বৃষ্টি না এলে তো আনতে হবে
গান-এর সেই সিনটা মনে আছে, মাটির হাল ফুটিফাটা, দিগন্ত জুড়ে কোথাও মেঘের ম নেই, গ্রামের সব্বাই অপেক্ষায়, বৃষ্টির, হঠাৎ স্ক্রিন কালো করে ‘বজ্র বিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিপাত’ এবং আমির খান + গ্রামবাসীর নাচ ও গান। অনেক কাল পর বৃষ্টি এলে যেমন নাচ গান হয়, না হলেও তো হয়।
টানা এক বছর বৃষ্টি না হলে, আফ্রিকার বান্টু’রা কিছু ‘শামান’ বা পুরোহিত ডেকে, তাঁদের পাহাড়ে যেতে বলেন। এই ‘শামান’রা পাহাড়ে উঠে কিছু মন্ত্র পড়েন, তার পর সেখানে একটা বড় ধরনের আগুন জ্বালিয়ে দেন। এ বার শুরু হয় বান্টুদের প্রার্থনা। তাদের বিশ্বাস, ওই আগুনের ঘন কালো ধোঁয়া আরও কালো মেঘেদের টেনে আনবে। বৃষ্টির অপেক্ষা ওরা করে নিরন্তর নেচে-গেয়ে।
মায়া সভ্যতায় ভাবা হত যে আকাশ যখন কালো হয়ে বৃষ্টি রূপে মাটিতে আছড়ে পড়ছে, তখন ঘন মেঘের আড়ালে আসলে দাপাদাপি চালায় অসম্ভব ভাল দেখতে, চঞ্চল, যৌবনের শিখরে থাকা কিছু দেবতা। বৃষ্টি, তাঁদেরই উল্লাসের এক উপায়। কিন্তু অনেক দিন ধরে যখন বৃষ্টি হয় না, তখন এঁদের যৌবনও ভাসান যায়। এঁরা কুৎসিত দেখতে থুরথুরে বুড়ো হয়ে যায়। কোনও মতে এঁরা তখন সমুদ্রের কাছে পৌঁছতে চায়। সমুদ্রের জল এঁদের সেই পুরনো যৌবন ফিরিয়ে দেয়। এঁরা হাওয়ার টানে আকাশে উঠে কালো মেঘের আড়ালে দাপাদাপি শুরু করে আবার।
এই সভ্যতারই আর এক প্রান্তে বৃষ্টিকে আহ্বান করা হত একটু অন্য ভাবে। কিছু কমবয়সি ছেলেমেয়েকে কুয়োয় ফেলে ডুবিয়ে দেওয়া হত। এই ভাবেই নাকি ওদের আত্মা আকাশে উড়ে ক্রমে মিশে যাবে দেবতার স্তরে। তার পর বৃষ্টির দেবতাকে আর্জি জানিয়ে, মেঘেদের পথ চিনিয়ে ওরাই আনবে চেনা ঘরের চালে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় সোথো ভাষায় কথা বলে যে সব জনজাতি, তারা বৃষ্টি না হলে সব দোষ চাপায় নিজেদের পূর্বপুরুষদের উপর, বিশেষত গ্রামের মোড়লের পূর্বপুরুষের উপর। যদিও ওদের আলাদা এক বৃষ্টির দেবতা আছে। ওরা মনে করে যে বৃষ্টি না হলে এই বাপ-ঠাকুর্দার আত্মাই সেই দেবতার কাছে দরবার করে গ্রামে বৃষ্টি নামাবে। কিন্তু তাতেও যদি বৃষ্টি না আসে? তবে একটা কালো ষাঁড় (মেঘের প্রতীক) বলি দেওয়া হবে আর পূর্বপুরুষদের সমাধিতে লাঠির ঘা দেওয়া হবে, ঠিক ভাবে কর্তব্য না পালন করার জন্যে।
আফ্রিকার জুলুদের আবার কিছু অভিজ্ঞ ‘হেভেন-হার্ডার’ থাকে, যাদের কাজ বৃষ্টি বা বিদ্যুতের সঙ্গে বোঝাপড়া করা। বৃষ্টি না এলে যেমন এরা নানা পুজো করে বৃষ্টি ডেকে আনে, তেমনই বেশি ঝড়-বৃষ্টি হলে এরাই ঢাল তরোয়াল নিয়ে সেই ঝড় তাড়াতেও যায়।
লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকায় এমন কিছু মানুষ আছেন যাঁরা ইচ্ছে মতো বৃষ্টি আনতে পারেন। এঁদের বলা হয় ‘রেনম্যান’। এমন নয় যে বৃষ্টি এঁদের পিছন পিছন যায় কিন্তু এঁরা যদি বোঝেন, বৃষ্টি প্রয়োজন, তবে তাঁরা সেখানে বৃষ্টি আনতে পারেন। এই কাজে এঁদের সাহায্য করেন কিছু ‘গ্র্যান্ডফাদার’। এই ‘গ্র্যান্ডফাদার’দের দেখা যায় না, এদের অনুভব করতে হয়। আর অনুভব তাঁরাই করতে পারেন, যাঁরা নিঃসংকোচে এদের ভালবাসতে পারেন। ‘গ্র্যান্ডফাদার’রা মানুষ ও আবহাওয়ার মধ্যের এক রকম মিডিয়াম। রেনম্যান এদের মারফত দেবতাদের কাছে আর্জি জানান, এবং সেই যোগ ঠিক ভাবে খাটলে কাঙ্খিত ফল পাওয়া যায়।
Previous Item Utsav Next Item



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.