আপনি কি ওর ওপর বেশি রাগ করতেন?
আমার বড় মেয়ে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। পড়াশোনায় মোটামুটি ভাল। কিন্তু স্বভাবে একেবারে উল্টো। প্রচণ্ড রাগী ও জেদি। জিনিসপত্র ভেঙে ফেলে রাগ হলে। এই স্বভাব কিছুটা আমার মধ্যেও আছে। ছোট বোনকে একেবারে পছন্দ করে না। ওকে মারধোর, বকাবকি করেছি, তবুও কোনও ফল হয়নি। খুব খেতে ভালবাসে। রান্না করতে ভালবাসে। ভীষণ কুঁড়ে, নোংরাও। প্রচণ্ড মোটা, এখনই ওজন ৭০ কিলো। আমার সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করে। অনেক রাত পর্যন্ত মোবাইলে গান শোনে। এর মধ্যে এক দিন রেগে গিয়ে আমি মোবাইল কেড়ে নিয়েছিলাম বলে তিনটে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ফেলেছিল। আমাদের সঙ্গে কোথাও যাওয়ার আগে কোনও না কোনও বিষয় নিয়ে অশান্তি করবেই। আমরা খুব সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার। আমি বাচ্চাদের নিয়ে বাপের বাড়িতে থাকি। চাকুরিসূত্রে আমার স্বামী শিলিগুড়িতে থাকেন, আসেন প্রতি মাসে। সব সময় দামি জামাকাপড় চায়, যা আমাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয় না। না দিলে খুব কড়া কড়া কথা শোনাতে ছাড়ে না আমাদের। আমার বাবা বয়স্ক মানুষ। তাঁকেও মাঝেমধ্যেই অসম্মান করে। টাকার দরকার হলে তা কিন্তু জোর করে চেয়ে নেয়। শরীরের প্রতি কোনও যত্ন নেয় না। ওর জন্য ছোট মেয়েটাও খারাপ হতে শুরু করেছে। ওকে কী করে আবার স্বাভাবিক করে তুলব?
ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য
মা-কে বলছি
আপনার মেয়ের যে সমস্যাগুলোর কথা আপনি লিখেছেন, সেগুলো সবই ‘ইমোশনাল ডিসঅর্ডার’-এর লক্ষণ। এই ধরনের মানসিক সমস্যার প্রধান লক্ষণই হল অত্যন্ত বদরাগী মেজাজ, বিভিন্ন ধরনের আচরণগত সমস্যা, খুব সামান্য কথাতেই মেজাজ হারানো, আত্মহত্যার প্রবণতা, নিজের প্রতি অত্যন্ত অমনোযোগী থাকা প্রভৃতি। সুতরাং, আপনাকে প্রথমেই এটা বুঝতে হবে যে, ওর একটা মানসিক সমস্যা রয়েছে।
সাধারণত ইমোশনাল ডিসঅর্ডারের ক্ষেত্রে সমস্যাটা এক দিনে তৈরি হয় না। অনেক দিন ধরে একটি শিশু যদি তার চার পাশের পরিবেশে এই ধরনের অত্যন্ত রাগী ব্যবহারের সম্মুখীন হয়, তা হলে সেই শিশুর মধ্যে ধীরে ধীরে এই ধরনের বদ অভ্যাসগুলি ঢুকতে থাকে। আর এক দিন তারই চরম রূপ প্রকাশিত হয় শিশুটির ব্যবহারে। এ ছাড়া, শিশুটির বাবা-মা’র চরিত্রে যদি এই ধরনের বৈশিষ্ট্য থাকে, তা হলে জিনগত দিক থেকে শিশুটি এ ধরনের চরিত্রের অধিকারী হতে পারে। আপনি নিজেই লিখেছেন যে, আপনারও রাগের বহিঃপ্রকাশ একই রকম। ওর ছোটবেলায় যে সময় আপনার ওর সঙ্গে ধৈর্যের সঙ্গে ব্যবহার করা উচিত ছিল, তা হয়তো আপনি করেননি। ওর ওপর রাগ দেখিয়েছেন। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এখন তারই প্রতিফলন আপনার মেয়ের ব্যবহারে ফুটে উঠছে।
চিঠিতে যে পরিস্থিতির কথা আপনি লিখেছেন, তার মধ্যে আর একটা দিকও আপনার মেয়ের এই ধরনের আচরণের কারণ হতে পারে, সেটি হল, ওর বাবার স্থায়ী ভাবে আপনাদের সঙ্গে না-থাকা। শিশুরা সব সময়ই মা এবং বাবা, দু’জনের সাহচর্যে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। কোনও কারণে এক জনের অনুপস্থিতি বাচ্চাদের মনে এক ধরনের অনিশ্চয়তার ভয় তৈরি করে। আর সে কারণেই তার আচরণগত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। একই সঙ্গে আপনাকে দু’টি সন্তানের দায়িত্ব একা সামলাতে হওয়ায় আপনিও হয়তো সব সময়ই একটা টেনশনে থাকেন। আর তার ফলে যতখানি ধৈর্য আপনার সন্তানদের ক্ষেত্রে দেখানোর কথা, তা দেখাতে পারেন না।
