কিছু দিন ধরেই আলুর দাম ফের ঊর্ধ্বমুখী। রাজ্যের নতুন সরকারের তদন্তে জানা গিয়েছে, এক শ্রেণির ব্যবসায়ী এবং কিছু সরকারি অফিসারের অসাধু চক্রের কারসাজিতেই এটা ঘটছে। রাজ্যের কৃষি বিপণন দফতরের মন্ত্রী অরূপ রায় নিজেই শুক্রবার এ কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। এর জন্য আগের সরকারকেই দায়ী করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে এই সমস্যার মোকাবিলায় সরকার দ্বিমুখী কৌশল নিচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী। রাজ্যের ৫০০টি হিমঘরে নিয়মিত নজরদারি চালানো। নতুন হিমঘর তৈরি।
কী ভাবে কাজ করছে দুষ্ট চক্র?
মন্ত্রী জানান, হিমঘরে যথেষ্ট পরিমাণ আলু থাকা সত্ত্বেও অসাধু ব্যবসায়ী এবং এক শ্রেণির সরকারি অফিসারের চক্র বাজারে আলুর জোগান কমিয়ে দেয়। এর ফলে বেড়ে যায় ওই পণ্যের বাজারদর। আলুর মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য খোঁজখবর নিতে গিয়েই সরকার এটা জানতে পেরেছে। পাঁচ টাকা কেজি দরের আলু এখন ১০ টাকা। অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে কৃত্রিম ভাবে আলুর দাম আর বাড়াতে না-পারেন, সেই জন্য কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান অরূপবাবু।
কিন্তু আলু নিয়ে ওই দুষ্ট চক্রের এমন বাড়বাড়ন্ত হল কী ভাবে?
এর দায় আগেকার বাম সরকারের উপরে চাপিয়ে দিয়েছেন মন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, বামফ্রন্ট সরকারের আমলে পশ্চিমবঙ্গে হিমঘরের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে ঘুষ নেওয়া হত। এ ছাড়া হিমঘরের লাইসেন্স দু’বছর অন্তর নবীকরণ হওয়ার কথা। কিন্তু তখনকার সরকার সেই কাজটাও ঠিক সময়ে নিয়ম মেনে করেনি। |
বিগত সরকারের আমলে আলু কেনার ক্ষেত্রেও ব্যাপক কারচুপি হয়েছিল বলে অভিযোগ তোলেন মন্ত্রী। অরূপবাবু জানান, গত বছর কৃষকদের স্বার্থরক্ষার জন্য সরকারের তরফে ৪০০ কোটি টাকার আলু কেনা হয়েছিল। কিন্তু পরে তদন্তে দেখা যায়, আলু কেনার ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। তছরুপ হয়েছে কোটি কোটি টাকা। এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সেই তদন্তের রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানান কৃষি বিপণন মন্ত্রী।
সাধারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আলু নিয়ে অসাধু চক্র বন্ধ করতে কঠোর নজরদারির পাশাপাশি এ বার নতুন হিমঘর গড়তে চায় সরকার। তার জন্য লগ্নিকারীদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন মন্ত্রী। এখন থেকে স্বচ্ছ ভাবে লাইসেন্স দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। মন্ত্রী জানান, আলু নিয়ে কোনও দুষ্ট চক্র যাতে আর কোনও রকম ফায়দা লুটতে না-পারে, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, দুষ্ট চক্রের কাজকর্ম রুখতে নজরদারি তো বাড়াতে হবেই। সেই সঙ্গে দেখতে হবে, কৃষকেরা যেন আলুর ঠিকঠাক দাম পান। ক্রেতাদেরও যাতে বেশি দাম দিতে না-হয়, সে-দিকেও খেয়াল রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।
শুধু আলু নয়, হঠাৎ পেঁয়াজেরও দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকার উদ্বিগ্ন বলে জানান অরূপবাবু। এই রাজ্যে বেশি পেঁয়াজ আসে মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে। এখানে পেঁয়াজের কোনও হিমঘর নেই। দাম নিয়ন্ত্রণ করতে তাই রাজ্যে পেঁয়াজের হিমঘর তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছে নতুন সরকার। |