সর্বস্ব দিয়ে বৃদ্ধ কলেজ গড়তে চান লালগড়ে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
এলাকায় কোনও কলেজ নেই। লালগড়ের দরিদ্র আদিবাসী বাড়ির অনেক ছাত্রছাত্রীই ঝাড়গ্রাম বা মেদিনীপুরে গিয়ে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ নিতে পারেন না। তাই লালগড়ে কলেজ গড়তে নিজের সারা জীবনের সঞ্চয় ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সরকারকে দান করতে চান অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী বিষ্ণুপদ রায়। এই ইচ্ছের কথা জানিয়ে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদার মাধ্যমে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি পাঠিয়েছেন ৭৩ বছরের এই বৃদ্ধ। আজ, সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুরে আসার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। বিষ্ণুপদবাবুর আশা, তাঁর প্রস্তাবে নিশ্চয়ই সাড়া দেবেন মমতা। |
বিষ্ণুপদ রায় |
বর্তমানে ঝাড়গ্রাম শহরে থাকলেও বিষ্ণুপদবাবুর আদি বাড়ি লালগড়ে। তিনি চান, ঝাড়গ্রামের বসতবাড়ি বিক্রির টাকা ও নিজের সঞ্চিত অর্থের (সব মিলিয়ে প্রায় ২৫ লক্ষ) সবটাই কলেজ তৈরির জন্য দান করতে। বিষ্ণুপদবাবুর বাবা অধরচন্দ্র রায় লালগড় রাজ এস্টেটের কর্মচারী ছিলেন। জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের পরে অধরবাবুর চাকরি চলে যায়। লালগড়ে সামান্য যেটুকু কৃষিজমি ছিল তা-ও কংসাবতী নদীর গর্ভে তলিয়ে যায়। পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি বাবা-মা’র সঙ্গে ঝাড়গ্রামে চলে আসেন বিষ্ণুপদবাবু। সেই সময়ে বিষ্ণুপদবাবুর মা রাজবালাদেবী মুড়ি ভেজে বিক্রি করে সংসার চালাতেন। দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করেই ১৯৫৭ সালে ঝাড়গ্রামের ননীবালা বয়েজ স্কুল থেকে স্কুল |
|
ফাইনাল উত্তীর্ণ হন বিষ্ণুপদবাবু। কিন্তু অর্থাভাবে আর পড়াশুনা চালাতে পারেননি। পরবর্তী কালে খাদ্য ও সরবরাহ দফতরে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী হিসেবে চাকরি পান তিনি। ১৯৯৭ সালে জেলা খাদ্য সরবরাহ দফতরের মুখ্য পরিদর্শক পদ থেকে অবসর নেন বিষ্ণুপদবাবু। বর্তমানে তিনি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বিমা-পরামর্শদাতা। বিপত্নীক বিষ্ণুপদবাবুর একমাত্র ছেলে সিদ্ধার্থশঙ্কর এখন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সহকারী-অধ্যাপক। জীবনের চাকা ঘুরলেও অতীত ভোলেননি বিষ্ণুপদবাবু। গত চার দশক ধরে দু’শোরও বেশি দুঃস্থ-মেধাবী পড়ুয়াকে উচ্চশিক্ষার জন্য অর্থ সাহায্য করেছেন। এখন চাইছেন লালগড়ে একটা কলেজ হোক, যার নামকরণ হবে বিষ্ণুপদবাবুর মায়ের নামে। বিষ্ণুপদবাবুর কথায়, “মায়ের স্বপ্ন ছিল আমি কলেজে পড়ব। তা হয়নি। অন্য ছাত্রছাত্রীরা সে সুযোগটুকু পাক।” অন্য অনেক মায়ের স্বপ্নপূরণ করতে আপাতত রাজ্যের জবাবের অপেক্ষায় রয়েছেন বিষ্ণুপদবাবু। |
|