে। একই অবস্থা গাঁদা এবং গ্ল্যাডিওলাসের ক্ষেত্রেও। ক্ষুব্ধ চাষিদের অভিযোগ, ফুলের পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে কম দামে তাঁদের ফুল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। উদ্যান পালন দফতরকে বহু বার বলার পরেও শিলিগুড়ি শহরে স্থানীয় চাষিদের কোনও বাজার গড়ার কাজে সাহায্য করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন উদ্যান পালন দফতরের শিলিগুড়ির আধিকারিক বিপ্লব সরকারও। তিনি বলেন, “শিলিগুড়ির পাইকারি বাজারের যে হাল তাতে স্থানীয় চাষিদের জন্য আলাদা করে বাজার তৈরি করা না-হলে এই সমস্যা মিটবে না। পাইকারি ব্যবসায়ীদের ধার্য করা দামেই চাষিদের ফুল বিক্রি করতে হবে। বাজারের তৈরির জন্য আর্থিক অনুদান নিয়ে সমস্যা নেই। সমস্যা হল জমি মিলছে না। পুরসভাকে এই ব্যাপারে বলা হলেও জমির ব্যবস্থা হয়নি। অন্য কোনও সংস্থা থেকে জমির ব্যবস্থা করা যায় কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” মূলত জঙ্গল ও চা বাগান ঘেরা শিলিগুড়ি মহকুমায় কৃষি এলাকা বলতে খড়িবাড়ি ও ফাঁসিদেওয়া ব্লকের কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত। ধান, পাট চাষে লাভ ক্রমশ কমতে থাকায় এই দুটি ব্লকের অধিকাংশ কৃষক দীর্ঘদিন ধরে সবজি চাষে মন দিয়েছেন। শিলিগুড়ির মতো বৃহৎ বাজার থাকায় প্রথম দিকে সবজি চাষ চাষিদের নিশ্চিত আয়ের সন্ধান দিলেও এখন সার ও কীটনাশকের দাম ক্রমশ বাড়তে থাকায় সমস্যা বাড়ছে। অনেকেই জৈব সার দিয়ে সবজি চাষে নামলেও তেমন সাফল্য মেলেনি। এই পরিস্থিতিতে শিলিগুড়িতে ফুলের বৃহৎ বাজারের কথা মাথায় রেখে উদ্যান পালন দফতর থেকে প্রচারে নামা হয়। প্রচার এবং প্রশিক্ষণের কাজে নামে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ও। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ি বাজারে সারা বছর গড়ে ৪ কোটি টাকার ফুলের ব্যবসা হয়। এই তথ্য মাথায় রেখেই ফুল চাষে নামেন স্থানীয় চাষিরা। মেদিনীপুর থেকে আসছে গোলাপ চারা। কলকাতা থেকে আনা হচ্ছে গাঁদা কিংবা গ্ল্যাডিওলাসের বীজ। খড়িবাড়ির উল্লাজোতের বাসিন্দা গোলাপ ফুল চাষি অংশুপতি মণ্ডল বলেন, “শিলিগুড়ির ফুলের বাজারের কথা ভেবেই চাষে নামি আমরা। এখন দাম পাচ্ছি না। কলকাতা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বেশি দামে ফুল কিনলেও আমাদের কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য করা হচ্ছে। স্থানীয় ফুল চাষিদের বাজার তৈরি হল সেই সমস্যা মিটত। সেটাও হচ্ছে না।” ফাঁসিদেওয়ার বাসিন্দা গাঁদা ফুল চাষি সামসুর রহমান বলেন, “ফুল তো খাবার নয় যে দামে না-পোষালে বাড়িতে নিয়ে আসব। পাইকারী ব্যবসায়ীরা তারই সুযোগ নিচ্ছেন। প্রশাসনও উদাসীন।” |
|
|
|
|
|