|
|
|
|
মমতার জঙ্গলমহল সফর ঘিরে তৎপরতা সব মহলে |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
মাওবাদী-উপদ্রুত এলাকায় ‘শান্তি ও উন্নয়নে’র বার্তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এই প্রথম জঙ্গলমহল সফরে যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আজ, সোমবার সন্ধ্যায় কলকাতা থেকে রওনা হওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। তাঁর সচিবালয় সূত্রের খবর, পশ্চিম মেদিনীপুর ও বাঁকুড়ার কিছু জায়গায় তাঁর যাওয়ার কথা। তবে, কালকা মেল দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে তাঁর সফরসূচির বদল হতে পারে বলেও মনে করছে প্রশাসন। আজই ওই সফরসূচি চূড়ান্ত হবে মহাকরণে।
মুখ্যমন্ত্রীর সফরসূচি নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাইছেন না। প্রধান কারণ, অবশ্যই নিরাপত্তা। খুব সম্প্রতি গোয়েন্দা সূত্রে রাজ্যের কাছে খবর এসেছে, জঙ্গলমহলে নতুন করে শক্তি বাড়াচ্ছে মাওবাদীরা। সংবাদ মাধ্যমের কাছে পাঠানো সাম্প্রতিক বিবৃতিতে যৌথ বাহিনী প্রত্যাহার এবং বন্দি-মুক্তি নিয়ে তৃণমূল কথার খেলাপ করছে বলে অভিযোগও করেছেন মাওবাদী নেতৃত্ব। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর জঙ্গলমহল সফরকে ঘিরে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশাসন বিশদে বলতে চাইছে না।
রবিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত শুধু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সফর ঘিরে নিরাপত্তার সব রকম আয়োজনই করা হয়েছেন।” রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সফরসূচি ঠিকঠাক না-জানায় আমরাও চূড়ান্ত পরিকল্পনা করতে পারছি না।” তবে সুকুমারবাবু জানিয়েছেন, কাল, মঙ্গলবার দুপুরে ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে একটি সভা করার কথা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। মহাকরণ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের কয়েকটি ‘ট্রমা অ্যাম্বুল্যান্স’ উপহার দেবেন। সফরে মমতার সঙ্গী মন্ত্রীদেরও কেউ কেউ সঙ্গে শুকনো খাবার, ওষুধ, ‘বেবি-ফুড’ নিয়ে যাবেন।
মুখ্যমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে নানা রকম প্রশাসনিক ‘ব্যস্ততা’র পাশাপাশি, শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তৎপরতাও। রবিবারই মনোজ মাহাতো-সহ চার জনের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে সংবাদমাধ্যমে লিখিত বিবৃতি পাঠিয়েছে জনগণের কমিটি। ভোটের আগে জামিনে মুক্ত, কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক মনোজ মাহাতোকে গত ১ জুলাই ফের গ্রেফতার করা হয়। পুরনো অপহরণের মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে গ্রেফতার করার পরে মনোজকে ফের খুনের মামলায় অভিযুক্ত করে দু’দফায় পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়। দিন সাতেক আগে মাওবাদী স্কোয়াড সদস্য সন্দেহে ঝাড়গ্রামের সাপধরা অঞ্চলের কমিটির তিন সদস্য যজ্ঞেশ্বর মুর্মু, অর্জুন পাতর ও পীযূষ খিলাড়িকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কমিটির মুখপাত্র জয়দেব মাহাতোর ‘হুঁশিয়ারি’, নতুন সরকার ধৃত ওই চার জনকে অবিলম্বে মুক্তি না দিলে তাঁরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন।
জয়দেববাবুর দাবি, “ভোটের আগে তৃণমূলের সন্ত্রাস-বিরোধী মঞ্চের সভায় যজ্ঞেশ্বর-অর্জুন-পীযূষের মতো কমিটির নেতারাই লোক জড়ো করেছেন। অথচ এখন তাঁদের রাষ্ট্রদ্রোহী সাজানো হচ্ছে।” পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি ওই কমিটি নেতার বার্তা, “এক দিকে শান্তি স্থাপনের আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে, অন্য দিকে ধরপাকড়ের পুরনো ধারা বজায় রয়েছে। এই ঘটনা জঙ্গলমহলের জনগণকে কী বার্তা দিচ্ছে? পুরো বিষয়টি আমাদের কাছে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে উঠছে।”
পক্ষান্তরে যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, “বাম-জমানায় জঙ্গলমহলের অত্যাচারিত-বঞ্চিত মানুষই ‘সন্ত্রাস-বিরোধী মঞ্চের’ সভায় উপস্থিত হয়ে মাঠ ভরিয়েছেন। যাঁরা এখন কৃতিত্ব দাবি করছেন, তাঁরা বিধানসভা নির্বাচনে ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী সুকুমার হাঁসদাকে হারানোর জন্য ছত্রধর মাহাতোকে প্রার্থী করেছিলেন। কিন্তু জনসমর্থন তাঁদের বিপক্ষে গিয়েছে।” কমিটি বা মাওবাদীদের নাম না করে শুভেন্দুবাবুর ‘কটাক্ষ’, “যাঁরা জঙ্গলমহলে বাইরে থেকে বন্দুক এনে সন্ত্রাস তৈরি করতে চাইছেন, তাঁরা জেনে রাখুন, উন্নয়ন দিয়েই সমস্যার সমাধান হবে।” |
|
|
|
|
|