‘মাননীয় প্রধান বিচারপতি, কলকাতা হাইকোর্ট।
আমার নাম অভিজিৎ। বর্তমানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ পাঠরত। আমি এক যৌনকর্মীর সন্তান। আমার মতো এমন প্রায় ১০০ জন যৌনকর্মীর সন্তানের পড়াশোনা পুলিশ ও নিম্ন আদালতের নির্দেশের
জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাই আমি আপনার শরণাপন্ন। ওই শিক্ষার্থীদের স্কুলের জীবন ফিরিয়ে দিন।’
হাইকোর্টে দায়ের হওয়া একটি জনস্বার্থের মামলার আবেদন শুরু হয়েছে এ ভাবে। শুক্রবার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জে এন পটেল ও বিচারপতি অসীম রায়ের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটির শুনানি হয়। শুনানির শুরুতেই প্রধান বিচারপতি বলেন, ওই পড়ুয়াদের স্কুলে ফেরত পাঠাতেই হবে। যৌনকর্মী হওয়া অপরাধ নয়। যে-দারিদ্র বা অন্য ধরনের যে-পরিস্থিতি ওই জীবনে যেতে বাধ্য করায়, তা অত্যন্ত বেদনার। প্রধান বিচারপতি বলেন, তিনি আবেদনকারীর সহমর্মী। তিনি ওই পড়ুয়াদের পুনর্বাসন চান। এ ব্যাপারে তিনি ওই পড়ুয়াদের মায়েদের সঙ্গে কথা বলার জন্য আইনজীবী অরুণাভ ঘোষকে নির্দেশ দেন। ওই মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে অরুণাভবাবু আদালতকে জানাবেন, লেখাপড়ার স্বার্থে তাঁরা ছেলেমেয়েদের হোমে রাখতে রাজি কি না।
আইনজীবী অরুণাভবাবু আদালতে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার আইন করে সব শিশু ও কিশোরকে শিক্ষার অধিকার দিয়েছে। কিন্তু যৌনকর্মীর সন্তান হলে তাদের যেন বঞ্চিত করা যায়, এমন মনোভাব দেখাচ্ছে পুলিশ ও জেলা আদালত। আবেদনপত্রে বলা হয়, নদিয়া জেলার শান্তিপুরে চিত্তরঞ্জন দাস রোডে কয়েক দশক ধরে শতাধিক যৌনকর্মী বাস করেন। তাঁদের সন্তানেরা শান্তিপুর কাঁসারিপাড়া বিদ্যলয়, দুর্গামণি গার্লস, শান্তিপুর মিউনিসিপাল হাইস্কুল ইত্যাদি বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী। বেশির ভাগই শিশুশ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। অধিকাংশের বয়স চার থেকে ১২ বছর। এরা সকলেই এখন স্কুলের বাইরে। কৃষ্ণনগর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের এক জন ছাত্রীও রয়েছেন।
কিছু দিন আগে ওই যৌন পল্লিতে এক ব্যক্তি খুন হন। তার পরে পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং মামলা হয়। সেই মামলার সূত্রে রানাঘাট আদালতের বিচারক পুলিশকে ওই এলাকার যৌনকর্মীদের বাড়ি থেকে বার করে দিয়ে তালা লাগিয়ে দিতে বলেন। যৌনকর্মীদের বাড়ি থেকে বার করে দেয় পুলিশ। তাঁরা এখন ঘরছাড়া। উপার্জন বন্ধ। পড়ুয়াদের বই-খাতা, স্কুলের পোশাক সবই ঘরে তালাবন্ধ। কিছু জিনিস পুলিশ নষ্টও করে দিয়েছে। অরুণাভবাবু এ কথা জানিয়ে বলেন, ওই পড়ুয়াদের অপরাধ কোথায়? তাদের যৌনকর্মী মায়েরাই বা ঘরছাড়া কেন?
প্রধান বিচারপতি এই ঘটনার কথা শুনেই জানিয়ে দেন, যে-কোনও মূল্যে ওই পড়ুয়াদের পুর্নবাসন দিতে হবে। অরুণাভবাবু বলেন, ওই পড়ুয়াদের অনেকেই শিশু। মায়েদের ছেড়ে তারা থাকতে পারবেকি? মায়েরাও কি পারবেন ওই শিশুসন্তানদের ছেড়ে থাকতে? ডিভিশন বেঞ্চ অরুণাভবাবুকেই মায়েদের সঙ্গে কথা বলে ১৫ দিনের মধ্যে জানাতে বলেছে। |