কর্মশালায় তিরস্কার যক্ষ্মারোগীর বুকে স্টেথো
বসিয়ে আদৌ দেখেন কি
ক্ষ্মারোগীরা এলে আপনারা তাঁদের শারীরিক অসুবিধার কথা ধৈর্য ধরে শোনেন কি?
শ্রোতাদের মধ্য থেকে উত্তর নেই।
“না। শোনেন না,” ক্ষোভের সুরে জবাব দিলেন প্রশ্নকর্তাই। তাঁর পরের প্রশ্ন আরও ঝাঁঝালো।
রোগীর শরীরে একটু-আধটু হাত দিয়ে দেখেন কি আপনারা? বুকে স্টেথো ঠেকিয়ে আদৌ দেখেন?
শ্রোতারা ফের নিরুত্তর।
“না। সেটুকু দেখারও প্রয়োজন মনে করেন না আপনারা,” রীতিমতো খেদের সঙ্গে বললেন প্রশ্নকর্তাই।
শুক্রবার স্বাস্থ্য ভবনে এই সব প্রশ্ন তোলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা শুভময় দত্তচৌধুরী নিজেই। আর যাঁদের উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, তাঁরা হলেন বিভিন্ন জেলার যক্ষ্মা অফিসার। যক্ষ্মা রোগ নির্মূল না-হওয়ার দায় জেলায় জেলায় যক্ষ্মা অফিসারদের উপরেই চাপিয়ে দেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা। ওই অফিসারদের ডেকে এনে রীতিমতো ধমক দেন তিনি। ভর্ৎসনার সুরে শুভময়বাবু এ দিন যক্ষ্মা চিকিৎসকদের বলেন, “আসলে আপনাদের ব্যবহার, আপনাদের দেহের ভঙ্গিমাই এমন থাকে যে, অধস্তন কর্মচারীরা পর্যন্ত কাজ করার উৎসাহ পান না। আর সরকারি ডাক্তার এবং সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি অবিশ্বাস, অশ্রদ্ধা তৈরি হয় রোগীদের।” তিনি জানান, এই কারণেই যক্ষ্মারোগীরা ‘ডট’ (ডিরেক্ট অবজারভেশন ট্রিটমেন্ট)-এর ওষুধ না-খেয়ে প্রাইভেট প্র্যাক্টিশনারদের কাছে ছুটে যান। কিংবা মাঝপথে ওষুধ খাওয়াই ছেড়ে দেন।
যক্ষ্মা অফিসারদের উদ্দেশে স্বাস্থ্যকর্তার হুঁশিয়ারি, “এ ভাবে চলবে না। ব্যবহার ঠিক করুন। নিজেদের বদলান। মানবিক হোন। রোগীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলুন। যোগাযোগ বাড়ান। নইলে রাজ্যে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ অবাস্তব পরিকল্পনা হয়েই থেকে যাবে।
এ দিন জেলা থেকে ওই অফিসারদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল রোগীদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার শেখানোর জন্য। আয়োজক ছিল যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের সহযোগী সংস্থা জার্মান লেপ্রসি অ্যান্ড টিউবারকিউলোসিস রিলিফ অ্যাসোসিয়েশন। ওই কর্মশালায় জানা গেল, চিকিৎসকদের দুর্ব্যবহারে বিরক্ত যক্ষ্মারোগীরা ওষুধ প্রত্যাখ্যান করছেন। ওষুধে ছেদ পড়ায় পরোক্ষে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মারোগীর সংখ্যা বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিকর্তার বিশ্লেষণ, “রোগীর প্রতি চিকিৎসকদের ব্যবহার কেমন হবে, আচরণবিধির বড় অংশ জুড়ে তা বলা হয়েছে। রোগীর সঙ্গে ডাক্তার কী আচরণ করবেন, সেটা চিকিৎসার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অনেক চিকিৎসক কোনও দিন আচরণবিধির সেই অংশটা খুলেও দেখেননি। এটাই যক্ষ্মা চিকিৎসার পথে বড় প্রতিবন্ধকতা।”
বিভিন্ন জেলা থেকে আসা এক-এক জন যক্ষ্মা চিকিৎসককে দাঁড় করিয়ে বকুনি দেন স্বাস্থ্যকর্তারা। সেই জেলার রিপোর্ট পড়ে শোনান। স্বাস্থ্যকর্তারা মন্তব্য করেন, “যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের মান খুব ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। সব খবর পাচ্ছি আমরা। এর পরে কিন্তু লিখিত জবাবদিহি করতে হবে।” তাঁরা চিকিৎসকদের পরামর্শ দেন: রোগীর জায়গায় নিজেকে বসিয়ে দেখুন। যদি অসুস্থ হয়ে ডাক্তারের কাছে যান আর ডাক্তার আপনার কোনও কথা না-শুনে দায়সারা ভাবে দেখে ছেড়ে দেন, কেমন লাগবে আপনাদের?
সপ্তাহখানেক আগেই টাউন হলে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের চিকিৎসকদের জমায়েতে একই ভাবে ‘মানবিক’ হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ধৈর্য ধরে রোগীদের কথা শুনতে, একটু গায়ে হাত দিয়ে দেখতে বলেছিলেন। এ দিন স্বাস্থ্যকর্তাদের গলায় ছিল সেই কথারই প্রতিধ্বনি।
রাজ্য যক্ষ্মা অফিসার শ্যামাপদ বসাক বলেন, “যক্ষ্মা নিবারণে যে এত টাকা খরচ করা হচ্ছে, তার ফল বোঝা যাচ্ছে না কেন? কেন যক্ষ্মারোগীরা বেসরকারি ডাক্তারদের কাছে যাচ্ছেন বলতে পারেন?” শ্যামাপদবাবু নিজেই জবাব দেন: কারণ আপনাদের উপরে তাঁরা আস্থা হারাচ্ছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোগী এসে দাঁড়িয়ে আছেন, চিকিৎসক নেই। শেষ পর্যন্ত ডাক্তার নিজে না-এসে জুনিয়রদের পাঠিয়ে দিচ্ছেন। রোগীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন। সেই রাগ গিয়ে পড়ছে বাড়িতে ওষুধ খাওয়াতে আসা স্বাস্থ্যকর্মীদের উপরে। তাঁদের দেওয়া ওষুধ আর খাচ্ছেন না রোগীরা।
তিরস্কারের সুরে যক্ষ্মা অফিসার বলেন, “মানবিক না-হলে শত পরিকল্পনা-কর্মশালা করেও কিচ্ছু হবে না। সতর্ক হোন আপনারা।”
কিন্তু এর পরেও জেলার হাল সতিই ফিরবে কি না, সেই ব্যাপারে কোনও গ্যারান্টি দিতে পারেননি এ দিন কর্মশালায় হাজির স্বাস্থ্যকর্তারা।
Previous Story Swasth Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.