মন্ত্রিসভায় রদবদল
চাইলেও ঝাঁকুনি দিতে পারছেন না মনমোহন
দু’বছরের কিছু বেশি সময় পার করে ফেললেও দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার কিন্তু খুব স্বস্তিতে নেই। আগামী দু’এক দিনের মধ্যেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় ফের রদবদলও হবে। এই অবস্থায় কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা প্রায় সকলেই এক বাক্যে মানছেন যে, পরিস্থিতি যা, তাতে এখনই মন্ত্রিসভায় একটা বড় ধরনের ঝাঁকুনি দেওয়া প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ-ও তাই চান। কিন্তু তার পরেও এ বার রদবদলে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর ‘কামরাজ পরিকল্পনা’র মতো বড় ধরনের নাটকীয় পরিবর্তনের সম্ভাবনা যে খুব কম, সেটা মেনে নিচ্ছেন ওই কংগ্রেস নেতারাই। তাঁদের বক্তব্য, যদি এ বার প্রধানমন্ত্রী তাঁর ‘ব্যক্তিগত ইচ্ছা’ অনুযায়ী শেষ মুহূর্তে কোনও নাটকীয় রদবদল করতে পারেন, তা হলে সেটা হবে সত্যি করেই এক ‘অপ্রত্যাশিত’ ঘটনা।
কিন্তু কেন এমন অবস্থা? ইন্দিরা গাঁধী যেটা করতে পারতেন, মনমোহন সিংহ সেটা পারছেন না কেন?
কংগ্রেস সূত্র বলছে, ইন্দিরার যে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ছিল, আজ মনমোহনের তা নেই। ইউপিএ-সরকারের প্রথম পর্বে পরমাণু চুক্তি সই করতে গিয়ে যে ‘হিম্মত’ মনমোহন দেখিয়েছেন, দ্বিতীয় পর্বে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা বাড়লেও তা কিন্তু তাঁর নেই। বরং কর্তৃত্বের অবক্ষয় হয়েছে। সকলেই মানছেন যে, এর কারণ হল, স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে লোকপাল বিল বা অপারেশন রামদেব একের পর এক সমস্যা মেটাতে গিয়ে সরকারের নাজেহাল দশা। একাধিক জট কাটাতে না পেরে প্রধানমন্ত্রী যে নিজেই এখন সমস্যায়, তা-ও মেনে নিচ্ছেন কংগ্রেসের বহু নেতা। ফলে মন্ত্রিসভার রদবদলে বড় ধরনের কোনও ঝাঁকুনি দেওয়ার সাহস তিনি দেখাতে পারছেন না বলে মনে করছেন তাঁরা।
প্রধানমন্ত্রীর ‘মুশকিল আসান’ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় চেন্নাই গিয়ে করুণানিধির সঙ্গে দেখা করলেও কালাইনার পরিবারের বিবাদের জেরে ডিএমকে-র কাকে মন্ত্রী করা হবে, তা নিয়ে জটিলতা কাটেনি। যে হেতু মন্ত্রিসভা থেকে তাদের দুই পূর্ণ মন্ত্রী, এ রাজা ও মারান ইস্তফা দিয়েছেন, তাই কংগ্রেস ডিএমকে-কে দু’টি পূর্ণ মন্ত্রক নিতে অনুরোধ করেছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না করুণানিধি। কারণ তাঁর কন্যা কানিমোঝি ও ছোট ছেলে স্ট্যালিনের মধ্যে বিবাদ। সূত্রের খবর, কানিমোজি বাবাকে বলেছেন, তাঁর জেল থেকে বেরনো পর্যন্ত মন্ত্রিসভায় ডিএমকে-র কাউকে যেন না পাঠানো হয়। বেকসুর প্রমাণিত হলে তিনিই মন্ত্রী হবেন। কিন্তু স্ট্যালিন বাবাকে বলেছেন, আইন আইনের পথে চলুক। কেন্দ্রে তাঁরা এখন যোগ দিতেই পারেন।
ইন্দিরা গাঁধীকে এই জোট রাজনীতির মোকাবিলা করতে হয়নি। ইউপিএ-র প্রথম পর্বে লালুপ্রসাদ ও শিবু সোরেনকে নিয়ে যে সমস্যা ছিল, এখন তা দাঁড়িয়েছে ডিএমকে-কে নিয়ে। জোটধর্মের কারণে বেশ কিছু মন্ত্রকে ‘কোটা’ ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। তাই কংগ্রেস চাইলেও রেল মন্ত্রক পায়নি। তৃণমূল কংগ্রেসকে তা ছাড়তে হয়েছে। এবং প্রধানমন্ত্রীকে তা মেনেও নিতে হয়েছে। কংগ্রেস নেতারা অবশ্য মানছেন, তুলনামূলক ভাবে মমতার তৃণমূলকে নিয়ে তাঁদের সমস্যা অনেক কম।
এর মধ্যে লালুপ্রসাদ যাদব ও অজিত সিংহ মন্ত্রিসভায় ঢুকতে আগ্রহী। উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে তাঁদের সঙ্গে জোট গড়লে আখেরে কংগ্রেস লাভবান হবে বলে তাঁরা সনিয়াকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু বিহারের নির্বাচনে বিপর্যয়ের পরেও হিন্দি বলয়ের এই দুই রাজ্যে ‘একলা চলো’র নীতি থেকে সরতে চাইছেন না রাহুল গাঁধী। ফলে এ যাত্রাও লালু বা অজিত সিংহের মন্ত্রিসভায় ঢোকার সম্ভাবনা কম।
