|
|
|
|
তৃণমূলের ‘হুমকি’র জের, পঞ্চায়েত স্তরে স্তব্ধ উন্নয়ন |
অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য • শাসন |
চলছে লাগাতার হুমকি। ‘ভয়ে’ই কাজে আসতে পারছেন না সভাপতি, প্রধানেরা। কেউ-কেউ বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত ২ পঞ্চায়েত সমিতি ও শাসন-সহ তিনটি পঞ্চায়েতের কাজকর্ম শিকেয় উঠেছে। একের পর এক প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ায় বঞ্চিত হচ্ছেন ওই এলাকার সাধারণ মানুষ। অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। তাদের বক্তব্য, ‘অভয়’ দেওয়া সত্ত্বেও নিজেরাই কাজে আসছেন না সিপিএমের ওই সভাপতি, প্রধানেরা।
শাসনে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ইতিহাস দীর্ঘ। বিধানসভা ভোটের আগে ‘মজিদ মাস্টার’-সহ সিপিএম এবং তৃণমূলেরও একাধিক প্রথম সারির নেতাকে পুলিশ গ্রেফতার করায় সাময়িক ভাবে হলেও শান্তি ফিরেছিল শাসনে। ভোটের পরে সংঘর্ষের নতুন ঘটনা না ঘটলেও চাপা উত্তেজনা আছেই। রাজ্য রাজনীতির ভারসাম্য বদলের ফলে এক সময়ে যে অভিযোগ উঠত সিপিএমের বিরুদ্ধে এখন সেই অভিযোগই উঠছে তৃণমূল শিবিরের দিকে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সিপিএম পরিচালিত বারাসত ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মাস চারেক আগে ‘হুমকি’র জেরে দফতরে আসা বন্ধ করেছেন। তারপরে কাজ চালাচ্ছিলেন সহকারী সভাপতি। অভিযোগ, হুমকি দেওয়া হয়েছে তাঁকেও। দিন কয়েক আগে পদত্যাগ করেছেন তিনিও। কার্যত একই পরিস্থিতি ওই ব্লকের সিপিএম পরিচালিত তিনটি পঞ্চায়েতেও।
সিপিএম পরিচালিত উত্তর ২৪ পরগনা জেলাপরিষদের সভাধিপতি ভরত দাস বলেন, “তৃণমূলের লোকেরা এই সব হামলা চালাচ্ছে। এ সব পুলিশ প্রশাসনে জানানো হয়েছে। কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ সব কারণে কাজকর্ম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।” অন্য দিকে, জেলাপরিষদের বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের আব্দুল রউফ মণ্ডল বলেন, “কেউ হুমকি দিচ্ছে না। ওঁরা নিজেরাই কাজে আসছেন না। ফলে কাজকর্ম ব্যহত হচ্ছে। পরিষেবা বলতে কিছুই নেই। আমরা বলেছি, পাহারা দেব। আপনারা কাজে আসুন। তা-ও আসছেন না।”
বারাসত ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রসাদ বিশ্বাস ৪ ফেব্রুয়ারি শেষ কাজে গিয়েছেন। তিনি বলেন, “কী ভাবে কাজে যাব? লাগাতার হুমকি চলছে। সমিতিতে যাওয়ার মতো পরিবেশ-পরিস্থিতি আর নেই।” এরপরে অবশ্য সহকারী সভাপতি শাহানাজ বেগম কোনও মতে সমিতির কাজ সামাল দিচ্ছিলেন। কিন্তু তিনিও বারাসতের মহকুমাশাসকের কাছে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন। শাহানাজ বলেন, “টানা ১৫ দিন ধরে হুমকি আর অত্যাচার হচ্ছে। দু’বেলা ওদের লোকজন বাড়ি আসছে। বক্তব্য, পদত্যাগ করতেই হবে। আমি চেয়েছিলাম কাজ করতে। কিন্তু পদত্যাগ না করলে বিপদ হত।” এই ডামাডোলের মধ্যে ওই পঞ্চায়েত সমিতির বাজেট এখনও পেশ হয়নি। যার অর্থ, সমিতির হিসেব নেই। তাই অনুদান আসবে না। সমস্ত কাজকর্ম আটকে রয়েছে। বারাসত ২ পঞ্চায়েত সমিতি এবং আশপাশের ৭টি পঞ্চায়েতের মধ্যে চারটি ছিল বামেদের দখলে। এর মধ্যে কীর্তিপুর পঞ্চায়েতটি হাতছাড়া হয় বামেদের। বর্তমানে শাসন, দাদপুর ও ফলতি-বেলিয়াঘাটা এই তিনটি পঞ্চায়েত বামেদের দখলে রয়েছে। এর মধ্যে শাসন পঞ্চায়েতের ১৮ জন সদস্যের মধ্যে ১৮ জনই বামেদের। প্রধান বাপি রায়, উপপ্রধান হাজিরা বিবি সহ কোনও সদস্য পঞ্চায়েতে যেতে পারছেন না। কর্মচারীরা কিছু কাজ কোনও মতে সামাল দিলেও থমকে রয়েছে সমস্ত উন্নয়নের কাজ। দাদপুরের পঞ্চায়েতে ১৯ জন সদস্যর মধ্যে ১৫ জন বামেদের এবং ৪ জন তৃণমূলের। পদত্যাগের দাবিতে ওই পঞ্চায়েতের প্রধান জলিল হোসেনের বাড়িতে হামলা হয়। তাঁর চায়ের দোকানটিও ভাঙচুর করা হয়। এরপর থেকে তিনি এলাকা ছাড়া। জলিল বলেন, “দীর্ঘদিন বাড়ি ও পঞ্চায়েতে যেতে না পেরে আমি ১০ জুন পদত্যাগ করি। উপপ্রধানের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছি। এ ছাড়া আর উপায় ছিল না।” ফরওয়ার্ড ব্লকের উপপ্রধান ফতেমা বিবি-সহ অন্য বাম সদস্যেরাও পঞ্চায়েতে যেতে পারছেন না বলে অভিযোগ। ফলে ওই পঞ্চায়েতের সব কাজকর্মও মুখ থুবড়ে পড়েছে। ফলতি বেলিয়াঘাটা পঞ্চায়েতের ১৬ জন সদস্যের মধ্যে ৯ জন বামেদের। ৭ জন তৃণমূল ও কংগ্রেসের। ওই পঞ্চায়েতের প্রধান সুলতা মণ্ডলও দীর্ঘদিন কাজে যেতে পারছেন না। ফলে একই হাল ওই পঞ্চায়েতেরও। এই সব কারণে জেলা পরিষদের মাধ্যমে ওই এলাকায় কিছু রাস্তার কাজ হচ্ছে। কিন্তু একশো দিনের কাজ, ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়ি, আস্থা প্রকল্পের ঘর-সহ একাধিক প্রকল্পের কাজ আটকে গিয়েছে। যার মাসুল দিতে হচ্ছে এলাকার সাধারণ মানুষকে। |
|
|
|
|
|