|
|
|
|
গ্রেফতার ১ |
পথে তাড়া করে গুলি, বালিতে খুন ব্যবসায়ী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
আততায়ীদের পিস্তলের গুলি তলপেটে, হাতে লাগার পরেও প্রাণ বাঁচাতে ছুটে পালাতে গিয়েছিলেন বছর পঞ্চাশের ব্যবসায়ী। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। ধাওয়া করে তাঁকে ধরে ফেলে দুষ্কৃতীরা। ‘পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক’ রেঞ্জ থেকে তাঁর বুকে গুলি করে তবেই এলাকা ছাড়ে তারা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই ব্যবসায়ীর। রবিবার সকালে এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায় বালির রাজচন্দ্রপুর এলাকায়। এই ঘটনায় দুপুরে এক জনকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাকি দু’জনের খোঁজ চলছে।
পুলিশ জানায়, নিহতের নাম জগন্নাথ গিরি (৫০)। বালির আনন্দনগর এলাকার ঝাউতলার বাসিন্দা জগন্নাথবাবু প্রোমোটারি এবং জমি-বাড়ি বিক্রির ব্যবসা করতেন। ব্যবসায়িক বিবাদের জেরেই তাঁকে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে মনে করছে পুলিশ। ধৃত শঙ্কর সিংহের বাড়ি জগন্নাথবাবুর বাড়ির কাছেই। জেলার পুলিশ সুপার রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “এক জনকে ধরা হয়েছে। বেশ কিছু তথ্য পুলিশের হাতে এসেছে। তদন্ত চলছে। বাকিরাও দ্রুত গ্রেফতার হবে বলে আশা করা যায়।”
আততায়ীদের হামলার সময়ে জগন্নাথবাবুর সঙ্গে ছিলেন কেশব ঘোষ। তিনি জানান, প্রতিদিন সকাল সাতটা-সাড়ে সাতটা নাগাদ রাজচন্দ্রপুর স্টেশনের কাছে এক আইনজীবীর বাড়িতে যেতেন তাঁরা দু’জন। সেখানে গল্পগুজবের পাশাপাশি জমি-বাড়ির রেজিস্ট্রি সংক্রান্ত কথাবার্তাও হত।
কী হয়েছিল রবিবার সকালে?
কেশববাবু জানান, জগন্নাথবাবু রিকশায় ছিলেন। সাইকেলে তাঁর পিছনে যাচ্ছিলেন তিনি। কেশববাবুর কথায়, “রাজচন্দ্রপুর ঠাকুরতলার কাছে হঠাৎ ওঁর (জগন্নাথ) রিকশার সামনে একটা মোটরবাইক এসে দাঁড়াল। ২০-২৫ বছর বয়সী তিন জন যুবক ছিল তাতে। এক জন নেমেই ওঁর দিকে পরপর দুটো গুলি ছুড়ল।” তিনি জানান, তলপেটে আর হাতে গুলি লেগেছিল জগন্নাথবাবুর। প্রাণ বাঁচাতে রিকশা থেকে লাফ দিয়ে নেমে পাশের গলিতে দৌড়ে ঢুকে পড়েন তিনি। ধাওয়া করে আততায়ীরাও।
নিরিবিলি এলাকার ওই গলিতে বাড়ি প্রণবেন্দ্র চক্রবর্তীর। সবে তখন ঘুম থেকে উঠেছিলেন তিনি। প্রণবেন্দ্রবাবু বলেন, “হঠাৎ গুলির আওয়াজ। তার পরেই রক্তাক্ত অবস্থায় এক জন ছুটে আমার বাড়িতে ঢুকে পড়ল। হাতে পিস্তল নিয়ে আরও দু’জনকে দেখলাম ওঁকে ধাওয়া করে বাড়িতে ঢুকে পড়েছে। এর পরে ফের গুলি চালিয়ে মারা হল ওই ভদ্রলোককে।” আতঙ্কে চিৎকার জুড়ে দেন চক্রবর্তী পরিবারের লোকেরা। মোটরসাইকেলে চেপে আনন্দনগরের দিকে পালায় তিন যুবক।
নিহতের আত্মীয়দের অভিযোগ, মাস সাতেক ধরেই জগন্নাথবাবুর কাছে হুমকি-ফোন আসত। তাঁদের দাবি, এর আগেও বাড়িতে ঢুকে অস্ত্র দেখিয়ে জগন্নাথবাবুকে শাসানো হয়। তাঁর বড় মেয়ে জ্যোৎস্না রানা বলেন, “গত ডিসেম্বর মাস থেকেই বাবাকে ফোনে হুমকি দেওয়া হত।” নিহতের পারিবারিক সূত্রের খবর, আনন্দনগর ভেড়ি এলাকায় সম্প্রতি জমি কিনেছিলেন জগন্নাথবাবু। তার পর থেকেই ৫০ লক্ষ টাকা দাবি করে তাঁকে হুমকি দিচ্ছিল স্থানীয় কয়েক জন দুষ্কৃতী। অভিযোগ, ডিসেম্বর মাসে ওই ব্যবসায়ীকে বাড়িতে এসে হুমকি দিয়ে যায় ধৃত শঙ্কর ও তার সঙ্গীরা। এ দিন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন ডোমজুড়ের তৃণমূল বিধায়ক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “তিন মাসের মধ্যে ডোমজুড় বিধানসভার বালি এলাকায় পরপর দু’টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। দু’টি ঘটনাই জমি সংক্রান্ত বিবাদ ঘিরে।” |
|
|
|
|
|