বিধানসভার একগুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী কমিটির মাথায় বসতে চলেছেন বিরোধীরা। তার মধ্যে সাম্প্রতিক কালের মধ্যে এ বারই প্রথম পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি (পিএসি)-র চেয়ারম্যান হচ্ছেন না বিরোধী দলনেতা। সরকারি সূত্রের খবর, তিনি নিজে না-হয়ে বাম শিবির থেকে অন্য কোনও বিধায়ককে তাঁরা পিএসি-র চেয়ারম্যান করতে চান বলে স্পিকারের দফতরে জানিয়ে দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। বাম শিবির সূত্রের খবর, ওই কমিটির প্রধান হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী, ডোমকলের সিপিএম বিধায়ক আনিসুর রহমান। বিধানসভা ভোটে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সমর্থন হারানোর পরে সংখ্যালঘু এক নেতাকে পিএসি-র মতো গুরুত্বপূর্ণ কমিটির দায়িত্বে এনে একটি ‘বার্তা’ দিতে চাইছেন সিপিএম নেতৃত্ব।
এই মুহূর্তে বিধানসভায় হাউজ ও স্থায়ী মিলিয়ে মোট কমিটির সংখ্যা ৩৮। তার মধ্যে ১২টির চেয়ারম্যান বিরোধীদের ছেড়ে দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছে। সরকার পক্ষের মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ কমিটি হয়তো বিরোধীদের হাতে না-ছাড়লেও হত। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় প্রথম দিনই বলেছিলেন, বিরোধীদের বেশি মর্যাদা দিতে হবে। তাঁর পরামর্শ মেনেই গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলি কমিটি ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।”
পিএসি ছাড়া বাকি যে কমিটিগুলি বিরোধীদের হাতে যাচ্ছে, তার মধ্যে শিল্প ও বাণিজ্য, পরিবহণ, পূর্ত, শ্রম, পুর বিষয়ক এবং সরকারি আশ্বাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। এ ছাড়াও, বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প (বিইইউপি), তথ্য ও সংস্কৃতি, তথ্যপ্রযুক্তি, পিটিশন এবং পেপার লেড কমিটির দায়িত্ব পাচ্ছেন বিরোধীরা। মোট ১৪টি হাউজ কমিটি এবং ২৪টি স্থায়ী কমিটির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে যাওয়ার কথা আগামী ২৮ জুনের মধ্যেই। কমিটিগুলির বিষয়ে বিধানসভায় সরকার পক্ষের নেতা তথা পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিশদে আলোচনা করেছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু।
পরিষদীয় রাজনীতির প্রথা অনুযায়ী, পিএসি ছেড়ে দেওয়া হয় বিরোধীদের জন্যই এবং বিরোধী দলনেতা স্বয়ং সেই কমিটির প্রধান হন। কিন্তু এ বার সিপিএম চাইছে, ক্ষমতা হারানোর পরে সীমিত যা সরকারি পদ পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলি দলের নেতাদের মধ্যে ভাগ করে নিতে। সেই জন্যই পিএসি-র চেয়ারম্যান পদটি অন্য বিধায়কের জন্য ছেড়ে দিতে চাইছেন বিরোধী দলনেতা। তবে বাম শিবিরের একাংশের মতে, পিএসি-র চেয়ারম্যান যে হেতু পূর্ণমন্ত্রীর সমান মর্যাদা পান, তাই অন্য বিধায়ককে ওই পদটি ছেড়ে দিলে গাড়ি-সহ কিছু সরকারি সুযোগসুবিধা মিলবে। বিরোধী দলনেতা হিসাবে যা সূর্যবাবু এমনিই পান। বামেদের এই ‘দুর্দিনে’ পিএসি-র চেয়ারম্যানের পদ মর্যাদা ‘ভিন্ন ভাবে’ তাদের কাজে লাগবে! আনিসুর অবশ্য শুক্রবার বলেছেন, “কমিটিগুলি নিয়ে আমাদের আলাপ-আলোচনা এখনও চলছে। দু-এক দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে।”
কমিটি নিয়ে সরকার পক্ষ এ বার বিরোধীদের সঙ্গে বিশেষ দরকষাকষিতে যায়নি। শুধু স্বরাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির জন্য বিরোধীদের দাবি মানা হয়নি। ওই কমিটির দায়িত্ব নিজের দলের হাতেই রাখতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার বদলে সরকারি আশ্বাসন কমিটি বিরোধীদের দেওয়া হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র না-পেলে আশ্বাসন কমিটির জন্য অবশ্য বিরোধীরাই আবেদন করেছিলেন। কমিটিগুলির মধ্যে তৃণমূলের চেয়ারম্যান কারা হবেন, সেই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অবশ্য দলনেত্রী মমতাই নেবেন। পরিষদীয় দলের তরফে প্রাথমিক ভাবে কিছু নাম ঠিক করে মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সরকারের শরিক হিসাবে কংগ্রেস এবং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা কোন কোন কমিটি পাবে, তা নিয়েও আলোচনা চলছে। এসইউসি-র একমাত্র বিধায়ক কোনও কমিটির প্রধান হতে চান কি না, তা-ও জেনে নিতে চান মমতা।
পিএসি-র পাশাপাশি বিরোধীদের জন্য বরাদ্দ বাকি গুরুত্বপূর্ণ কমিটিগুলির প্রধান হিসাবেও দলের বর্ষীয়ান এবং অভিজ্ঞ বিধায়কদের দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে বাম সূত্রের খবর। ১২টির মধ্যে কিছু কমিটির চেয়ারম্যান পদ ছাড়া হবে শরিকদের জন্যও। বিশেষত, শরিক দলের কিছু প্রাক্তন মন্ত্রী যেখানে বিধানসভায় রয়েছেন। পিএসি-র সদস্য হওয়ার জন্য ৬ জন বাম বিধায়ক ইতিমধ্যেই মনোনয়ন দাখিল করেছেন। |