|
|
|
|
দলকে ‘ধাক্কা’ দিতে পৃথক পথে রেজ্জাক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
দলের চাপে ‘সংযত’ হওয়া দূরে থাক, তাঁর নিজের মতো চলার পথে আরও এক ধাপ এগোলেন আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা। বর্গাদার, পাট্টাদারদের উচ্ছেদের প্রতিবাদে নিজের জেলায় প্রাক্তন নকশাল নেতা এবং নকশালপন্থী কিছু সংগঠনকে নিয়ে মিছিল করলেন প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রী তথা সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য। রেজ্জাক সাফ জানাচ্ছেন, নির্বাচনে পরের পর বিপর্যয়ের পরে দলে ‘একটা ঝিমুনি ভাব’ এসেছে! তাই দলকে ‘ধাক্কা’ দিতে চান তিনি।
দলের ঝান্ডা সরিয়ে নানা সংগঠনকে নিয়ে রবিবার ভাঙড় এলাকা থেকে বানতলার কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানা পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার পদযাত্রা হয় রেজ্জাকের নেতৃত্বে। সিপিএমের মতো শৃঙ্খলাপরায়ণ দলে এমন কর্মসূচি সচরাচর কোনও নেতার ব্যক্তিগত উদ্যোগে হয় না। তিনি দলের ‘সমান্তরাল কর্মসূচি’ নিতে শুরু করেছেন বলে অবশ্য মানতে চাননি রেজ্জাক। তবে বুঝিয়ে দিতে ছাড়েননি যে, দলকে চাঙ্গা করতে তিনি তাঁর পথেই চলবেন! শনিবারই তিনি বলেছিলেন, তাঁর মুখে ‘লাগাম’ পরিয়ে কোনও লাভ নেই। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রেজ্জাকের কর্মসূচি এবং ঘোষণা সিপিএমের অন্দরে এই কৃষক নেতাকে নিয়ে বিতর্ক আরও ঘনীভূত করল। রাজ্য কমিটিতে রেজ্জাককে নিয়ে ফের প্রশ্ন ওঠা অবধারিত বলে সিপিএমের একাংশের অভিমত।
রেজ্জাকের মিছিলে এ দিন প্রাক্তন নকশাল নেতা অসীম চট্টোপাধ্যায়, অধুনা ভারতের সাম্যবাদী দলের নেত্রী বর্ণালী মুখোপাধ্যায় প্রমুখ ছিলেন। নকশালপন্থী বলেই পরিচিত আর একটি সংগঠনের উল্লেখযোগ্য নেতা সন্তোষ রানা নিজে যেতে না-পারলেও চিঠি পাঠিয়েছিলেন, যা পড়ে দেন রেজ্জাকই। এ বার থেকে তিনি কি দলের সমান্তরাল কর্মসূচি নিতে শুরু করলেন? মিছিলের পরে কলকাতায় একটি সংগঠনের বৈঠকে যোগ দিতে এসে রেজ্জাক বলেন, “সমান্তরাল কেন হবে? আন্দোলন ছাড়া বাঁচব কী করে? আন্দোলন দিয়ে জন্মেছি, আন্দোলনেই মরব!” কিন্তু তাঁর একার আন্দোলনে কী হবে? বাকি নেতারা কেন তাঁর সঙ্গে নামছেন না? রেজ্জাক বলেন, “কে নামছে, না নামছে, তার অপেক্ষা করে থাকলে তো চলবে না! আমাদের কর্মীর সংখ্যা কমছে, সমর্থক বাড়ছে। যত দিন যাবে, আরও সমর্থক বাড়বে। কর্মীরা একটু মনোবলহীন হয়ে পড়েছে। একটা ঝিমুনি ভাব এসেছে! তার জন্য ধাক্কা (‘জার্ক’) দিতে হবে!” দলকে ঝাঁকুনির পথ বলতে রেজ্জাক বোঝাতে চেয়েছেন, “এখন মিটিং-মিছিল করছি। এর পর জেলে যাব! থানায় ঢুকে পড়ব! এই ভাবেই চলতে হবে।” অর্থাৎ জঙ্গি আন্দোলনের ইঙ্গিত দিয়েছেন ক্যানিং পূর্বের সিপিএম বিধায়ক।
বর্গাদার, পাট্টাদার, দখলদার (খাসযোগ্য বিভিন্ন জমি সরকার খাস না-করায় যাঁরা সেখানে বহু বছর ধরে চাষ করছেন) উচ্ছেদের প্রতিবাদে এবং গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে রেজ্জাকের এ দিনের মিছিলে ঝান্ডা ছাড়া ‘সর্ব স্তরের মানুষ’কে যোগ দেওয়ার ডাক দেওয়া হয়েছিল। এই প্রতিবাদ আন্দোলন সিপিএম বা বামফ্রন্টের পতাকা নিয়ে হল না কেন? রেজ্জাকের ব্যাখ্যা, “আমি ঝান্ডা রাখলে এই লোকগুলো আসবে কেন? তাদের আলাদা সামাজিক প্রতিষ্ঠা আছে, নিজেদের সংগঠন আছে। যত মানুষ আমাদের পক্ষে আছে, তাদের সকলকে সঙ্গে চাই।” তাঁদের আন্দোলনের স্লোগান হয়েছে ‘জীবন, জমি, জীবিকা বাঁচাও’। বিরোধী নেত্রী থাকার সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যা মন্ত্র ছিল, বিরোধী শিবির এবং দলের মধ্যেও ‘বিরোধী’ ভূমিকায় যাওয়ার পরে তারই প্রতিধ্বনি রেজ্জাকের গলায়! |
|
|
|
|
|