ফোন করলেন মনমোহনও
বাহানবতীর সঙ্গে বিরোধেই ইস্তফা গোপালের
লিসিটর জেনারেল গোপাল সুব্রহ্মণ্যমের ইস্তফাকে কেন্দ্র করে সরকারের অন্দরমহলে প্রবল জলঘোলা শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ আজ গোপালকে ফোন করে অনুরোধ করেছেন, যাতে তিনি তাঁর ইস্তফা প্রত্যাহার করেন। সুপ্রিম কোর্টে টুজি স্পেকট্রাম মামলা পরিচালনার দায়িত্বে তাঁকেই থাকতে হবে বলে গোপালকে আশ্বাসও দেন প্রধানমন্ত্রী। গত কাল রাতে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী বীরাপ্পা মইলিও গোপালকে একই কথা বলেন।
এখন গোপাল সুব্রহ্মণ্যমকে ইস্তফা দেওয়া থেকে বিরত করতে পারা যাক বা না যাক, বিচারবিভাগ এবং সরকারের মধ্যে বিরোধ বাড়ছে বই কমছে না। সরকারি সূত্রে জানা যাচ্ছে, সমস্যার মূল হল, অ্যাটর্নি জেনারেল জি ই বাহানবতীর সঙ্গে সলিসিটর জেনারেল গোপালের বিরোধ। সেটাই আসল কারণ এই ইস্তফার পিছনে।
সম্প্রতি টুজি মামলায় বর্তমান টেলিকমমন্ত্রী কপিল সিব্বল এবং অ্যাটর্নি জেনারেল বাহানবতীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। বাহানবতীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রাক্তন টেলিকমমন্ত্রী এ রাজা তাঁর কাছে টুজি সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য জানতে চেয়েছিলেন। বাহানবতী অতি উৎসাহী হয়ে আইনমন্ত্রী বীরাপ্পা মইলিকে কিছু না জানিয়েই রাজাকে সে সব তথ্য সরবরাহ করেন। সেটি একটি পদ্ধতিগত ত্রুটি। কিন্তু সরকার পক্ষ টুজি মামলায় বাহানবতীকে অভিযুক্ত না করে সাক্ষী করেছে। নীরা রাডিয়ার মতোই। এখানে গোপালের বক্তব্য, যেখানে খোদ আ্যাটর্নি জেনারেলের বিরুদ্ধেই মামলা ঝুলছে, সেখানে তাঁর অধীনে কাজ করে টুজি মামলা পরিচালনা করা কার্যত অসম্ভব। গোপালের দাবি, অ্যাটর্নি জেনারেলকে সরানো হোক। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এখনও অবধি বাহানবতীর পাশেই দাঁড়াচ্ছে। বাহানবতীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে তেমন একটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। টেলিকমমন্ত্রী কপিল সিব্বল সরাসরি বাহানবতীকেই সমর্থন করছেন। গোপালের ভূমিকায় তিনি রীতিমতো বিরক্ত।

গোপাল সুব্রহ্মণ্যম

জি ই বাহানবতী
২০০৯ সালে সলিসিটর জেনারেলের দায়িত্ব নেন গোপাল। বয়স ৫৩। খুবই উজ্জ্বল কর্মজীবন। সেই সঙ্গে বাড়িতে নিয়মিত তন্ত্রসাধনা করে থাকেন। গত ৩০ বছরে বহু গুরুত্বপূর্ণ মামলা লড়েছেন। কুত্রোচ্চি মামলা, টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন মামলায় সরকার পক্ষের হয়ে জোরালো সওয়াল করেছিলেন। রা্যগিং-বিরোধী বোর্ড গঠনেও তাঁর সক্রিয় সহায়তা ছিল। কিন্তু সম্প্রতি কালো টাকা ও সালওয়া জুড়ুম মামলায় তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই দু’টি মামলাতেই সুপ্রিম কোর্ট তীব্র তিরস্কার করেছে কেন্দ্রকে। সরকার মনে