একই দিনে জোড়া ধাক্কায় বেসামাল রেল।
কালকা মেলের দুর্ঘটনা নিয়ে দেশ যখন তোলপাড়, ঠিক তখনই দুর্ঘটনার কবলে পড়ল যাত্রী বোঝাই গুয়াহাটি-পুরী এক্সপ্রেস। আজ রাত ৮টা ২০ নাগাদ লাইনচ্যুত হয়ে নদীতে পড়ে যায় ওই ট্রেনের চারটি কামরা। ঘটনাটি ঘটে অসমের কামরূপে, নলবাড়ি জেলার রঙ্গিয়া ও ঘাঘড়াপাড়ার মধ্যে ভাতকুচি এলাকায়। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক যাত্রী, তাঁদের মধ্যে ২০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। কালকা মেলের ক্ষেত্রে যখন দুর্ঘটনার কারণ হাতড়াচ্ছে রেল, সেখানে পুরীগামী ১৫৬৪০ ডাউন গুয়াহাটি-পুরী এক্সপ্রেসের ঘটনায় রয়ে যাচ্ছে নাশকতার ছায়াও। কারণ, প্রাথমিক ভাবে স্থানীয় সব মহল থেকেই বলা হচ্ছে, রেললাইনে একটি বিস্ফোরণ হওয়ার পরেই ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়।
প্রশাসন সূত্রে খবর, বিস্ফোরণে রেললাইনের বেশ কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ঘটনার পিছনে ‘ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট অফ বড়ো’ (এনডিএফবি)-র রঞ্জনপন্থীদের হাত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। নাশকতার তত্ত্ব উড়িয়ে দিচ্ছে না রেলও। নিরাপত্তার স্বার্থে ওই রেলপথে রাতের সমস্ত ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন পুলিশ ও রেলের কর্তারা। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার এ কে মানোচাকে উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা পিটিআই জানায়, ঘটনাস্থল থেকে আইইডি (ইম্প্রোভাইজ্ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) তার পাওয়া গিয়েছে। তবে ফরেন্সিক দল না-পৌঁছনো পর্যন্ত বিস্ফোরণের কারণ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ পুলিশ কর্তারা। |
শিলিগুড়ির রেল পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল জানিয়েছেন, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উত্তরবঙ্গে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এনজেপি, নিউ কোচবিহার-সহ বিভিন্ন স্টেশনে তল্লাশি শুরু হয়েছে। আহতদের আপাতত গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং নলবাড়ি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের চিকিৎসার খরচ বহন করছে রাজ্য সরকার। খোলা হয়েছে একটি হেল্পলাইনও (০৯৯৫৭৫৫৪৮০৪)।
কী হয়েছিল ভাতকুচিতে? স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ছুটন্ত ট্রেনটির এস-১ থেকে এস-৪ কামরা বিকট শব্দ করে ইঞ্জিন থেকে আলাদা হয়ে যায়। পরের মুহূর্তেই লাইন থেকে ছিটকে পাশের একটি ছোট নদীতে পড়ে যায় ওই চারটি ওই চারটি কামরা। আংশিক ডুবে যায় এস-১ এবং এস-২। ক্ষতিগ্রস্ত ট্রেনের যাত্রীরাই জানান, ট্রেনটি বেলাইন হওয়ার আগে ইঞ্জিনের ঠিক পিছনের কামরার তলা থেকে একটি জোরালো বিস্ফোরণের শব্দ পান তাঁরা। রাতে রেল পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিস্ফোরণের জেরে ওই লাইনের ফিশপ্লেট উড়ে গিয়েছে, বেঁকে গিয়েছে লাইনের একাংশও। তাতেই লাইন থেকে ছিটকে পড়ে ৪টি কামরা। বাকি কামরাগুলি ঘটনার অভিঘাতে বেলাইন হয়। ট্রেনের চাকা ভেঙে ছিটকে গিয়েছে বলেও জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের এস-১ কামরায় মা, বোন এবং দিদিমার সঙ্গে ছিলেন গুয়াহাটির বাসিন্দা, বি-টেক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সংযুক্তা মজুমদার। ইঞ্জিনের ঠিক পিছনে ওই কামরার নীচেই বিস্ফোরণের শব্দ হয়েছিল। সংযুক্তা দুর্ঘটনাস্থল থেকে ফোনে বলেন, “৬টা ৪০ নাগাদ গুয়াহাটি থেকে ট্রেনটা ছাড়ল। সাড়ে ৮টা নাগাদ একটা সাংঘাতিক শব্দ। কিছু বোঝার আগেই দেখি ট্রেনটা লাইন থেকে ছিটকে বেরিয়ে যাচ্ছে। লাইনের
এক দিকে জমি ছিল, অন্য দিকে নদীখাত। আমাদের কামরা আর ঠিক পিছনের কামরা ছিটকে পড়ে ওই নদীর জলে। আপৎকালীন জানলার ঠিক পাশেই ছিলাম। কোনওক্রমে
ওই জানলা খুলে বের হই। মা
আর বোনকে হাসপাতাল নিয়ে
যাচ্ছি। দিদিমার কোমর ভেঙে গিয়েছে। ওঁকে বাকি যাত্রীদের কাছে রেখে এসেছি।” |