চন্দ্রকোনা রোডে ট্রাকে পিষ্ট ২৩ আদিবাসী
তদন্ত কমিশনে আশার আলো
দীর্ঘ ১২ বছর আগের ঘটনা। ১৯৯৯ সালের ৩০ জুন। পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা রোডে হুল উৎসব উপলক্ষে আদিবাসীদের শোভাযাত্রা বেরিয়েছিল। তারই মধ্যে ঢুকে পড়ে বেপরোয়া ট্রাক। ২৩ জনের মৃত্যু হয়। জখম হন ৫০ জন। নিছক দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পনা করেই এই কাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে শাসকদল সিপিএমের বিরুদ্ধে তখনই অভিযোগ উঠেছিল। উঠেছিল সিবিআই তদন্তের দাবি। তখন কোনও কিনারা হয়নি। কিন্তু রাজ্যের নতুন সরকার প্রকৃত ঘটনা জানতে এ ক্ষেত্রে তদন্ত কমিশন গড়েছে। শনিবার সরকারের এই ঘোষণার পরই ১২ বছর আগে মৃত আদিবাসীদের বাড়ির লোক নতুন করে আশায় বুক বেঁধেছেন। তাঁরা চান, নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। প্রকাশ পাক সত্যি ঘটনা।
বিচারের আশায়। ছেলেমেয়েকে নিয়ে স্বামীহারা লক্ষ্মী মান্ডি। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা বলেন, “ওই এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, সিপিএমের লোকজনই প্রত্যক্ষ ভাবে এর সঙ্গে যুক্ত। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করে ঘটনার তদন্ত কমিশন গড়ার ব্যবস্থা করেছি।” কিন্তু কী উদ্দেশ্য ছিল সিপিএমের? সুকুমারবাবুর মতে, “আদিবাসী মানুষজন সিপিএমের কাউকে গুরুত্ব না দিয়েই দিনের পর দিন বিভিন্ন অনুষ্ঠান করছিল। এটা তৎকালীন শাসকদল মেনে নিতে পারেনি। তাই পরিকল্পিত ভাবে ওই ঘটনা ঘটানো হয়েছিল।” যদিও ঘটনার তদন্তকারী অফিসার মহাকাশ চৌধুরী ও গড়বেতার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন (বর্তমানে আইসি, হলদিয়া) বলেন “লরির চালক মদ্যপ অবস্থায় ছিল। তাই ওই ঘটনা ঘটে।”
ঠিক কী ঘটেছিল সে দিন? আদিবাসী সমাজ শিক্ষণ ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (চন্দ্রকোনারোড শাখা) ও সাহারবেড়া সিধু-কানু গাঁওতার যৌথ উদ্যোগে হুল দিবস পালিত হচ্ছিল। ভাঙাবাঁধ, সাহারবেড়া, কেতাড়া, নেপুরা, আড়াবাড়ি, ফুলটুসি প্রভৃতি গ্রাম থেকে হাজির হয়েছিলেন অনেকে। সকাল থেকেই চলছিল ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রাতে রানিগঞ্জ-মেদিনীপুর সড়কে শোভাযাত্রা বেরোয়। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ চন্দ্রকোনা রোড শহরের সিদ্ধেশ্বর মন্দিরের কাছে গড়বেতাগামী একটি ট্রাক পিছন দিক থেকে শোভাযাত্রার মধ্যে ঢুকে পড়ে। ঘটনাস্থলেই মারা যান ১২ জন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় আরও ১১ জনের।
আদিবাসী সমাজ শিক্ষণ ও সাংস্কৃতিক সংস্থার সম্পাদক মহেন্দ্রনাথ সরেন সে দিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি বলেন, “আমি মিছিলের মাঝে ছিলাম। আচমকাই লোডশেডিং হয়ে যায়। তারপরই একটি লরি আমাদের শোভাযাত্রার মধ্যে দ্রুত গতিতে ঢুকে পড়ে।” সে দিনের ঘটনায় মহেন্দ্রনাথবাবুর দুই ভাইঝি মারা যায়। তাঁর অভিযোগ, “আমাদের সমাজের একটি অনুষ্ঠানে এত জনসমাগম তখনকার শাসকগোষ্ঠীর লোকজন মেনে নিতে পারেনি। তাই ওই ঘটনা ঘটানো হয়েছিল।” একই বক্তব্য সাহারবেড়া সিধু-কানু গাঁওতার তৎকালীন সম্পাদক বিশু হাঁসদার। ১২ বছর আগের ওই ঘটনায় আহত স্থানীয় ভাঙাবাঁধের যুবক বৈদ্যনাথ মান্ডি বলেন, “লরির চাকায় পিষে আমার দু’টো পা ভেঙে গিয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে চিকিৎসার পরে আপাতত সুস্থ হয়েছি। কিন্তু সে দিন মৃত কারও পরিবার বা জখম কেউ কোনও অর্থসাহায্য পায়নি। তদন্তও ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল। নতুন করে তদন্ত হলে নিশ্চয়ই সত্যিটা বেরিয়ে আসবে।” ওই দিনই স্বামী দেবু মান্ডিকে হারিয়েছিলেন সাহারবেড়ার বধূ লক্ষ্মীদেবী। নাবালক দুই সন্তানকে নিয়ে বহু কষ্টে বেঁচে রয়েছেন। তদন্ত কমিশন গড়া হয়েছে শুনে বিশেষ কিছু বোঝেননি। তবে সে দিনের কথা জিজ্ঞেস করায় বললেন, “আমিও শোভাযাত্রায় ছিলাম। আচমকাই সব লন্ডভন্ড হয়ে গেল। তার পর আর কেউ খোঁজ রাখেনি। তদন্ত হলে সাক্ষী দেব। চাই সঠিক তদন্ত হোক।”
Previous Story Medinipur Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.