|
|
|
|
অভিযোগ পরিজনদের |
ঝুঁকির কথা ‘না-জানিয়ে’ চিকিৎসা, মৃত্যু রোগিণীর |
সোমা মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
এর জেরে রোগীর জীবনহানি পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাই সেই চিকিৎসা পদ্ধতির ঝুঁকির কথা রোগীর পরিজনকে বিশদে জানিয়ে রাখাটা চিকিৎসকের প্রাথমিক কর্তব্য।
অথচ বাড়ির লোককে বিন্দুবিসর্গ না-জানিয়ে এক রোগিণীর উপরে সেই পদ্ধতিই প্রয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠল। এবং ইআরসিপি (এন্ডোস্কোপিক রেট্রোগ্রেড কোলানজিওপ্যাংক্রিয়াটোগ্রাফি) নামের প্রক্রিয়াটির পরে রুমা চক্রবর্তী নামে ওই প্রৌঢ়ার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তুললেন পরিজনেরা। তাঁরা স্বাস্থ্য দফতর এবং মেডিক্যাল কাউন্সিলের দ্বারস্থ হয়েছেন। ওঁদের প্রশ্ন, চিকিৎসা সংক্রান্ত এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাড়ির লোকের জানার অধিকার কেন থাকবে না?
কী হয়েছিল রুমাদেবীর?
পারিবারিক-সূত্রের খবর: প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, মহিলার পিত্তনালীতে কৃমি হয়েছে। তাঁরা আশ্বাস দিয়েছিলেন, ইআরসিপি-র সাহায্য নিলে সমস্যা মিটে যাবে। কিন্তু অভিযোগ, প্রক্রিয়াটির পরেই রুমাদেবী প্যাংক্রিয়াটাইটিসে আক্রান্ত হন, ডিওডোনাম ফুটো হয়ে যায়। যার জেরে সল্টলেকের এক বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান ৫১ বছরের ওই মহিলা। আত্মীয়দের অভিযোগ, ইআরসিপি-র পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তাঁদের কিছুই জানানো হয়নি। জানলে তাঁরা রাজি হতেন না। |
রুমা চক্রবর্তী |
আত্মীয়েরা জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচারের জন্য রুমাদেবীকে প্রথমে বাইপাসের এক নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছিল। পরে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক বলেন, ‘ওপেন’ না-করে তিনি ইআরসিপি করতে চান, যে জন্য জন্য সল্টলেকের বেসরকারি হাসপাতালে রোগিণীকে এক বেলার জন্য ভর্তি করতে হবে। কিন্তু ইআরসিপি-পরবর্তী জটিলতার কারণে ২৪ দিন ওখানেই ভর্তি ছিলেন রুমাদেবী। বিল দাঁড়িয়েছিল প্রায় দশ লক্ষ টাকা! |
|
রুমাদেবীর জামাই প্রসেনজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, “ইআরসিপি করার পরেই সার্জেন আমাদের জানান, ওটা শেষ করা যায়নি। দু’দিন বাদে আবার করতে হবে। আমরা ওঁকে বাইপাসের নার্সিংহোমে ফিরিয়ে নিয়ে যাই। কিন্তু সেখানে অবস্থা খারাপ হতে থাকায় ওঁকে ভেন্টিলেশনে রাখতে হয়। ডাক্তারবাবু তখন বললেন, খুব তাড়াতাড়ি আর একটা অপারেশন দরকার। তাই ওঁকে আবার সল্টলেকের হাসপাতালে ভর্তি করতে বলেন। তবে সেই অপারেশনেও লাভ হল না। চব্বিশ দিন হাসপাতালে থাকার পরে উনি মারা গেলেন।”
মৃত্যুর কারণ কী?
রুমাদেবীর ডেথ সার্টিফিকেটে ‘পোস্ট ইআরসিপি প্যাংক্রিয়াটাইটিস’-এর উল্লেখ রয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, ইআরসিপি-র এ হেন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কথা ডাক্তার তাঁদের জানিয়েছেন বিপদ ঘটে যাওয়ার পরে। প্রসেনজিৎবাবুর কথায়, “ওটি থেকে বেরিয়েই সার্জন বুঝতে পেরেছিলেন যে, ভুল করে ফেলেছেন। তাই টাকার কথাও তোলেননি!” উল্লেখ্য, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ইআরসিপি-র খরচ ১২-১৫ হাজার টাকা।
রুমাদেবীর ইআরসিপি করেছিলেন সুদীপ্ত ঘোষ। পরের অস্ত্রোপচারটি করেন সন্দীপ রায়। দুই শল্য চিকিৎসকের বিরুদ্ধেই স্বাস্থ্য দফতর ও মেডিক্যাল কাউন্সিলে অভিযোগ দায়ের করেছেন রুমাদেবীর আত্মীয়েরা। ওই চিকিৎসকেরা কী বলছেন?
সুদীপ্তবাবুর ব্যাখ্যা, “পেট কেটে অপারেশন হলে আরও জটিলতা দেখা দিতে পারত। তাই ইআরসিপি করেছি। একশো জনে তিন-চার জনের এমন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়। আমরা সব চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তা কাজে লাগল না।” সন্দীপবাবু বলেন, “ইআরসিপি-র পরে এই ধরনের জটিলতা নতুন কিছু নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা সারিয়েও ফেলা যায়। এ ক্ষেত্রেও আমরা চেষ্টা করেছিলাম। দুর্ভাগ্য, চেষ্টাটা সার্থক হয়নি।”
পিত্তনালীতে পাথর বা এমন বিভিন্ন সমস্যায় পেট কেটে অস্ত্রোপচারের বদলে ইআরসিপি-র সাহায্য নিলে রোগমুক্তি ঘটতে পারে। আধুনিক প্রযুক্তির এবং সামান্য সময়ের এই প্রক্রিয়ায় হাসপাতালে ভর্তি থাকারও দরকার পড়ে না। যদিও এর কিছু বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে। যেমন?
গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট গোপালকৃষ্ণ ঢালি বলেন, “রুমাদেবীর ঠিক কী হয়েছিল, জানি না। তবে ইআরসিপি করার পরে প্যাংক্রিয়াটাইটিস কিংবা ডিওডোনাম ফুটো হওয়ার ভয় থাকে। কখনও জীবনহানিও ঘটতে পারে। সাধারণত ইআরসিপি-র প্রয়োজন হলে আমরা বাড়ির লোককে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলি। সব জেনেশুনে তাঁরা রাজি হলেই এটা করা হয়।” ইআরসিপি-র আগে রোগীর রক্তচাপ-ডায়াবিটিস রয়েছে কি না, শ্বাসকষ্ট হয় কি না, এ সবও জেনে নেওয়া জরুরি বলে জানিয়েছেন তিনি। |
|
|
|
|
|