তবে, এই ধরনের সমস্যা অনেকের ক্ষেত্রেই হয়, আবার তার থেকে বেরিয়েও আসা যায়। আপনাকে প্রথমেই যেটা করতে হবে, সেটা হল, মেয়ের সঙ্গে সব সময় তার আচরণের ত্রুটি নিয়ে কথা না বলে, সাধারণ কোনও বিষয় নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করা। যে সব বিষয়ে ওর কৌতূহল আছে, সেগুলো নিয়ে কথা বলুন; যদি রান্না করতে ভালবাসে, তাতে উৎসাহ দিন; ও যে এখন বড় হয়েছে, সেটা বোঝানোর জন্য ওকে কিছুটা দায়িত্ব দিন; ছোট বোনের পড়াটা ওকেই দেখতে বলুন।
যদি নিজে সে ভাবে মেয়ের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলতে না পারেন, তা হলে কোনও আত্মীয় বা বন্ধু যার সঙ্গে ও প্রাণ খুলে কথা বলতে পারবে, তাকে দিয়ে জানার চেষ্টা করুন ওর ঠিক কী কী জায়গায় অসুবিধে হচ্ছে। সেটা যদি ওর বাবার সঙ্গে আলোচনা করতে পারে, তা হলে ওর সমস্যার সমাধান করা আপনাদের পক্ষেও সুবিধে হবে। শুধু একটু ধৈর্য ধরে, নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণে রেখে মেয়ের সঙ্গে স্বাভাবিক ব্যবহার করুন। ও যে নিজের যত্ন নেয় না, পরিচ্ছন্ন থাকে না, এটা ওর এক ধরনের ক্ষোভ-দুঃখ-যন্ত্রণারই বহিঃপ্রকাশ। আপনাকে এর কারণটা জানতে হবে ওর সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশে। প্রয়োজন হলে মনোবিদের সাহায্য নিন। হতাশ হবেন না। অনেকেই এ ধরনের সমস্যায় ভোগেন, আবার তার থেকে বেরিয়েও আসেন। শুধু ধৈর্য ধরে ওর মানসিক সমস্যার কারণগুলোকে বের করে তার সমাধান করতে হবে।
তোমাকে বলছি
তোমার মন ভাল নেই বলেই হয়তো তুমি সারাক্ষণ রেগে থাকছ। কিন্তু তোমার মনের ভেতরের কথা তো বাইরের কেউ বুঝবে না। সুতরাং, তোমার রাগ, ক্ষোভ বা হতাশার কারণটা ঠিক কী, সেটা কাউকে বলতে হবে। যদি তোমার মনে হয় যে সেটা বাবা-মা’কে বলতে পারবে না, তা হলে এমন কাউকে বলো, যাকে তুমি বিশ্বাস করো সে তোমার আত্মীয় বা বন্ধু, যেই হোন।
তুমি এখন বড় হয়েছ। পড়াশোনাটা যেমন তুমি মন দিয়ে করছ, তার সঙ্গে কিছু অন্য দায়িত্বও তো তোমাকে নিতে হবে। তোমার বাবা এখানে থাকেন না; সুতরাং তোমার মা’কে সব কিছুই একা সামলাতে হয়। তোমার ছোট বোনের পড়াশোনার দায়িত্বটা তুমি নিতেই পারো। মায়ের একটা দায়িত্ব নিলে মা’কে খানিকটা সাহায্য করাও হবে। আর মেয়েরা বড় হয়ে গেলে তো মায়ের বন্ধুও বটে। মায়ের সঙ্গে খানিকটা সময় কাটাও। দেখবে তাঁরও তোমাকে হয়তো অনেক কথাই বলার আছে, কিন্তু বলতে পারেন না। এ ভাবেই তুমি তোমার ক্ষোভ-হতাশা থেকে বেরোতে পারবে। জীবনে আনন্দও খুঁজে পাবে।
ছেলেমেয়েকে নিয়ে মা-বাবার সমস্যা? নাকি মা-বাবাকে নিয়ে ছেলেমেয়ের সমস্যা? পড়ার খরচ
নিয়ে অভিভাবকের দুশ্চিন্তা? দূরের শহরে পড়তে যাওয়ার নামে মেয়ের গায়ে জ্বর আসা? যে
মুশকিলই হোক না কেন, পরিবারের সবাই মিলেই সমাধানে পৌঁছতে হবে। এ বার থেকে
‘প্রস্তুতি’-ও কথা বলবে গোটা পরিবারের সঙ্গেই। অভিভাবকদের বা সন্তানের যে কোনও দুশ্চিন্তার
কথা আমাদের জানান (এবং জানাও) নিজেদের সমস্যা। সুচিন্তিত উত্তর দেবেন বিশেষজ্ঞরা।

ইমেল: prastuti@abp.in বিষয়: Haate Haat।

অথবা, চিঠি পাঠান (এবং পাঠাও) এই ঠিকানায়:
হাতে হাত, প্রস্তুতি,
Previous Item Prostuti Next Item


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.