মাওবাদী এলাকায় পুলিশের বন্ধু হিসেবে পরিচিত স্পেশাল পুলিশ অফিসার বা এসপিও-দের নিরাপত্তা নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত বিহার পুলিশ ও প্রশাসন। মুঙ্গের-সহ বিহারের বেশ কিছু স্থানে গত কয়েক মাসে মাওবাদী-দমন অভিযানে পুলিশ যে সাফল্য পেয়েছে তা অনেকটাই এই এসপিও-দের সৌজন্যে। আর সে কারণেই মাওবাদীদের চক্ষের বিষ হয়ে উঠেছে পুলিশের ইনফর্মার এবং এসপিও-রা। মুঙ্গেরের কারেলি-সহ বিহারের বেশ কয়েকটি জায়গায় মাওবাদীরা মূলত হামলা চালিয়েছে এদের উপরেই। এই জেলার কারেলি, মহাঙ্গামা, গোবিন্দপুর ও তারপার গ্রামে মাওবাদীরা এ বার পোস্টার মেরে রীতিমতো হুমকি দিয়েছে যে, জঙ্গি দমন অভিযানে যে সব এসপিও সামিল হবে, তাদের খতম করা হবে। গ্রামবসীদেরও শাসানো হয়েছে এই বলে যে, এই পুলিশদের মদত বা আশ্রয় দিলে তার ফল ভাল হবে না।
রাজ্য পুলিশের ডিজি নীলমণি সম্প্রতি জানিয়ে দিয়েছেন, এসপিও-দের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার বিষয়ে এখনই বিহার প্রশাসন চিন্তাভাবনা করছে না।কিন্তু এরই পাশাপাশি মাওবাদীদের হুমকির জেরে এই এসপিও-দের নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তিত প্রশাসন। মাওবাদীদের হাত থেকে এসপিও-দের রক্ষা করাই এখন পুলিশ কর্তাদের সামনে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।
মাওবাদী দমন অভিযানে এ দেশে প্রথম এসপিও বা পুলিশ নেটওয়ার্কের ব্যবহার করেছিল ছত্তীসগঢ় পুলিশ। ‘সালোয়া জুড়ুমে’ কর্তব্যরত এসপিও-দের রক্ষা করতে অনেক দিন আগেই অস্ত্র দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। কিন্তু এখনই বিহারে এসপিও-দের অস্ত্র দেওয়ার কথা ভাবছে না রাজ্য প্রশাসন। নীলমণির কথায়, “আমরা এখনই এসপিও-দের অস্ত্র দেওয়ার কথা ভাবছি না। কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন অনুযায়ী আমাদের রাজ্যে ছ’হাজার এসপিও রয়েছে। কিন্তু তাদের কাউকেই আমরা অস্ত্র দিইনি।’’ তবে এসপিও-দের যে মাসে তিন হাজার টাকা করে মাইনে দেওয়া হয়, তা মেনে নিয়েছেন নীলমণি। তিনি বলেন, “গত কয়েক মাস ধরে মূলত এসপিও-দের সাহায্যেই আমরা অনেক তাবড় মাওবাদী নেতাকে ধরতে পেরেছি।”
আর সেই কারণেই এসপিও-রা এখন মাওবাদী হামলার অন্যতম লক্ষ্য হয়ে উঠেছে বিহারে। গত ২ জুলাই কারেলিতে মাওবাদীরা যে ছ’জন আদিবাসী এবং পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের বাসিন্দাকে হত্যা করেছিল, তার মধ্যে দু’জন এসপিও ছিল। গত জুনে মাওবাদীরা গয়ার একটি গ্রামে শ্যামসুন্দর যাদব এবং বিনোদ যাদব নামের দুই ব্যক্তিকে গ্রাম-আদালতে শাস্তি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছিল। ওই দু’জনই ছিল এসপিও। দু’মাস আগে আর এক এসপিও জামুইয়ের এক গ্রামবাসীকে হত্যা করে মাওবাদীরা। ওই সময়েই সীতামঢ়ীর রুনিসৈয়দপুরের বাসিন্দা মিথিলেশ যাদবকে মাওবাদীরা হত্যা করে পুলিশকে জরুরি তথ্য পাচারের অভিযোগে। এ ছাড়াও, মাওবাদী-অধ্যুষিত প্রায় সবগুলি জেলায় সম্প্রতি এসপিও-দের বিরুদ্ধে পোস্টারও সাঁটিয়েছে মাওবাদীরা। এই অবস্থায় মাওবাদীদের হাত থেকে নিজেদের এসপিও বাহিনীকে রক্ষা করতে সচেষ্ট পুলিশ সদর দফতর। কিন্তু সরকার এখনই এসপিও-দের হাতে প্রকাশ্যে অস্ত্র দিয়ে ভুল বার্তা দিতে চায় না। |