কংগ্রেসের মধ্যেও সমস্যা কম নয়। মনমোহন সিংহ এবং সনিয়া গাঁধীর মধ্যে বেশ কিছু প্রার্থীকে নিয়ে মতান্তর রয়েছে। গত কয়েক মাসে সরকার ও দলের মধ্যে দূরত্ব যে বেড়েছে, তা কংগ্রেসের নেতারাও পরোক্ষে মানছেন। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা বলেন, “৩৬৫ দিন এক সঙ্গে কাজ করলে এই মতপার্থক্য হওয়া স্বাভাবিক। দুই শীর্ষ নেতা বারবার আলোচনা করে ঐকমত্যে পৌঁছনোর চেষ্টা করছেন।” যোগ্যতার ভিত্তিতে মন্ত্রীদের যে রিপোর্ট কার্ড প্রধানমন্ত্রী তৈরি করেছেন, তাতে বেশ কিছু শীর্ষ স্তরের মন্ত্রীকে সরিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে চান তিনি। কিন্তু কার বদলে কাকে মন্ত্রী করা হবে, তা নিয়েও ঐকমত্য হওয়া প্রয়োজন। শিবরাজ পাটিল নর্থ ব্লকে ফিরতে চাইছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নারাজ। আবার কংগ্রেস এস এম কৃষ্ণকে সরিয়ে আনন্দ শর্মা বা চিদম্বরমকে বিদেশ মন্ত্রকে পাঠানোর কথা ভাবলেও প্রধানমন্ত্রী তাতে রাজি নন। তিনি কৃষ্ণকেই বিদেশ মন্ত্রকে রাখতে চান। একটা প্রস্তাব ছিল, চিদম্বরমকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে পাঠিয়ে অ্যান্টনিকে স্বরাষ্ট্রে আনা হোক। কিন্তু প্রতিরক্ষায় বেশ কিছু বড় চুক্তি হতে চলেছে। যেগুলি অ্যান্টনির তত্ত্বাবধানে হচ্ছে। প্রতিরক্ষার মতো সংবেদনশীল দফতরে চিদম্বরমকে পাঠাতে দশ জনপথও প্রস্তুত নয়।
কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কিছু নেতাকে মন্ত্রিসভায় এবং সরকার থেকে কয়েক জনকে সংগঠনে আনার ভাবনা বেশ কিছু দিন ধরে চলছে। সম্প্রতি দলের এক বৈঠকে সনিয়া গাঁধী বলেছিলেন, ‘শুধু মন্ত্রীদের দেখছি, নেতা কই’? সনিয়া যা চাইছিলেন, তা করতে গেলে জনার্দন দ্বিবেদী ও দিগ্বিজয় সিংহকে মন্ত্রিসভায় এনে গুলাম নবি আজাদ ও মুকুল ওয়াসনিকের মতো মন্ত্রীকে সংগঠনে আনা দরকার বলে মনে করেন অনেকে। কিন্তু দিগ্বিজয় বা জনার্দনকে মন্ত্রিসভায় আনতে প্রধানমন্ত্রী উৎসাহী নন। আবার মুকুল ওয়াসনিক দলিত নেতা, গুলাম নবি সংখ্যালঘু। তাঁদের মন্ত্রিসভা থেকে না সরানোর পক্ষেও মত রয়েছে।
উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোট আসন্ন বলে সেখান থেকে আরও নতুন মুখ আনা বা সেখানকার বর্তমান মন্ত্রীদের ক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাবও রয়েছে। তা করতেও হিমসিম খাচ্ছেন সনিয়া-মনমোহন। কারণ যোগ্যতার নিরিখে সঠিক লোক খুঁজে পাওয়াই কঠিন হচ্ছে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে স্বাধীন ভাবে শুধু নিজের মূল্যায়নের ভিত্তিতে মন্ত্রিসভা গড়া কঠিন হয়ে পড়ছে। মুরলী দেওরাকে মন্ত্রিসভা থেকে সরাতে পারলেও তাতে বড় চমক সৃষ্টি হবে না। বেনীপ্রসাদ বর্মা এখন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী। তাঁকে পূর্ণমন্ত্রী করলে সব মিটে যাবে, এমনও নয়। উত্তরপ্রদেশ থেকে রাজ বব্বরকে মন্ত্রী করার কথা হচ্ছে। তাতে উত্তরপ্রদেশে বার্তা দেওয়া গেলেও কেন্দ্রে সরকারের কি খুব লাভ হবে? এই পরিস্থিতিতে প্রধানম
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য প্রধানমন্ত্রী ও প্রণববাবুকে বারবার বলছেন, যত দ্রুত সম্ভব মন্ত্রিসভার রদবদল হোক। যাতে দীনেশ ত্রিবেদীর রেলমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণে বিলম্ব না হয়। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রয়োজন ছিল রদবদল করে এমন একটা কার্যকর মন্ত্রিসভা গঠন করা, যা আগামী তিন বছর ধরে কংগ্রেসকে অক্সিজেন দেবে। মুমূর্ষু অবস্থায় জিয়ন কাঠি হয়ে উঠবে। কিন্তু তা করার জন্য যদি মনমোহনের ‘হিম্মত’ না থাকে, তা হলে আগাম ঘোষণার প্রয়োজন ছিল না। এক বার ঘোষণার পরে তা না করতে পারলে, তা নিয়েও সমালোচনা হবে।” ওই নেতার মতে, দ্রুত সারতে না পারলে সময় যত এগোবে, পরিস্থিতি তত জটিল হবে।
Previous Story Desh Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.