যাত্রী নিরাপত্তা
বাসে কমিশন প্রথা তুলে দিতে চায় সরকার
থ দুর্ঘটনা এড়াতে বাসচালক-কন্ডাক্টরদের কমিশন প্রথা তুলে দেওয়ার পক্ষপাতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
বাসে টিকিট বিক্রি বেশি হলে চালক, কন্ডাক্টর থেকে শুরু করে খালাসিদের কমিশন বাবদ আয়ও বেশি হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেসরকারি বাসের চালক, কন্ডাক্টর, খালাসিদের আলাদা করে বেতন দেওয়া হয় না। কমিশনই তাদের আয়। ফলে টিকিট বিক্রি বাড়াতে বাসে বেশি যাত্রী তোলার প্রবণতা থেকেই বাসে-বাসে রেষারেষি হয়। কে কত যাত্রী আগে তুলতে পারবে, তার তাগিদেই অনেক চালক তাড়াহুড়ো করেন। তাতে দুর্ঘটনাও ঘটে। সরকারি সূত্রের খবর, দুর্ঘটনা রোধেই বাসে কমিশন প্রথা তুলে দেওয়ার জন্য পরিবহণ মন্ত্রী সুব্রত বক্সীকে ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। যাত্রী নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু ভাবে রাস্তায় বাস চালানোর বিষয়ে মালিকদের দুই সংগঠনের প্রতিনিধিরাই সরকারের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী। বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট দীপক সরকার রবিবার স্পষ্টই বলেন, “সার্বিক উন্নয়নের জন্য সরকারকে সমস্ত রকম সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত। একটা সামাজিক সমস্যার অবসান করতে সরকার যদি চেষ্টা করে, তা হলে আমাদের তার বাইরে থাকার তো কোনও প্রশ্নই নেই! কিন্তু এটার জন্য যেমন সরকারের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী, তেমনই বাস বাড়া বৃদ্ধির দাবি নিয়ে সমস্যা মেটাতে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাই।” জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক সাধন দাসও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী কমিশন তোলার নির্দেশ দিলে আমরাও বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে পারি।”
বাস মালিকেরাই জানিয়েছেন, মোট বাসভাড়া যা হয়, তার ১২% কমিশন চালকদের প্রাপ্য। কন্ডাক্টরদের প্রাপ্য হয় ৬% করে এবং খালাসিদের ক্ষেত্রে কমিশন দেওয়া হয় দেড় থেকে দুই শতাংশ। শুধু কমিশন প্রথা তুলে দিলেই যে পথ দুর্ঘটনা কমবে, তা অবশ্য মনে করেন না অধিকাংশ বাস মালিকই। তাঁদের অনেকেই জানিয়েছেন, পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের আমলেও কমিশন প্রথা তুলে দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছিল সংশ্লিষ্ট একটি কমিটি। কিন্তু নানা কারণে তা কার্যকর হয়নি। দীপকবাবু জানিয়েছেন, বামফ্রন্ট আমলে বিভিন্ন সরকারি পরিবহন সংস্থার বাসেও কমিশন প্রথা চালু হয়েছে। তাঁর দাবি, “তুললে সরকারি-বেসরকারি দু’ক্ষেত্রেই কমিশন তুলে দিতে হবে।” পরিবহন মন্ত্রী সুব্রতবাবু এই ব্যাপারে মন্তব্য করেননি। বিষয়টি নিয়ে মালিক-কর্মী সংগঠনের সঙ্গে সরকারের শীঘ্রই আলোচনার সম্ভাবনা আছে।
পরিবহণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত তৃণমূলের এক বিধায়ক মনে করেন, “কমিশন প্রথা তুলে দেওয়ার পাশাপাশি চালকদের জোরে গাড়ি চালানো বন্ধে পুলিশের কড়া জরিমানা করা উচিত। সেই জরিমানার টাকা চালককেই দিতে হবে, এমন ব্যবস্থা কায়েম করা দরকার। কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে কর্মী সংগঠনের চাপে মালিকদেরই জরিমানা মেটাতে হয়।” কিছু বাস মালিকের অভিযোগ, ট্রাফিক আইন না-মেনে বেপরোয়া বাস চালানোর জন্য পুলিশ ৮০০ টাকা জরিমানা করে। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটু নেতারা সেই জরিমানার টাকা মালিককে দেওয়ার জন্য চাপ দিতেন। সরকার পরিবর্তনের পরে এখন তৃণমূলের নেতারাও তা-ই করছেন। বাস মালিকদের বক্তব্য, “যে দোষ করছে, সে যদি শাস্তি না-পায়, তবে অপরাধ বন্ধ হবে কী ভাবে!” তাঁদের মতে, শাস্তির জরিমানা চালকদেরই মেটাতে হলে দুর্ঘটনার হার অন্তত ৫০% কমে যাবে। পথ দুর্ঘটনা এড়াতে রাস্তাঘাটের হাল ফেরানোর উপরেও মালিক-কর্মীরা গুরুত্ব দিয়েছেন। কারণ ভাঙাচোরা, গর্তে ভরা রাস্তাও দুর্ঘটনার কারণ হয় বলে মালিক থেকে শুরু করে কর্মীদের বক্তব্য। মুখ্যমন্ত্রীও রাস্তাঘাটের হাল ফেরানো দরকার বলেই মনে করেন। রাস্তাঘাট মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজের অনেকটাই দায়িত্ব রয়েছে পূর্ত দফতরের। রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি ভবন থেকে শুরু করে হাসপাতাল, থানা, সেতু সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণও করতে হয় পূর্ত দফতরকেই। এই সমস্ত কাজ ‘ভাল ভাবে করা’র লক্ষ্যেই মুখ্যমন্ত্রী পূর্ত দফতরের কাজের ‘বিকেন্দ্রীকরণ’ চান। পরিবহণ মন্ত্রী তথা পূর্তমন্ত্রী সুব্রতবাবু, দফতরের প্রতিমন্ত্রী সুব্রত সাহা, পূর্তসচিব অজিত বর্ধন, দফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়ে সম্প্রতি বৈঠকও করেছেন। পূর্ত দফতরেরই একটি সূত্রের খবর, রাস্তা থেকে শুরু করে হাসপাতাল বা থানা ভবনের সংস্কারের কাজ এক এক জন অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের দায়িত্বে ছাড়ার প্রস্তাব উঠেছে বৈঠকে। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যেই সেই কাজ শুরুর তোড়জোড় চলছে দফতরে।
Previous Story Rajya Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.