|
|
|
|
সম্পাদকীয় ১... |
আর এক পা |
পার্বত্য দার্জিলিঙ ও ডুয়ার্স অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি ও প্রগতির সন্ধান আরও এক পা অগ্রসর হইল। মহাকরণে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতৃত্বের সঙ্গে রাজ্য সরকারের ফলপ্রসূ আলোচনায় ত্রিপাক্ষিক চুক্তির খসড়া কার্যত অনুমোদিতই হইয়া গিয়াছে। অতঃপর চুক্তির আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষরের পালা। লক্ষণীয়, প্রস্তাবিত পরিষদের স্বশাসনের আওতায় ডুয়ার্সের গোর্খা-গরিষ্ঠ মৌজাগুলির অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নটির আশু নিষ্পত্তির জন্যও গোর্খা নেতৃত্ব চাপাচাপি করে নাই। বিষয়টি ভবিষ্যতের উপর ছাড়িয়া দেওয়া হইয়াছে, প্রতিনিধিত্বমূলক একটি কমিটি যাহার রূপরেখা তৈয়ার করিবে। গোর্খা নেতৃত্ব তথাপি সন্তুষ্ট। এমনকী বিমল গুরুঙ্গের ‘বঙ্গ-ভঙ্গ’-এর হুমকি লইয়াও কোনও রূপ জল-ঘোলা হয় নাই। দার্জিলিঙে অতএব আপাতত শান্তি-কল্যাণ বহাল থাকিতেছে।
ইহা এই অনুন্নত এলাকার সার্বিক উন্নয়নের জন্যও আবশ্যক। উন্নয়নের রূপরেখা রচনা করিতে মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই দার্জিলিঙে তাঁহার মন্ত্রিসভার প্রতিনিধিদল পাঠাইয়াছিলেন। দার্জিলিঙ যে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যেরই অংশ, তাহা যে কেবল মৌখিক পুনরুচ্চারণ ও রাজনৈতিক অঙ্গীকারের বিষয় নয়, সেখানকার জনজাতীয় বাসিন্দাদের বঙ্গবাসী গণ্য করা এবং বঙ্গবাসীর পূর্ণাঙ্গ মর্যাদা দেওয়া, সর্বোপরি রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চল ও জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের মতোই গোর্খা জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্যও চেষ্টিত হওয়া আবশ্যক, এই সত্যটিই বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাসীন হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গেই পাহাড়বাসীদের বন্ধুতে পরিণত করিয়াছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তাঁহার সরকার পার্বত্য দার্জিলিঙকে ‘শত্রুর এলাকা’ এবং গোর্খাদের ‘রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ’ ভাবেন নাই, বরং সমতলের প্রজাপুঞ্জের মতোই পার্বত্য দার্জিলিঙের গোর্খাদেরও উন্নয়ন ও মর্যাদার সমান দাবি রহিয়াছে, ইহা মঞ্জুর করিয়াছেন। বাহ্যিক আচরণেও তাহা প্রকট হইয়াছে। আর সমস্যার অর্ধেক সমাধান তাহাতেই হইয়া গিয়াছে। অন্ধ্রপ্রদেশে যখন স্বতন্ত্র তেলেঙ্গানা রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন নূতন করিয়া হায়দরাবাদ ও দিল্লির রাতের নিদ্রা কাড়িয়া লইতেছে, তখন পার্বত্য দার্জিলিঙের স্বশাসনের দাবিটির এমন সুষ্ঠু মীমাংসা নিঃসন্দেহে কৃতিত্বের। বিশেষত যদি মনে রাখা যায়, তেলেঙ্গানা আন্দোলনের আগের পর্বটিতেই বিমল গুরুঙ্গরা পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবিটিকে দৃঢ়তার সহিত আঁকড়াইয়া ধরিয়াছিলেন। সে দিনের বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মতোই আজিকার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবি উড়াইয়া দিয়াছেন। কিন্তু তাহা করার পদ্ধতি, সরকারের বাচনভঙ্গি, শরীরী ভাষা এমন থাকে নাই যাহা বিমল গুরুঙ্গদের প্ররোচিত করিতে পারে।
প্রস্তাবিত স্বশাসিত পরিষদের নাম হইবে ‘গোর্খাল্যান্ড আঞ্চলিক প্রশাসন’। অর্থাৎ গোর্খাল্যান্ড শব্দটি নামের মধ্যে থাকিতেছে। কিন্তু তাহাতে মহাভারত অশুদ্ধ হইবে বলিয়া মনে হয় না। কেননা একই সঙ্গে আবার ‘স্বশাসন’ শব্দটি থাকিতেছে না। তা ছাড়া, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতৃত্ব নিজেরাই পৃথক রাজ্যের ভাবনাটি আপাতত ‘হৃদয়ে রাখিয়া’ পার্বত্য দার্জিলিঙ ও গোর্খা জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে মনোনিবেশ করার শপথ লইয়াছে। সেই কাজে রাজ্য সরকার যে পুরোপুরি সহযোগিতা করিবে, মুখ্যমন্ত্রী তাহা কেবল প্রতিশ্রুতি দেন নাই, নিজ মন্ত্রিসভা ও প্রশাসনকে সেই মর্মে সচল-সক্রিয়ও করিয়া দিয়াছেন। পদ্ধতিগত খুঁটিনাটির মধ্যে আটকা না পড়িয়া সেই বৃহৎ প্রেক্ষাপটটির দিকে তাকানো দরকার। বৃহত্তর প্রেক্ষিতটি মাথায় রাখিলে ডুয়ার্সে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিও মীমাংসার অতীত থাকিবে না। কয়টি গোর্খা-গরিষ্ঠ মৌজা পরিষদের অন্তর্ভুক্ত হইল, আর কয়টা তাহার বাহিরে থাকিল, সেটাও কোনও বড় কাজিয়ার বিষয় হইবে না। এমনও হইতে পারে, ডুয়ার্সের কিছু মৌজা স্বতঃপ্রণোদিত হইয়া সুশাসিত গোর্খাল্যান্ড আঞ্চলিক প্রশাসনের অধীন হইতে চাহিতেছে। তবে সে জন্য আদিবাসী বিকাশ পরিষদের মতো সংগঠনকে রাজনৈতিক উসকানি দেওয়া বন্ধ করিতে হইবে। |
|
|
|
|
|