|
|
|
|
এক পশলার জন্য এক নগ্ন নিবেদন |
এক আকাশ অনাবৃষ্টি জন্ম দেয় পুজো, প্রার্থনা, উন্মাদনা, মিথ, মিথ্যা, মিস্ট্রির! |
শীত পেরিয়ে বসন্ত, এসেই বলে যাই যাই, তার পর গ্রীষ্ম আসে, যায় না। আয় বৃষ্টি, হা বৃষ্টি, কোথা বৃষ্টি? আকাশে মেঘ নেই, বুকে ঘনায় আতঙ্ক মাঠ ফাটবে, বুক ফাটবে। এ বার বুঝি, আবার বুঝি দেবতা মুখ ফিরিয়েছেন। গ্রাম কে গ্রাম আছড়ে পড়ে মন্দিরে, থানে, গাছতলায়: জল দাও হে, জল দাও। পুজো দেয়, সওয়া পাঁচ আনা মানত করে, মাঠের মাঝখানে বাটি পুঁতে রাখে, ব্যাঙের বিয়ে দিয়ে দম্পতিকে পুকুরে ছেড়ে দেয়। দেবতা নির্দয়, নির্মম, নির্জল। |
|
অতএব গ্রামের মেয়েরা প্রস্তুত হন। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত্রি নামে, অন্ধকার গভীর হয়, পুরুষরা চার দেওয়ালের মধ্যে প্রবেশ করেন, মেয়েরা খোলা মাঠে জড়ো হন। অঙ্গবস্ত্র খুলে ফেলেন একে একে। শুরু হয় তাঁদের নাচ। প্রথমে ধীর লয়ে, তার পর ক্রমে গতি বাড়ে, দেহের বিভঙ্গে আকাঙ্ক্ষা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। জলের আকাঙ্ক্ষা।
শুধু জলের? দেবরাজ নিশ্চয়ই তা ভাবেন না। তাঁকে খুশি করার জন্যেই তো নিরাবরণ মেয়েদের এই তমসা-নৃত্য। আর কোনও পুরুষ দেখবে না, দেখা বারণ, দেখবেন কেবল বৃষ্টির দেবতা। ইন্দ্র। উর্বশী, রম্ভা, মেনকার নাচে অরুচি ধরে গিয়েছে, এই সাবঅল্টার্ন অপ্সরাদের দর্শন করে যদি সন্তুষ্ট হন, তাঁর আশীর্বাদ ঝরে পড়বে তৃষ্ণার্ত ধরণীতে। বৃষ্টি নামুক বা না নামুক, এ বিশ্বাস বেঁচে থাকে। আরও অনেক বিশ্বাসের মতো। বিশ্বাসদের তো ওটাই ধর্ম।
হ্যাঁ, উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকায়, প্রতিবেশী নেপালেও, হয়তো আরও অনেক গ্রামীণ ভূখণ্ডেও, যুগ যুগ ধরে বৃষ্টি নামানোর জন্য কৃষিজীবী মেয়েরা এই লোকাচার পালন করে চলেছেন। অনাহারে, অর্ধাহারে, উদয়-অস্ত হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পরে নাচতে যেতে তাঁদের খুব ভাল লাগে না হয়তো, মনটা খুব রোমান্টিক হয়ে ওঠে না হয়তো, কিন্তু কী আর করা? ইন্দ্রদেব তো পুরুষ! |
|
|
|
|
|