করছে, এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতার দায় গোপালের। এমনকী প্রাক্তন ভিজিল্যান্স কমিশনার পি জে টমাসের নিয়োগ বিতর্কের ক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ আদালতে তাঁর ভূমিকা সন্তোষজনক নয় বলে সরকারের অভিমত। গোপাল নিজে অবশ্য তা মানতে রাজি নন। তাঁর মতে সরকার যা যা তথ্য সরবরাহ করেছে এবং অ্যাটর্নি জেনারেল যে ভাবে মামলা সাজিয়েছেন, তিনি তার ভিত্তিতেই সওয়াল করেছেন। এ ব্যাপারে তাঁর আলাদা করে কোনও ব্যর্থতা নেই। কী কী তথ্যের ভিত্তিতে তিনি কী কী সওয়াল করেছেন, সে ব্যাপারে একটি বিস্তারিত নোটও তিনি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে পেশ করেছেন। কিন্তু প্রণববাবু মনে করেন, কালো টাকা উদ্ধারে সরকার ইতিমধ্যেই যে সব পদক্ষেপ করেছে, সেই বিষয়গুলি আদালতের সামনে আরও অনেক বেশি করে তুলে ধরা যেত। কিন্তু সলিসিটর জেনারেল তা করেননি। তাতেই সরকারের মুখ পুড়েছে।
গোপালের সঙ্গে সরকারের বিরোধের সূত্রপাত বস্তুত এরও আগে থেকে। আদালতে সিবিআইয়ের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার সময় এক বার নিয়ম ভেঙে সিবিআই অফিসারদের নিজের চেম্বারে ডেকে পাঠিয়েছিলেন গোপাল। এ রাজার আইনজীবী অনিতা শেনয় সিবিআইয়ের দুই অফিসারকে (এক আয়কর বিভাগের, এক জন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট-এর) নিয়ে গোপালের কাছে গিয়েছিলেন। সে কথা জানাজানি হওয়ার পরে কেন্দ্র সিবিআই প্রতিনিধির পদ থেকে গোপালকে সরিয়ে কে কে বেণুগোপালকে বসায়।
আপাতত টুজি মামলাতেও আর নরিম্যানকে বিশেষ কাউন্সেল হিসেবে নিয়োগ করেছে কেন্দ্র। শুনানির দায়িত্ব নরিম্যানকেই দেওয়া হচ্ছে। গোপালকে কিছু না জানিয়ে এই ভাবে নরিম্যানকে নিয়োগ করার পরেই ইস্তফা পেশ করেছেন গোপাল। তাঁর বক্তব্য, এই নিয়োগ অনৈতিক। তার পরেই গত কাল আইনমন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি এবং আজ প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং ফোন করে তাঁকে নিরস্ত করার চেষ্টা করেছেন। সরকার আশা করছে, গোপাল মত বদলাবেন। যদিও গোপাল নিজে কোনও মন্তব্য করেননি।
কিন্তু প্রশ্ন হল, গোপালকে নিরস্ত করার জন্য এত সচেষ্টই বা কেন সরকার? সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, গোপালকে শেষ পর্যন্ত সরতেই হবে। কিন্তু কেন্দ্র মনে করছে, এখন তার সঠিক সময় নয়। ইস্তফা দিয়ে এখনই যদি গোপাল প্রকাশ্যে নানা কথা বলতে শুরু করেন, তাতে সরকারের সমস্যা বাড়বে বই কমবে না। সেই জন্যই কিছুটা ধীরে চলার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে সরকার, বিচারবিভাগ, অ্যাটর্নি জেনারেল এবং সলিসিটর জেনারেলকে ঘিরে এই বহুস্তরী জটিলতা আখেরে সরকারের অভ্যন্তরে চূড়ান্ত সমন্বয়হীনতাকেই প্রকট করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
Previous Story Desh Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.