|
|
|
|
চিত্তরঞ্জন শিশু হাসপাতাল |
ডাক্তারের রাজকীয় আবাস তুলে বাড়বে শয্যা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সরকারি শিশু হাসপাতালের তিনতলায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার বর্গফুট জায়গা দখল করে বসবাস করছেন সেখানকারই এক অ্যানাস্থেটিস্ট। আর হাসপাতালে জায়গার অভাবে শয্যা না-পেয়ে ফিরে যাচ্ছে গুরুতর অসুস্থ শিশু। ওই সাড়ে তিন হাজার বর্গফুটে তো দূরের কথা, হাসপাতালের ওই গোটা ভবনেই কোনও চিকিৎসকের বসবাস করার কথা নয়। তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট রয়েছে অন্য বাড়ি। সরকারি নিয়মও সেটাই বলছে। কিন্তু নিয়মকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বহাল তবিয়তে বাইশ বছর ধরে বসবাস করে যাচ্ছেন সেই অ্যানাস্থেটিস্ট!
অভিযোগ আগেই ছিল। শুক্রবার সরেজমিন তা দেখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং তৎক্ষণাৎ নির্দেশ দিলেন, অবিলম্বে কোয়ার্টার্স তুলে দিয়ে ওই জায়গাতেই শিশুদের জন্য ৩০টি শয্যা পাততে হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও ইতিমধ্যে ওই চিকিৎসককে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘বিশেষ সুবিধা’ ছেড়ে এ বার থেকে তাঁকে ডাক্তারদের জন্য নির্ধারিত কোয়ার্টার্সে অন্য চিকিৎসকদের সঙ্গেই থাকতে হবে। |
|
এই কোয়ার্টার্স ঘিরেই বিতর্ক। শুক্রবার। সুদীপ আচার্য |
রোজিনা খাতুন নামে ওই চিকিৎসক প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিমের স্ত্রী। গত ১৩ জুন টাউন হলে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্তাদের বৈঠকে চিত্তরঞ্জন শিশু হাসপাতালের অধ্যক্ষা মালা ভট্টাচার্য হাসপাতালে জায়গার অভাবের কথা তুলেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই সমস্যার বিহিত চান তিনি। সেই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী নিয়ম-বহির্ভূত ভাবে হাসপাতালে বিশাল জায়গা দখল করে কিছু চিকিৎসকের বসবাসের কথা তুলে সমালোচনা করেন। নাম না-করেই সে দিন মহম্মদ সেলিমের স্ত্রী রোজিনা খাতুনের প্রতি ইঙ্গিত করে মমতা বলেন, “সেই চিকিৎসক যত বড় রাজনৈতিক দলেরই হোন না কেন, শিশুদের জায়গা দখল করে থাকার জন্য মানুষ তাঁকে ক্ষমা করবে না।” কার্যত তার পরেই স্বাস্থ্য দফতর রোজিনা খাতুনের কোয়ার্টার্স সংক্রান্ত পুরনো ফাইল খুঁজে বার করার নির্দেশ দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
চিত্তরঞ্জন শিশু হাসপাতালের দু’টি অংশ। একটি শিশু সদন ও একটি সেবা সদন। শিশু সদনের তিনতলায় রোজিনা খাতুনের প্রায় সাড়ে তিন হাজার বর্গফুটের কোয়ার্টার্স। অথচ, সরকারি নিয়ম বলছে, ওই ভবনে কোনও চিকিৎসক বসবাস করতে পারেন না। ভবনের একতলা ও দোতলায় শিশুদের ওয়ার্ড ও ইমার্জেন্সি রয়েছে। তিনতলায় রয়েছে ‘অন ডিউটি’ চিকিৎসকদের ডিউটি রুম। ওই তিনতলারই একটা বিশাল অংশে এক রকম নিয়ম ভেঙেই ১৯৮৯ সালে স্বাস্থ্য দফতর থেকে একটি নির্দেশ জারি করে রোজিনা খাতুনকে সপরিবার থাকতে দেওয়া হয়। সেই সময়ে অন্য কোনও চিকিৎসক হাসপাতালে থাকতেই পারতেন না, কারণ ডক্টরস্ কোয়ার্টার্স তখন তৈরিই হয়নি। তা হয়েছে অনেক পরে, ২০০১ সালে। কিন্তু তখনও ওই চিকিৎসককে সেখানে উঠে যেতে বলা হয়নি।
কেন নিয়ম ভেঙে তিনি একা অতটা জায়গা নিয়ে থাকবেন, সে ব্যাপারে বহু বার হাসপাতালের চিকিৎসকেরাই প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু ফল হয়নি। শুক্রবার হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে মমতা সোজা ওই চিকিৎসকের কোয়ার্টার্সে উঠে যান। সেখানে দরজার বাইরে রোজিনা খাতুন ও তাঁর স্বামী মহম্মদ সেলিমের নাম লেখা ছিল। সেলিম সেখানে থাকেন কি না, মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান। বাড়িতে কেউ ছিলেন না বলে তিনি ভিতরে ঢুকতে পারেননি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, ৩০ জুন পর্যন্ত রোজিনা ছুটিতে থাকবেন। |
|
হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে মানুষের মাঝে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার। অশোক মজুমদার |
পরে হাসপাতালের সুপার আশিস মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, শুধু যে আইন ভেঙে ওই অ্যানাস্থেটিস্টকে ওখানে থাকতে দেওয়া হয়েছে তা-ই নয়, সরকারি নির্দেশে যা ছিল, তার থেকে অনেক বেশি জায়গা নিয়ে তিনি রয়েছেন। নির্দেশ অনুযায়ী, তিনটি বড় ঘর ও একটি ছোট ঘর প্রাপ্য ওই চিকিৎসকের। সেই জায়গায় তিনি তিনটি বড় ঘর, একটি ছোট ঘর, একটি করিডর ও একটি ওপেন টেরাস নিয়ে থাকেন। আশিসবাবুর কথায়, “আমরা রোজিনা খাতুনকে ডক্টরস্ কোয়ার্টার্সে উঠে যেতে বলেছি। হাসপাতালে জায়গার অভাব। সেখানে অত বড় একটা অংশ আটকে রাখলে সমস্যা হচ্ছে। ওই জায়গায় ৩০টি শয্যা পাতা হবে। কিছু দিনের মধ্যে তাঁকে লিখিত নির্দেশও দেওয়া হবে।”
বহু বার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও রোজিনা খাতুন বা মহম্মদ সেলিমের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। গভীর রাত পর্যন্ত দু’জনের মোবাইলই বন্ধ। আর পূর্ববর্তী বাম সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “আমি মন্ত্রী হওয়ার আগেও ওখানে চিকিৎসকেরা থাকতেন। চিরকালই থেকেছেন। তাতে অসুবিধার কী আছে?” অসুবিধা ওই চিকিৎসকের থাকার জন্য নয়, তিনি যতটা অংশ নিয়ে আছেন, সেই অতিরিক্ত আয়তন নিয়ে। এ কথা বলা হলে সূর্যকান্তবাবু উত্তর দেন, “কত জায়গা-টায়গা অত না-দেখে বলতে পারব না। রোজিনা এবং মহম্মদ সেলিমের সঙ্গেও কথা বলতে হবে।” |
|
|
|
|
|