সম্পাদকীয় ২...
দৃশ্য ও মন
নিতান্ত আক্ষরিক অর্থেই, কলিকাতার মুখ বিজ্ঞাপনে ঢাকা পড়িয়াছে। মহানগরের প্রায় যে কোনও রাজপথে দাঁড়াইয়া চতুর্দিক অবলোকন করিলে আর প্রায় কিছুই চোখে পড়ে না, দৃষ্টি জুড়িয়া হোর্ডিং, কেবল হোর্ডিং। আপাতত শহরের ভাগ্যাকাশে একটি আলোকচ্ছটা দেখা দিয়াছে। কলিকাতা পুরসভা স্থির করিয়াছে, শহরের কেন্দ্রস্থলে, অর্থাৎ ধর্মতলা বিবাদী বাগ এলাকাকে হোর্ডিং তথা বিল বোর্ডের গ্রাস হইতে মুক্ত করা হইবে, এবং অবিলম্বে। এমন প্রস্তাব অতীতেও শোনা গিয়াছে, কাজ হয় নাই, তবে এখনও ‘পরিবর্তন’-এর মৃদুমন্দ হাওয়া যেন বহিতেছে, অতএব ভরসা থাকুক নাগরিকরা অতঃপর চলাচলের সময় কলিকাতার মেয়রকে ধন্যবাদ জানাইতে পারিবেন, রাজপথে প্রচারিত রবীন্দ্রসংগীতের সুরে সুর মিলাইয়া গাহিতে পারিবেন: আমার চোখে তো সকলই শোভন...।
কিন্তু উদ্যোগটি নিতান্তই প্রাথমিক। যৎসামান্য। প্রথমত, কেবল ধর্মতলা বিবাদী বাগ নয়, হোর্ডিংজনিত দৃশ্যদূষণের কবল হইতে মুক্তি চাই সমগ্র রাজ্যের। তবে সূচনার পক্ষে রাজধানী উপযুক্ত স্থান। কিন্তু তাহার দৃশ্যপটটিকে যথার্থ আধুনিক শহরের যোগ্য করিয়া তুলিতে চাহিলে প্রসাধন যথেষ্ট নয়, চাই শল্যচিকিৎসা। তাহার জন্য পশ্চিম দুনিয়ার দৃষ্টান্ত সরাসরি অনুকরণীয়। সেই দুনিয়ায় শহরের মুখ বিল বোর্ডে ঢাকা পড়ে না, কারণ তাহার নিয়ম নাই। মুখ্যমন্ত্রী কলিকাতাকে লন্ডন করিতে চাহেন। লন্ডনে নির্ধারিত দুই একটি এলাকার বাহিরে কার্যত বিল বোর্ডের স্থান নাই, এবং যেখানে তাহা আছে সেখানেও যথেচ্ছ মাপের এবং চরিত্রের হোর্ডিং লাগাইয়া দেওয়া যায় না। কোথায় কতটুকু হোর্ডিং লাগানো চলে, তাহা স্থির করিয়া দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট অভিভাবক-প্রতিষ্ঠান আছে, আবার হোর্ডিংগুলি যথেষ্ট দৃষ্টিনন্দন কি না তাহাও অন্য এক প্রতিষ্ঠান তদারক করে। কলিকাতায় এই নিয়ম অনুসরণ করা দরকার। আপসহীন ভাবে। দৃশ্য পরিবেশের অঙ্গ। পরিবেশকে বাজারের হাতে ছাড়িয়া দেওয়া যায় না, তাহা এখন সর্বজনস্বীকৃত।
পুরসভা হিসাব কষিয়াছে, নগরকেন্দ্র হইতে বিল বোর্ড বিদায় করিলে তাহার বার্ষিক প্রায় চার কোটি টাকা লোকসান হইবে। এই ক্ষতি অন্তত অনেকাংশে পূরণের উপায় কিন্তু পুরসভার নাগালেই আছে। যে ইমারতগুলির গায়ে বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং লাগানো হইবে, সেগুলির জন্য যথেষ্ট চড়া হারে কর আদায় করা জরুরি। তাহা সঙ্গতও বটে, কারণ সেগুলিকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হইতেছে। কর যথেষ্ট চড়া হইলে হোর্ডিংয়ের প্রাবল্যও কমিতে পারে। একই সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা এবং কর নীতির যৌথ প্রয়োগে দূষণ কমাইবার চেষ্টা অর্থনীতির একটি স্বীকৃত পন্থা। কিন্তু মূল প্রশ্নটি পদ্ধতির নয়, মনোভঙ্গির। দৃশ্যদূষণ রোধের সার্থক উদ্যোগের পিছনে একটি মানসিকতা প্রয়োজন। শহরকে দৃশ্যত পরিচ্ছন্ন রাখিবার মানসিকতা। তাহা কেবল শহর বা রাজ্যের কর্তাদের মানসিকতার ব্যাপার নয়, নাগরিকদেরও এই বিষয়ে যথেষ্ট মনস্ক হওয়া দরকার। পশ্চিম দুনিয়ার সমাজে সেই মনস্কতা ব্যাপক ও গভীর। এ দেশে, বিশেষত এই শহরে তাহার ঘোর অনটন। নাগরিকরা আপন গৃহকোণটিকে নিকাইয়া রাখেন, বাহিরের পরিচ্ছন্নতা লইয়া বিন্দুমাত্র মাথা ঘামান না। সেই কারণেই পুরকর্তাদের তৎপরতা দ্বিগুণ জরুরি।
Previous Item Editorial Next Item


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.