ধান
জ মহারানির জন্মদিন। মহারানি বলে কথা। বিশাল আয়োজন। রান্না ঘরে হইহই। রাজসভায় রইরই। কানপাতা দায় ভাটদের চিৎকারে। তার সঙ্গে ভাঁড়ারের এটা আগে, ওটা দাও হইহল্লায় পেল্লায় কাণ্ড! অনেক রকম রান্না। অনেক রাঁধুনি, বেঁটে, লম্বা, টিকি আর টাঁকওলা।
বুড়ো মন্ত্রী এই শেষ বয়সে একটু লোভী মতো হয়েছেন। একটু খাই খাই ভাব। তা তিনি রিঠে আর সাজিমাটি দিয়ে হাত ধুয়েটুয়ে তৈরি। ডাক এলেই হয় ভোজনের। অনেক আমন্ত্রিত, রবাহূত-অনাহূত। নাক টেনে গন্ধ শুঁকে বোঝার চেষ্টা লুচি নাকি ভাজা হচ্ছে মালপোয়া? সময় গড়িয়ে চলছে তৈরি হচ্ছেন মহারানি। রাজসভার গনতকার পাঁজি ঘেঁটে বলেছেন দুপুর একটা বেজে তেরো মিনিট সাত সেকেন্ডে শুভ লগ্ন। ঠিক ওই সময়েই মহারানি পরমান্ন মানে পায়েস মুখে তুলবেন।
যথাসময়ে পায়েস এল, ঝকমকে সোনার থালায়। যেন সূর্যের কোলে পূর্ণচন্দ্র! ভুরভূরে মনমাতানো গন্ধ। মহারানি দক্ষিণ-পূর্ব দিকে মুখ করে বসলেন। রাজপুরোহিতের নির্দেশ সে রকমই। মহারানি রুপোর চামচ দিয়ে তুললেন পায়েস। মুখে দেওয়া মাত্র সারা রাজসভা বলে উঠল মহারানি দীর্ঘজীবী হোন। মহারাজের জয়...। দ্বিতীয় বার পায়েস মুখে তুলেই মহারানি নাক কোঁচকালেন, ভুরু ঝাঁকালেন, মুখে বিরক্তি ভাব।
ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য
দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে রাঁধুনি। রান্নাবান্না মনোমত হলেই খুশি হয়ে গিনি মোহর বা সোনার হারটার মিলতে পারে রানিমার কাছ থেকে উপহার হিসেবে। কিন্তু হলটা কী? পায়েসে শর্করা মানে চিনি দিতে ভুল হয়েছে কি? না কি ক্ষীর-খোয়া টক টক? ব্যাপার ভাল ঠেকছে না সিঁটিয়ে রইল রাঁধুনি দলের প্রধান।
মহারানি শব্দ করলেন ‘আঃ’। কোথায় কষ্ট? কী ব্যাপার, চিন্তিত সারা রাজসভা। ‘থুঃ’ করে মুখে থেকে কী যেন ফেললেন মহারানি, হলুদ মতো। তড়িঘড়ি এগিয়ে এলেন মহারাজ, শুধোলেন মহারানিকে, পায়েসে দুর্গন্ধ? না কি অন্য কিছু? মেঝের দিকে আঙুল বাড়ালেন মহারানি। মন্ত্রীমশাই উবু হয়ে বসে গোয়েন্দার মতো তাকালেন মেঝের দিকে, তার পর ফিসফিস করে বললেন, ধান। তখন সারা রাজসভায় সবার মুখে মুখে একটাই কথা ধান!
মহারানি চুপচাপ বসে। চোখে জল। খাওয়া বন্ধ। ঠোঁট কাঁপছে, যেন বাতাসে বাঁশপাতা। মহারাজা হাঁকলেন, সেনাপতি; রাজবৈদ্যকে তলব করো। এলেন রাজবৈদ্য। নাড়ি টিপলেন; হাঁ করালেন মহারানিকে। তার পর মাথা নেড়ে বললেন, ‘নাঃ তেমন কোনও গুরুতর ক্ষত বা ক্ষতি হয়নি। মানকচুর টুকরো গরম ঘিয়ে ভেজে খেলে দু’দিনেই ঠিক হয়ে যাবে।’
সেনাপতি আচমকা বলে ওঠে তদন্ত চাই। কেন ধান মহারানির পায়েসে? ঠিক ঠিক কথাটা মনে ধরল মহারাজের। অতএব ডাক পড়ল, বড়, মেজ, ছোট সব রকম রাঁধুনির। প্রধান রাঁধুনি বললে আজ্ঞে মহারাজ, আমি ক্ষীর, খোয়া, দুধ, কাজু, পেস্তা, কিশমিশ এ সবের তত্ত্ববধানে ছিলাম। মেজ রাঁধুনির বক্তব্য আমি সুগন্ধী চাল ধুয়েটুয়ে তবেই পায়েস চড়িয়েছি। তবে চাল বাছবার দায়িত্বে ছিল জনা তিনেক ছোট রাঁধুনি। আমরা যথেষ্ট যত্ন নিয়েছি চাল বাছতে বলল ছোট রাঁধুনিরা। তবুও যদি রয়ে যায় ধান, তা আমাদের দোষ না। যে চাল সরবরাহ করেছে, দোষটা তারই। চালে ধান থাকবে কেন?
মহারাজ মাথা চুলকে বলেই ফেললেন মনের কথাটা, ‘আচ্ছা মন্ত্রীমশাই, পায়েস তো হয় চাল দিয়ে, এর মধ্যে ধান এল কোন পথে, ধানের কথা ওঠে কেন? ওটা কী?’ মহারাজের অজ্ঞতায় মন্ত্রীমশায় কেশেটেসে গলা পরিষ্কার করে বললেন, ‘এ কথাটার মানে আগামী কাল বোঝাব আমি। একান্তে আপনাকে।’
তার পর দিন মন্ত্রীমশাই এক চাষিকে হাজির করলেন মহারাজের খাস কামরায়। চাষির হাতে এক গোছা ধানের শিষ। মন্ত্রী বললেন মহারাজকে উদ্দেশ্য করে এই দেখুন এ হল এক জন চাষি আর ওর হাতে ওগুলো ধানের শিষ। এই ধানের খোসা বা তুষ ছাড়ালেই চাল পাওয়া যায়। ‘দাঁড়ান দেখাই’, বলেই মন্ত্রী চাষিকে বললেন, ‘মেঝেতে কিছু ধান রগড়ে চাল বের করো তো হে...।’ চাষি ধান রগড়ে চাল বের করে রাজার চোখের সামনে দেখাল তার চেটোয় রাখা চাল। মহারাজ অবাক, শুঁকলেন সুগন্ধ বেশ। বললেন, ‘বাঃ তা হলে এ ভাবে ধান থেকেই চাল হয়? জানা ছিল না!’ তার পর মন্ত্রীকে বললেন, ‘তা হলে মালিকে খবর পাঠান। চাষিকে মাল্যদান করে সংবর্ধনা জানানো হোক...’
চাষি হাত জোড় করে বললেন, ‘মহারাজ, যদি দিতেই হয় তবে মালা নয়; আমাকে এক জোড়া তাগড়াই বলদ আর কিছুটা সরেস জমির বন্দোবস্ত করে দিন, উপকার হবে আমার।’ বেশ তা-ই হবে, বলে মহারাজ গা তুললেন...।
Magazine Rabibasariyo Anandamela


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.