|
|
|
|
নিশানা কারাকর্তারা |
শিল্পমন্ত্রীর পরে স্বরাষ্ট্রসচিব সেজে টাকা চেয়ে ফোন |
শ্যামল মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
প্রতারক সে-বার বলেছিল, ‘শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলছি।’
এ বার প্রতারক বলছে, ‘স্বরাষ্ট্রসচিব জ্ঞানদত্ত গৌতম বলছি।’
পুলিশের সন্দেহ, দু’জন নয়, প্রতারক একই ব্যক্তি।
রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলে নিজের পরিচয় দিয়ে সুতাহাটার বিডিও-কে ফোন করে টাকা দাবি করেছিল এক প্রতারক। আসল ঘটনা জানতে শিল্পমন্ত্রী নিজেই ফোন করে সেই প্রতারকের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তার পরে শিল্পমন্ত্রীর নির্দেশে তদন্তে নামে পুলিশ। কিন্তু প্রতারককে ধরা যায়নি।
ইতিমধ্যে ফের একই ধরনের ফোন পেতে শুরু করেছেন রাজ্যের কারা দফতরের একাধিক কর্তা এবং অফিসার। প্রতারক এ বার রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব জ্ঞানদত্ত গৌতমের নাম করে ‘ভাল পোস্টিং’ পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে টাকা দাবি করছে বলে অভিযোগ এসেছে। কারা দফতর সূত্রের খবর, ওই দফতরের এআইজি, ডিআইজি-র মতো কর্তাদেরও ফোন করেছে প্রতারক। ঝাড়গ্রাম, তমলুক, বিষ্ণুপুর-সহ বিভিন্ন জেলের জেলার ও ডেপুটি জেলারেরাও ওই প্রতারকের ফোন পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। |
পার্থ চট্টোপাধ্যায় |
জ্ঞানদত্ত গৌতম |
|
রাজ্যের আইজি (কারা) কে হরিরাজন বলেন, “পুলিশকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।” পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে বলে কারা দফতর সূত্রের খবর। পুলিশের ধারণা, পার্থবাবু ও জ্ঞানদত্তবাবু দু’জনের নাম করে প্রতারণার জাল বিছিয়েছে একই লোক এবং তার চক্র। পুলিশের এই সন্দেহের কারণ, দু’টি ক্ষেত্রেই পলাশ মণ্ডল নামে এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে টাকা দিতে বলছে ওই প্রতারক।
কারা দফতরের এক অফিসার রবিবার জানান, দিন দুয়েক আগে গভীর রাতে একটি টেলিফোন আসে মেদিনীপুর রেঞ্জের এআইজি (কারা) কল্যাণকুমার প্রামাণিকের কাছে। তাঁর বাবা গুরুতর অসুস্থ। তিনি ছুটিতে আছেন। নকল স্বরাষ্ট্রসচিব তাঁকে রাতে ফোন করে ঝাড়গ্রাম জেলের ডেপুটি জেলারের টেলিফোন নম্বর চান। এআইজি (কারা)-কে ফোনেই বলা হয়, ওই ডেপুটি জেলার ভাল কাজ করছেন। তাঁকে ভাল জায়গায় ‘পোস্টিং’ দিতে হবে। তিনি (কল্যাণবাবু) যেন এখনই মোবাইলে ওই ডেপুটি জেলারকে ফোন করেন। কল্যাণবাবু বলেন, “গুরুতর অসুস্থ বাবাকে নিয়ে আমি বিপদের মধ্যে রয়েছি। এই অবস্থায় ঝাড়গ্রামের ডেপুটি জেলারকে ফোন করে নির্দিষ্ট মোবাইল নম্বরে ফোন করতে বলি।”
তার পরেই ওই ডেপুটি জেলার গণেশচন্দ্র মাইতি সেই নম্বরে ফোন করেন। আইজি (কারা)-র কাছে লিখিত অভিযোগে গণেশবাবু জানান: ‘ফোন করার সঙ্গে সঙ্গেই ওই ব্যক্তি স্বরাষ্ট্রসচিব হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়ে বলে, ঝাড়গ্রামের একটি স্কুলের গুরুতর অসুস্থ ছাত্রকে ভেলোরে পাঠাতে হবে। তার জন্য পলাশ মণ্ডল নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর অ্যাকাউন্টে ১৫ হাজার টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় ওই ব্যক্তি। পলাশ মণ্ডলের মোবাইল নম্বরও জানিয়ে দেওয়া হয়।’ পুলিশকে বিষয়টি জানিয়ে তদন্ত করতে অনুরোধ জানান আইজি (কারা)।
মেদিনীপুরে একই রকম ফোন পান পশ্চিমাঞ্চলের ডিআইজি (কারা) শোভন দীন। তিনি বলেন, “বেশি রাতে টেলিফোন পাই। বলা হয়, স্বরাষ্ট্রসচিব বলছি। ওই ব্যক্তি তমলুক মহকুমা জেলের জেলার এবং অন্য কয়েকটি জেলের ডেপুটি জেলারের ফোন নম্বর চান।” কারা দফতরের এক কর্তা বলেন, “বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া প্রভৃতি জেলের অফিসারদের কাছেও ভাল পোস্টিংয়ের টোপ দিয়ে স্বরাষ্ট্রসচিবের নাম করেই টেলিফোন করে টাকা চাওয়া হয়েছে বলে আমাদের কাছে খবর এসেছে।” জুনের শেষ সপ্তাহে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলে নিজের পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি সুতাহাটার বিডিও-কে ফোন করে বলে, একটি স্কুলছাত্র অসুস্থ। তার চিকিৎসার জন্য ৪৫ হাজার টাকা জমা দিতে বলা হয়েছিল পলাশ মণ্ডলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। ঝাড়গ্রামের ডেপুটি জেলারকেও টাকা জমা দিতে বলা হয়েছে পলাশের অ্যাকাউন্টেই। এই মিল দেখেই পুলিশের সন্দেহ, একই প্রতারক নানা সরকারি কর্তার সঙ্গে প্রতারণার চেষ্টা চালাচ্ছে। |
|
|
|
|
|