|
|
|
|
2H2+O2-ভগবান=আকাশে মেকি বৃষ্টি |
চিন তো শুনেছি বৃষ্টি তৈরিও করতে পারে, শুষেও নিতে পারে। কিন্তু আর্টিফিশিয়াল রেন নিয়ে কাজকম্ম বিশ্ব জুড়ে
অনেক আগেই শুরু হয়েছে। উডস্টক-এও নাকি দু-চার ফোঁটা মিছিমিছি বৃষ্টি হয়েছিল। অবশ্য বাংলার
আকাশ
এখন নির্ঘাত ফুটো= মনে অবধি ডিপ্রেশন! নির্মল পাত্র |
জুলাই ১৯৪৬। বেশ গুমোট। জেনারেল ইলেকট্রিক কোম্পানির গবেষণাগারে একটা ডিপ ফ্রিজার-এর দরজা খুলে খুব বড় বড় নিশ্বাস ছাড়ছিলেন ভিনসেন্ট শেফার। মার্কিন বিজ্ঞানী। মেঘ তৈরি করতে চান তিনি। হিমেল হাওয়ায় নিশ্বাস জমে দিব্যি কুয়াশা তৈরি হয়, আমি চলি, সাথে সাথে সেও চলে আসে, তা হলে ফ্রিজার-এর জমাটি ঠান্ডায় কেন মেঘ তৈরি হবে না? কিন্তু বিজ্ঞানী হাঁপিয়ে ওঠেন, কিছুই হয় না। হঠাৎ এক বুদ্ধি এল মাথায়, কিছুটা ‘শুকনো বরফ’ (ড্রাই আইস - আসলে ঠান্ডায় জমানো কার্বন ডাই অক্সাইড) এনে রাখলেন ফ্রিজার-এর মধ্যে, হিমঘর আরও হিম হল। আবার জোড়ে জোড়ে শ্বাস ছাড়লেন। এবং, কী কান্ড, একটা নীলচে কুয়াশা তৈরি হল, প্রায় মেঘই তো, তার পর সেই মেঘের গায়ে ফ্রিজার-এর বাতি থেকে আলো পড়ে অদ্ভুত সব রং, শেফার বুঝলেন বরফের ক্রিস্টাল তৈরি হয়েছে, তা থেকেই রঙের বিচ্ছুরণ।
চার মাসের মধ্যে শেফারের গবেষণা আকাশে উড়ল। এরোপ্লেনে এক খন্ড মেঘের পিছনে
ষাট মাইল ধাওয়া করে তার মধ্যে ছ’পাউন্ড শুকনো বরফ ফেললেন তিনি, সেই মেঘ থেকে তুষারপাত হল।
তুষারপাত যদি বানানো যায়, বৃষ্টি নয় কেন? নিশ্চয়ই, কেন নয়? মেঘ আছে, কিন্তু বৃষ্টি হচ্ছে না? মেঘের তাপমাত্রা হঠাৎ কমিয়ে দাও, সে আর তার জল ধরে রাখতে পারল না। ড্রাই আইস দিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছিল, পরে অন্য কৌশল আবিষ্কৃত হয়েছে। সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়েছে সিলভার আয়োডাইড এই বস্তুটি মেঘের মধ্যে ছড়িয়ে দিলেই আয় বৃষ্টি ঝেঁপে। এর আর এক নাম ক্লাউড সিডিং। |
|
মেঘ-জমিনে বীজ বোনা এত সহজ না কি? খরচ তো আছেই, কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা, সত্যি সত্যিই কি মেঘ জমিয়ে বৃষ্টি নামানো যায়? উত্তরটা এখনও নিশ্চিত নয়। অনেক মেঘ ধরে সিলভার আয়োডাইড চার্জ করে বৃষ্টি নামানো হয়েছে, আবার অনেক মেঘকে কাঁদানো যায়নি। প্রশ্ন থেকে গেছে যে মেঘ বৃষ্টি দিয়েছে সে কি এমনিই ঝরে পড়ত না? আপাতত এইটুকু মেনে নেওয়া যেতে পারে যে, আকাশে যথেষ্ট মেঘ থাকলে একটা এলাকায় কিছুটা বৃষ্টি অন্তত আগে নামিয়ে দেওয়া যায়, বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা বাড়িয়ে দেওয়াও সম্ভব।
