|
|
|
|
ক্ষুব্ধ বিশেষজ্ঞেরা |
কেন্দ্রীয় মানচিত্রে নেই পূর্ব কলকাতা জলাভূমি |
মিলন দত্ত |
জলাভূমি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার প্রকাশিত তথ্য ভাণ্ডারে এ রাজ্যের তথ্য নিয়ে বিস্তর ‘গোলমাল’। ওই নথিতে রাজ্যের একমাত্র ‘রামসার’ স্বীকৃত পূর্ব কলকাতা জলাভূমির অস্তিত্বই নেই।
কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক ‘ন্যাশনাল ওয়েটল্যান্ড অ্যাটলাস’ নামে যে বইটি প্রকাশ করেছে, সেটি আসলে একটি রিপোর্ট। ৩৪৪ পৃষ্ঠার ওই রিপোর্ট বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের ওয়েবসাইটেও দেওয়া হয়েছে। সেখানে ঠাঁই হয়নি রাজ্যের একমাত্র রামসার স্বীকৃত জলাভূমির। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের জল ও জলাভূমি উন্নয়ন বিশেষজ্ঞেরা। ক্ষোভ জানিয়েছেন জলাভূমি নিয়ে কর্মরত পরিবেশকর্মীরা। দেশের যে ১৮টি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ জলাভূমির সবিস্তার তথ্য ওই বইয়ে বলা আছে, সেগুলি সুন্দরবনের। সেখানে সুন্দরবনকে রামসার স্বীকৃত জলাভূমি হিসেবে দেখানো হয়েছে। অথচ সুন্দরবন রামসার স্বীকৃতিই পায়নি। এমন হাজারো ভুলে ভরা এ রাজ্যের জলাভূমি নিয়ে যাবতীয় তথ্য।
কেন্দ্রকে রাজ্যের জলাভূমি নিয়ে এই সব তথ্য সরবরাহ করেছে রাজ্য সরকারের ‘ইনস্টিটিউট অফ এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ অ্যান্ড ওয়েটল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট’। যে সংস্থাগুলির সম্মিলিত গবেষণার ফল ওই বই, রাজ্য পরিবেশ দফতরের অধীন ইনস্টিটিউটটি তার অংশীদার। ওই ইনস্টিটিউটের অধীন ‘ইস্ট কলকাতা ওয়েটল্যান্ড অথরিটি’র চিফ নিতাই কুণ্ডু জানান, দেশের সমস্ত জলাভূমির বিষয়ে একটি সম্পূর্ণ তথ্য ভাণ্ডার তৈরি করতে ‘ন্যাশনাল ওয়েটল্যান্ড ইনভেন্টরি অ্যান্ড অ্যাসেসমেন্ট’ নামে একটি প্রকল্প চালায় কেন্দ্রীয় সরকার। ওই প্রকল্পেই তাঁরা কাজটি করেছেন। তথ্যে কোনও গোলমাল থাকার কথা নয়। রাজ্যের যাবতীয় তথ্য তাঁরাই পাঠিয়েছেন বলে জানান নিতাইবাবু।
কিন্তু ‘ন্যাশনাল ওয়েটল্যান্ড অ্যাটলাস’-এ পূর্ব কলকাতা জলাভূমির উল্লেখ না-থাকাকেই যথেষ্ট তথ্যের গোলমাল বলে মনে করছেন জলাভূমি বিশেষজ্ঞ ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ। রাজ্য যোজনা পর্ষদের তদানীন্তন যুগ্ম অধিকর্তা হিসেবে ধ্রুবজ্যোতিবাবু পূর্ব কলকাতা জলাভূমির প্রথম মানচিত্র তৈরি করেন ১৯৮০ সালে। সেই মানচিত্রভুক্ত সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর এলাকাই পরবর্তীকালে পূর্ব কলকাতা জলাভূমি নামে পরিচিত হয়। ২০০২ সালে তা ‘রামসার’ স্বীকৃতি পায়।
পূর্ব কলকাতা জলাভূমির নামোল্লেখ পর্যন্ত না-থাকায় ধ্রুবজ্যোতিবাবু স্বাভাবিক ভাবেই আহত। তিনি ইতিমধ্যেই ওই অ্যাটলাসের নির্মাতা, আমদাবাদের ‘স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার’-এর অধিকর্তা রঙ্গনাথ লাভালগান্ড ও কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশমন্ত্রী জয়রাম রমেশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। তাঁর প্রশ্ন, “জাতীয় জলাভূমি অ্যাটলাসে পূর্ব কলকাতা জলাভূমির অনুপস্থিতি ইচ্ছাকৃত ভুল নাকি বিশেষজ্ঞদের সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত?” পূর্ব কলকাতা জলাভূমির মৎস্যজীবীদের জীবন ও জীবিকার উন্নয়নে কর্মরত ‘সাউথ এশিয়ান ফোরাম ফর এনভায়রনমেন্ট’-এর কর্ণধার দীপায়ন দে বলেন, “পূর্ব কলকাতা জলাভূমি কর্তৃপক্ষের মদতে জলাভূমি এলাকা বেদখল হয়ে যাচ্ছে। তাদের পক্ষে এটি সম্ভব।” তাঁর মতে, এটি পূর্ব কলকাতা জলাভূমি মুছে দেওয়ার চক্রান্ত।
নদী ও ভূজল বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র বলেন, “রাজ্যের জলাভূমি নিয়ে ভুলে ভরা তথ্য ভাণ্ডার তৈরি করা হয়েছে। রাজ্য সরকারেরই একটি প্রতিষ্ঠান তথ্যগুলি কেন্দ্রকে দিয়েছে। ‘অ্যাটলাস’ নাম দেওয়া হলেও সেটি আসলে একটি রিপোর্ট।”
কী ভ্রান্তি আছে ওই তথ্য ভাণ্ডারে? কল্যাণবাবু জানালেন, জলাধার বা ‘ব্যারাজ’-এর হিসেবে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলায় শূন্য দেখানো হয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, তিস্তার গাজোলডোবা জলাধার, মহানন্দার ফুলবাড়ি ব্যারাজ কিংবা জলঢাকার বিন্দু জলাধারের কোনও উল্লেখ নেই কেন? উল্লেখ নেই ফারাক্কা ব্যারাজের। আবার হাওড়ায় একটি জলাধার দেখানো হয়েছে। সেটি কোনটি? কল্যাণবাবুর অভিযোগ, “উপগ্রহ চিত্রের সাহায্যে তৈরি যে মানচিত্র দেওয়া হয়েছে, সেখানে স্থানের নাম না-থাকায় প্রায় কিছুই বোঝা যায় না।” নিতাইবাবু অবশ্য বলেন, “দেশের প্রতিটি রাজ্যের জলাভূমি নিয়ে পৃথক অ্যাটলাস বার করা হয়েছে। সেখানে পূর্ব কলকাতা জলাভূমির সবিস্তার উল্লেখ আছে।” কিন্তু ধ্রুবজ্যোতিবাবু ও কল্যাণবাবুর মনে করেন, জাতীয় অ্যাটলাসেই পূর্ব কলকাতা জলাভূমির উল্লেখ থাকা উচিত ছিল। |
|
|
|
|
|