পুনর্বাসনের প্রশ্নে হাবরায় থমকে গেল রেলের সাইডিং প্রকল্প
ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত না হওয়ায় উত্তর ২৪ পরগনার হাবরায় রেলের প্রস্তাবিত সাইডিং প্রকল্পের বিষয়টি অনিশ্চিত হয়েই থাকল।
রেলমন্ত্রী হওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তর ২৪ পরগনার হাবরায় রেলের একটি সাইডিং (মালগাড়ি থেকে মাল ওঠানো-নামানার ব্যবস্থা) করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, হাবরা একটি কৃষিপ্রধান এলাকা। এখানে রেলের সাইডিং হলে এই এলাকার চাষিরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্য অনায়াসে এবং কম খরচে রাজ্য-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠাতে পারবেন। প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। যেখানে কাজ পাবেন স্থানীয় মানুষ। তা ছাড়া সাইডিং নিয়ে এলাকার মানুষেরও দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। তারই প্রক্ষিতে হাবরা স্টেশনের দু’ধারে রেলের জমিতে যে সব উদ্বাস্তু পরিবার বাস করেন তাঁদের মধ্যে ৮৪ টি পরিবারকে সরানোর কথা হয়। অবশ্যই উপযুক্ত পুনর্বাসনের মাধ্যমে। এ নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশও ছিল।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত হয়, ওই পরিবারগুলিকে অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পি এল ক্যাম্পের কাছে উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতরের যে জায়গা রয়েছে সেখানেই পুনর্বাসন দেওয়া হবে। কারণ, তৃণমূলের ঘোষিত নীতিই ছিল কোনও প্রকল্পের জন্যই কাউকে উচ্ছেদ করা হবে না। বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই এই সাইডিংয়ের ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু জেলা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমে পড়েন ওই এলাকার মানুষ। তৈরি হয় ‘ভূমি রক্ষা কমিটি’। স্থানীয় তৃণমূলের একাংশও এর বিরুদ্ধে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা এবং কমিটির বক্তব্য, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের যে জায়গায় পুনর্বাসন দেওয়ার কথা হয়েছে, সেই জায়গাটি আসলে খেলার মাঠ। স্থানীয় ছেলেমেয়েরা সেখানে খেলাধুলা করে। বয়স্ক মানুষরা সকাল বিকেল সেখানে হাঁটেন। তা ছাড়া সেখানে একটি মন্দিরও রয়েছে। নিয়মিত পুজাপাঠ হয়। মেলাও বসে। তাই এই জায়গায় পুনর্বাসন দিলে এলাকার সবুজ নষ্টের পাশপাশি পরিবেশও নষ্ট হবে। আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়ান অশোকনগরের তদানীন্তন সিপিএম বিধায়ক সত্যসেবী কর। ইতিমধ্যে রাজ্যে ক্ষমতার হাতবদল হয়েছে। গত জুন মাসে এ নিয়ে জেলাশাসকের দফতরে সব রাজনৈতিক দল এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে এক বৈঠকও হয়। কিন্তু কোনও সমাধান সূত্রই মেলেনি। এর পরে রবিবার, ১০ জুলাই ফের সব পক্ষকে নিয়ে অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভায় বৈঠক হয়। বৈঠকে ছিলেন জেলাশাসক বিনোদকুমার, বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার, হাবরার বিধায়ক ও খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, হাবরা ও অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার চেয়ারম্যান, অশোকনগরের প্রাক্তন বিধায়ক সত্যসেবী কর, ভূমি রক্ষা কমিটির দুই আহ্বায়ক প্রমুখ। কিন্তু সেখানেও মিলল না কোনও সমাধান সূত্র।
জেলাশাসক বিনোদকুমার অবশ্য বলেন, “ওই উদ্বাস্তু পরিবারগুলিকে হাইকোর্টের নির্দেশ মতো পুনর্বাসন দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে পরিকল্পনাও হচ্ছে।” ভূমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক বিপ্লব দে বলেন, “ওই ওয়ার্ডে আগেই একটি কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের জন্য জমি ৫০ একর জমি দেওয়া হয়েছে। তিনটি উদ্বাস্তুদের বস্তিও রয়েছে। এর পরে ওই মাঠও নিয়ে নেওয়া হলে এলাকার মানুষের আর নিশ্বাস নেওয়ার জায়গা থাকবে না।” সত্যসেবীবাবু বলেন, “আমরা চাই হাবরায় রেলের সাইডিং হোক। কিন্তু ওই উদ্বাস্তুদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে পুনর্বাসন না দিয়ে হাবরা ও অশোকনগরেই অন্যত্র পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুক প্রশাসন।” বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “এক বছরের মধ্যে প্রকল্প না হলে বরাদ্দ ২৪ কোটি টাকাই ফেরত চলে যাবে। ব্যাহত হবে এলাকার উন্নয়ন।”
সাংসদ কাকলিদেবীর কথায়, “সরকারি খাতায় ওই এলাকায় ১২ বিঘা জমি রয়েছে। পুনর্বাসনের জন্য লাগবে মাত্র ৫ বিঘা জমি। বাকি জমির বেশিরভাগই চলে গিয়েছে প্রোমোটারদের দখলে। শীঘ্রই ওই জমি মাপজোক করে বাকি জমিতে সুইমিং অ্যাকাডেমি তৈরি করা হবে।” তিনি আরও জনান, হাইকোর্ট একটি মামলার রায়ে ওই জমিতেই পুনর্বাসন দেওয়ার নিদের্শ দিয়েছে। তাঁরাও ওই জমিতেই পুনর্বাসন দেওয়ার পক্ষে। এই অবস্থায় ওই জমিতে পুনর্বাসনের সিদ্ধান্তই যথাযথ।
Previous Story South Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.