তেমনটা অনেক দিন ধরেই হয়েছে। শুরু আমেরিকায়। এবং, সেই ভূখণ্ডে যা অনিবার্য, বেশ কয়েকটি বড় মাপের কোম্পানি তৈরি হয়েছে যারা মোটা টাকা নিয়ে বৃষ্টি নামানোর দায়িত্ব নেয়। বড় চাষিরা এই সব কোম্পানির খরিদ্দার। চার দশক আগে অবশ্য এই পরিষেবার জন্য এক মূর্তি দেখেছিল দুনিয়া। ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন বাহিনী মেঘের রাজ্যে কারসাজি করেছিল, যাতে কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে বর্ষা চলতেই থাকে, রাস্তা জলকাদায় দুর্গম হয়, ভিয়েতমিনদের সাপ্লাই লাইন বিপর্যস্ত হয়। সে অভিযানের নাম ‘অপারেশন পপেই’। এক বার কিছু বৃষ্টি মার্কিন বাহিনীর ঘাড়ে এসে পড়ে, হয়রানির একশেষ। তা, দু’একখান সেমসাইড তো ওয়ার্ল্ড কাপেও হয়। মার্কিন সেনার নামে অপবাদ রটেছিল ১৯৬৯-এর উডস্টক ফেস্টিভাল-এর সময়েও, তারা নাকি সেই ‘মুক্তির উৎসব’ পণ্ড করে দেওয়ার জন্যে মেঘ নিয়ে এটা-সেটা কৌশল করছিল। নিছক রটনা? হবে। তবে ঘটনা হল, উৎসবের চার দিন বৃষ্টির বিরাম ছিল না। |
|
কানাডা থেকে অস্ট্রেলিয়া - বৃষ্টি তৈরির চেষ্টা চলেছে অনেক দেশেই। একটা হিসেব অনুসারে অন্তত দু’ডজন। তবে এ ব্যাপারে ইদানীং সবচেয়ে নাম কিনেছে, আজ্ঞে হ্যাঁ, চিন। সব ব্যাপারেই ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী, মেঘের লড়াইয়েই বা সে ছাড়বে কেন? ২০০৮ অলিম্পিকের আগে বেজিংয়ের বাতাসে দূষণ কমাতে বৃষ্টি এনেছিল সর্বশক্তিমান পার্টি। সংশয়বাদীরা অবশ্য বলেছিলেন, বৃষ্টি এমনিতেই হত, কিন্তু সে তো বুর্জোয়া অপপ্রচার! পরের বছরেই খরার মোকাবিলা করতে আবার নানা এলাকায় সিলভার আয়োডাইড। ফল: তুষারপাত। বেজিংয়ে অবশ্য বাড়াবাড়ি রকমের বরফ পড়ে বেশ কয়েক দিন রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যায়। ওই, সেমসাইড।
চিন টানলে ভারত আসে। তবে বেশি না, কম। মহারাষ্ট্রে মার্কিন সহযোগিতায় কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর কিছু চেষ্টা হয়েছে, চেষ্টা হয়েছে অন্ধপ্রদেশও। কিন্তু সবই, যাকে বলে, পরীক্ষামূলক ভাবে। তার চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে গেছে এই অঞ্চলের আর এক দেশ তাইল্যান্ড। দেশের রাজা চল্লিশ বছর ধরে কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যাপারে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেক টাকার ‘রয়াল রেনমেকিং প্রজেক্ট’ তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে, উপকারী আবিষ্কারের স্বীকৃতি হিসেবে আন্তর্জাতিক পুরষ্কারও পেয়েছেন রাজা।
আপাতত ভুবনগ্রামের এ দিকে মেঘেরা একটু বেশি মাত্রায় সজল চেরাপুঞ্জিকে কলকাতা এক ফালি ‘কিউমুলোনিম্বাস’ ধার দিতে পারে স্বচ্ছন্দে। কিন্তু ‘মনসুন’ নামক বস্তুটির চরিত্র দেবা ন জানন্তি, কুতো মনুষ্যাঃ? তাই কৃত্রিম বৃষ্টির কলাকৌশল জেনে রাখা ভাল, কখন কাজে লেগে যাবে। কেবল একটু সতর্ক থাকবেন, চুরির দায়ে ধরা পড়তে না হয়। হ্যাঁ, চিন সম্পর্কে প্রতিবেশী নানা দেশের অভিযোগ শোনা যায় মাঝে মাঝেই সে নাকি ওদের মেঘ থেকে বৃষ্টি চুরি করে নিয়েছে! |
|
|
|
|
|