|
|
|
|
জয়ের রাস্তা দেখাচ্ছে দ্রাবিড় |
দীপ দাশগুপ্ত |
জিততে হলে ৪৭ ওভারে ১৮০ চাই আর প্রথম বলেই কি না অভিনব মুকুন্দের (০) উইকেট। এই না হলে টেস্ট ক্রিকেট! ওপেনিংটা ভাল হলে তিনে রাহুলের বদলে রায়নাকে পাঠানো যেত। কিন্তু ০-১ হওয়া মানে তো ধরবে সেই রাহুলই। সিদ্ধান্তে কোনও ভুল নেই। ২-০ জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করার এমন সোনার সুযোগ ছাড়ার কথা নয়, ঠিক রাস্তাতে এগোচ্ছেও ভারত। রাত সোয়া দুটো পর্যন্ত ৮৬-৩, দ্রাবিড় ২৮ ব্যাটিং। হাতে ২০ ওভার, দরকার ৯৪। জিততে হলে দ্রাবিড় বা লক্ষ্মণকে থাকতে হবে।
ইনিংসটা ধরবে রাহুল, অন্যদিকে মুরলী স্বাভাবিক খেলাটা খেলবে, এটাই প্রত্যাশিত ছিল। গোটা সিরিজটা ছিল দুঃস্বপ্নের মতো, একেবারেই রান নেই। আসল দিনে মুরলী কিন্তু ৪৫ রানের দামি ইনিংস খেলে দিল। ঝোড়ো স্পেল দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্রাবিড়ের উইকেটটা তুলতে চাইবে, এটাও জানা ছিল। ওদের তো হারানোর কিছুই ছিল না। এইখানেই ছিল পরীক্ষাটা। তুমি গোলাগুলি সামলাচ্ছ কী ভাবে আর কখনও ঝাঁপ বন্ধ করে দেওয়ার মতো নেতিবাচক মানসিকতা দেখাচ্ছ কি না। ড্র করলেও তো সিরিজ ভারতেরই। কিন্তু দ্রাবিড় তো দ্রাবিড়ই। এসব ক্ষেত্রে মাথাটা বরফের মতো ঠান্ডা রেখে কী ভাবে ম্যাচ নিয়ে যেতে হয়, ওর চেয়ে ভাল কে জানে? তাই ভারত নিশ্চিন্তেই জয়ের পথে। |
 |
সামিকে আউট করার পর সতীর্থদের সঙ্গে হরভজন। রবিবার রসোতে। -এপি |
সকালে খুব তাড়াতাড়ি দুটো উইকেট পড়ে যাওয়ার পরে মনে হচ্ছিল হাসতে হাসতে জিতব। ধরেই নিচ্ছিলাম ধোনিরা ২-০ সিরিজ জিতছে, যা ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে কোনও দল এর আগে জিততে পারেনি। কে জানত, ফিডেল এডওয়ার্ডসকে নিয়ে একা লড়ে যাবে চন্দ্রপল (১১৬ নট আউট)! একটাই ভুল ও করল। এগারো নম্বর বিশু যখন ব্যাট করতে এল, শেষ বলে সিঙ্গলস না নিয়ে ওর উপর ভরসা করতে গেল চন্দ্রপল। তবু টেস্ট ক্রিকেটের আগ্রহী দর্শক মাত্রেই ৫০১ মিনিট ক্রিজে থেকে লড়াইটা মনে রাখবে। লাঞ্চে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ‘লিড’ ছিল ১৫১ রানের, হাতে দুটো উইকেট। তখন কেউ বুক ঠুকে বলতে পারছিল না, ম্যাচ কোনদিকে যাবে। জানতাম চন্দ্রপল না করুক, এডওয়ার্ডস (৩০) যখন চালাচ্ছে, ভুল একটা করবেই। উইকেটটা কে পাবে, এটাই ছিল প্রশ্ন। পরপর দুটো উইকেট তুলে রায়নাই কিন্তু টার্গেটটা ১৮০-তে রেখেছিল। হাতে ৪৭ ওভার, বৃষ্টি না পড়লে ভারতের না জেতার কোনও কারণ নেই। |
 |
‘সব ভাল যার শেষ ভাল’ প্রবাদটা খাটবে মনে রেখেও বলছি, নয় নম্বর উইকেটটা ফেলতে ৩৭ ওভার লাগবে কেন? ৬৫টা দামি রানই বা যোগ হবে কেন? সিরিজের শেষ দিন দুটো উইকেট পড়ার পর বাকি দুটোর জন্য ধোনিদের যে ছটফটানি দেখব আশা করেছিলাম, সেটা দেখতে পাইনি। টেলএন্ডারদের উইকেট নিতে বিশ্বের এক নম্বর টিমকে মাথা খুঁড়তে হচ্ছিল। অথচ এই বোলিংটাই ইংল্যান্ড সফরে টেস্টে থাকবে। শুধু জাহির খান টিমে আসবে। বিশ্বের এক নম্বর র্যাঙ্কিং নিঃসন্দেহে কৃতিত্বের, কিন্তু বিপক্ষের উপর মস্তানি করে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে জেতাটাও খুব জরুরি একটা ব্যাপার। সেটাই বড় কথা। যেটা সাত বা আটের দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বারবার দেখিয়েছে, নয়ের দশক আর এই দশকের গোড়ায় দেখিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। সেটা ভারত দেখাচ্ছে কোথায়? ধোনির টিমের ব্যাটিং নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থেকেই যাচ্ছে। প্রথম টেস্টে রাহুল, পরের দুটো টেস্টে লক্ষ্মণকে বাদ দিলে রায়নার দুটো ৫০ আর ধোনি আর মকুন্দের একটা করে ৫০। এর বাইরে ব্যাটিং নিয়ে বলার মতো কিছু নেই। হতাশ হয়েছি, বিরাট কোহলি সিরিজে সে ভাবে কিছু করতেই পারল না। ভেবেছিলাম, ওর মতো জুনিয়র এই সুযোগটাকে দারুণ ভাবে কাজে লাগাবে। বোলিংয়ে ইশান্ত খুব ভাল, কিন্তু জাহিরকে টিম মিস করছিল। কারণ চন্দ্রপল আর এডওয়ার্ডস যখন খেলছিল, প্ল্যান বি বা প্ল্যান সি-র কোনও তাগিদই দেখছিলাম না।
অবাক লাগছিল, হরভজন বেশির ভাগ সময় শুধুই রাউন্ড দ্য উইকেট বল করে গেল। অথচ ওভার দ্য উইকেট বল করলে পঞ্চম দিনের উইকেটে অনেক কিছু হতে পারত। সিরিজের শেষ দিন বলে কি না জানি না, সকালে দুটো উইকেট পেয়ে যাওয়ার পরে জেতার খিদেটাই যেন হারিয়ে ফেলেছিল ভারত। আত্মতুষ্টি? হতে পারে, না-ও হতে পারে। এখানে ফল যা-ই হোক, ইংল্যান্ড সফরে অনেক বেশি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই অপেক্ষা করে আছে।
|
সংক্ষিপ্ত স্কোর |
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০৪ ও ৩২২ (চন্দ্রপল ১১৬ নট আউট, হরভজন ৪-৭৫, রায়না ২-৩২)।
ভারত ৩৪৭ ও ৮৬-৩ (বিজয় ৪৫, দ্রাবিড় ব্যাটিং ২৮)।
(রাত ২-১৫ পর্যন্ত) |
|
|
 |
|
|