|
|
|
|
মান্না, সন্ধ্যা-সহ আট বিশিষ্টকে ‘বঙ্গশ্রী’ মমতার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে রাজ্যের প্রধান বিরোধী নেত্রী থাকাকালীনই প্রবেশ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বে যার সূচনা হয়েছিল, সেই বৃত্ত সম্পূর্ণ হতে চলেছে মমতার মহাকরণ-প্রবেশের পরে। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন উত্তমকুমার-সহ বিভিন্ন বঙ্গজ ‘আইকন’-এর নামে স্টেশনের নামকরণ করে বাঙালির আবেগের নাড়িতে হাত রেখেছিলেন মমতা। রাজ্যে ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে সেই যোগাযোগ আরও দৃঢ় করতে চলেছেন তিনি।
মান্না দে থেকে অমলাশঙ্কর আট জন বর্ষীয়ান এবং প্রবীণ বিদ্বজ্জনকে ‘বঙ্গশ্রী’ সম্মানে ভূষিত করছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা, যিনি একই সঙ্গে তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রকেরও দায়িত্বে, ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামী ২৫ জুলাই সায়েন্স সিটিতে অনুষ্ঠানটি হবে। বলাই বাহুল্য, সেখানে উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং।
সম্মানপ্রাপকদের তালিকায় আরও যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা হলেন: প্রবীণ গায়িকা গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, অভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবী, অভিনেতা হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়, গায়ক দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, প্রবীণ লেখিকা মহাশ্বেতা দেবী। অষ্টম ব্যক্তিত্বের নাম এখনও চূড়ান্ত হয়নি। |
|
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “এঁরা প্রত্যেকে বাংলা তো বটেই, বাংলার বাইরে গোটা দেশে এবং দুনিয়ায় এ রাজ্যের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। কিন্তু কখনও সরকারের তরফে তাঁদের যোগ্য সম্মান দেওয়া হয়নি। সেই জন্যই এই মা-মাটি-মানুষের সরকার ওঁদের সম্মান জানানোয় উদ্যোগী হচ্ছে।”
মুখ্যমন্ত্রীর আরও বক্তব্য, “এঁরা প্রত্যেকেই বর্ষীয়ান। আমরা চাই যত শীঘ্র সম্ভব তাঁদের সরকারের তরফে সম্মানিত করতে।” তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর সূত্রের খবর, দফতরের তরফে ইতিমধ্যে সচিব পর্যায়ে আবেদন জানানো হয়েছে ওই বিশিষ্টজনেদের। মমতা নিজেও কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলেছেন। মান্না দে ছাড়া সকলেই এ শহরের বাসিন্দা। তাঁরা প্রত্যেকে প্রাথমিক ভাবে সম্মতি জানিয়েছেন। কিংবদন্তী গায়ক জানিয়েছেন, শরীর অনুমতি দিলে তিনি নিশ্চয়ই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজে মান্নার উপস্থিতি নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী।
বস্তুত মমতা চেয়েছিলেন, অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনকেও সংবর্ধনা দিতে। পরে তিনি নিজেই পরিস্থিতি বিচারে পিছিয়ে যান। রাজ্য প্রশাসনের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছে ছিল সুচিত্রা সেনকেও সংবর্ধনা দেওয়ার। কিন্তু উনি তো প্রকাশ্যে আসেন না! ফলে ওঁকে বিরক্ত করার কোনও মানে হয় না।”
তবে এই সরকারি তালিকায় ঘোষিত ‘বুদ্ধ-ঘনিষ্ঠ’ অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম এখনও পর্যন্ত নেই। যা থেকে সরকারি ওই খেতাব নিয়ে বিতর্কের একটা অবকাশ থেকেই যাচ্ছে। মমতা নিজে কোনও ভাবেই সংস্কৃতির অঙ্গনে ‘আমরা-ওরা’য় বিশ্বাসী নন। বিভিন্ন ‘ঘোষিত’ বামপন্থী বিশিষ্টদের সঙ্গে নিয়েও তিনি চলছেন। সেই কারণেই সৌমিত্র-সুনীলের নামও তালিকায় থাকা উচিত ছিল বলে রাজ্যের বিশিষ্টদের একাংশের অভিমত।
তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর সূত্রের অবশ্য খবর, প্রথম দফায় আট জন বিশিষ্টকে ‘বঙ্গশ্রী’ খেতাবে ভূষিত করা হলেও পরে বিভিন্ন পর্যায়ে বাংলার সংস্কৃতি জগতের অন্যান্য নামী ব্যক্তিত্বকে ওই সম্মান দেওয়া হবে। তাঁদের মধ্যে থাকবেন সিনেমার অভিনেতা-অভিনেত্রী থেকে শুরু করে চিত্রকর, উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পীরা। সেই সময়ে সৌমিত্র-সুনীল বা মৃণাল সেনের মতো ব্যক্তিত্বের নামও বিবেচনার সুযোগ থাকছে।
রেলমন্ত্রী থাকাকালীনই বাংলার সংস্কৃতি জগতের বিশিষ্টদের সম্মান-সংবর্ধনা দেওয়া শুরু করেছিলেন মমতা। বিভিন্ন বর্ষীয়ান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে তিনি রেলের তরফে ‘লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ দিয়েছেন। কলকাতা পুরসভায় তৃণমূল একচ্ছত্র ক্ষমতাদখলের পরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ রাজ্যের কৃতী মানুষদের সংবর্ধনাও মমতা চালু করেছিলেন। কিন্তু সরকারে আসার পরে আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁর তরফে এই ধরনের উদ্যোগ এই প্রথম। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “প্রবীণ বিশিষ্টজনেদের সম্মান দেওয়ার কাজ এর আগের সরকার করেনি। সেই কাজটাই আমরা শুরু করতে চাইছি। এর মধ্যে কোনও রাজনীতি নেই।” |
|
|
|
|
|