জরুরি ভিত্তিতে ভুয়ো রেশন কার্ড উদ্ধার ও তা বাতিল করার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যের সাত জেলায় জনসংখ্যার তুলনায় ৩৬ লক্ষ বেশি রেশন কার্ডে রয়েছে। এ তথ্য জানার পরে মুখ্যমন্ত্রী অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। শুক্রবার পুরো বিষয়টি তিনি খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কাছে জানতে চান। জ্যোতিপ্রিয় তাঁকে বলেন, বামফ্রন্টের আমলে লক্ষ লক্ষ ভুয়ো রেশন কার্ড তৈরি হয়েছে। নতুন সরকার তা বাতিল করার জন্য সব রকম ব্যবস্থা নিচ্ছে। পরে জ্যোতিপ্রিয় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ৩৬ লক্ষ ভুয়ো রেশন কার্ড বাতিলের জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাঁর নির্দেশ মতো ভুয়ো রেশন কার্ড সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ জারি করে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে। নির্দিষ্ট সময়ের পরে যদি দেখা যায়, কারও কাছে কোনও ভুয়ো রেশন কার্ড রয়েছে, তাহলে তার তিন মাস জেল ও জরিমানা হবে।” মন্ত্রী জানান, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই ভুয়ো রেশন কার্ডের শাস্তি হিসাবে তিন মাস জেলের কথা বলা আছে। রাজ্য সরকার সেই মতোই ব্যবস্থা নেবে।
পাহাড়ের বন্ধ চা-বাগানের শ্রমিকদের যে সরকারি রেশন দেওয়া হচ্ছে, খাদ্যমন্ত্রীকে
তা সরেজমিনে দেখার জন্য এ দিনই মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো আগামী মঙ্গলবার খাদ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গ যাচ্ছেন। তিনি বলেন, বন্ধ চা-বাগানের ৮৪ হাজার শ্রমিককে সরকারি রেশন দেওয়া হয়। তাঁরা ঠিক মতো তা পাচ্ছেন কিনা, খাদ্যের মান কী রকম তা দেখা হবে।
খাদ্যমন্ত্রী জানান, পাহাড়ের মানুষের জন্য অতিরিক্ত ৩০ হাজার মেট্রিক টন ধান ও ৩০ হাজার মেট্রিক টন গম দেওয়া হচ্ছে। সেইসঙ্গে পাহাড়ে যাদের বিপিএল কার্ড রয়েছে, তাদের আরও এক বছর দু’টাকা কেজি দরে চাল দেওয়া হবে। খাদ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, পুরনো রেশন কার্ড বাতিল করে নতুন রেশন কার্ড তৈরির ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে ২ জুলাই বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে দুই ধরনের রেশন কার্ড মুখ্যমন্ত্রীকে দেখানো হবে। একটি কার্ড হবে ‘ডিজিটাল’। অন্যটি ‘বার কোডেড’। কাজের সুবিধার জন্য কোন কার্ড ব্যবহার করা হবে, মুখ্যমন্ত্রীই সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে, নতুন কার্ড তৈরি হতে সময় লাগবে। ততদিন পুরনো রেশন কার্ডই চলবে।
প্রায় প্রতিদিনই ভুয়ো কার্ড উদ্ধারে খাদ্য দফতর রেশন অফিসগুলিতে হানা দিচ্ছে। এ দিনও বারাসতে রেশন দফতরের অফিসে হানা দিয়ে ১১টি ভুয়ো কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে বলে খাদ্যমন্ত্রী জানান। তিনি বলেন, “পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে রেশন কার্ড বিক্রি করছে কিছু অসাধু ব্যক্তি। এরসঙ্গে খাদ্য দফতরের কিছু কর্মীও যুক্ত। এই দুর্নীতি বন্ধ করতে খাদ্য দফতর একটি ‘ভিজিল্যান্স টিম’ তৈরি করছে।”
রাজ্যের বহু মানুষ যখন অত্যন্ত দরিদ্র অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন, তখন ভুয়ো রেশন কার্ডের মাধ্যমে কিছু মানুষ কোটি কোটি টাকা অবৈধ ভাবে উপার্জন করছেন বলে খাদ্যমন্ত্রীর অভিযোগ। তাঁর আরও অভিযোগ, “এ কাজের সঙ্গে সিপিএমের কিছু নেতা ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত। তাঁরা বছরের পর বছর এ কাজে মদত দিয়েছেন। রাজ্যে পালাবদলের পরে তা বন্ধ করতে মুখ্যমন্ত্রী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।” সিপিএমের পক্ষ থেকে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র অবশ্য কার্ড-দুর্নীতির সঙ্গে সিপিএমের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের জড়িয়ে থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। |