|
|
|
|
‘লোক দেখানো’ বলছে সিপিএম |
মূল্যবৃদ্ধি থেকে নিজেকে ‘আলাদা’ করছেন মমতা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
গণ পরিবহণ এবং মধ্য ও নিম্নবিত্ত মানুষের সংসারে টান-ধরানো ডিজেল, কেরোসিন এবং রান্নার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তের থেকে নিজেকে ‘আলাদা’ করতে চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইউপিএ-র দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক, তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী শুক্রবার প্রকাশ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের এই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের শরিক নন। মহাকরণে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, “আমরা আমাদের দলের সিদ্ধান্ত জানাচ্ছি। এমনিতেই জিনিসের দাম যা বেড়েছে, তাতে মানুষের অবস্থা সঙ্কটজনক। এর পরে নতুন করে আর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সমর্থন করছি না। আমরা আমাদের এই মতামত যেখানে জানানোর জানিয়ে দিয়েছি।”
তবে মমতার এই ‘বিরোধিতা’ রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সিপিএমের কাছে কোনও ভাবেই ধোপে টিকছে না। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তীর যুক্তি, “ওঁর এই বিরোধিতা সম্পূর্ণ লোক-দেখানো! ওঁরাই ইউপিএ-র দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক। তৃণমূলের সত্যিই আপত্তি থাকলে এই সময়ে কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সরকারের পক্ষে দাম বাড়ানো কিছুতেই সম্ভব হত না!”
বস্তুত, কেন্দ্রীয় সরকার দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার আগেই মমতা জানিয়ে দিয়েছিলেন, এতে তাঁর সমর্থন নেই। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এ দিন দুপুরেই তৃণমূল নেত্রীকে ফোন করেছিলেন। রাজ্য সরকারের ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট পেশ উপলক্ষে মমতা সেই সময়ে বিধানসভায় ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ইউপিএ-র শরিক নেত্রীকে জানান, ডিজেল, গ্যাস ও কেরোসিনের দাম বাড়তে চলেছে। ইউপিএ সূত্রের খবর, মমতা তখনই প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে দেন, এই সিদ্ধান্ত তাঁরা মানবেন না। তেল সংস্থার লাভ না-হওয়ার বিষয়টি অন্য কোনও ভাবে মেটানো যেতে পারত। কিন্তু মানুষের উপরে ‘চাপ’ তৈরির সিদ্ধান্তের তাঁরা বিরোধিতা করছেন। পরে সন্ধ্যায় মমতা বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার তার মতো সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু আমরা সহযোগী দল হিসাবে জানাতে চাই যে, আমরা এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করি না। কারণ কেরোসিন, ডিজেল, রান্নার গ্যাস সবই সাধারণ মানুষের কাজে লাগে। বন্যার সময়ে গ্রামেগঞ্জে এখন কেরোসিনের খুব চাহিদা।
ডিজেল চাষের কাজে লাগে। কেরোসিন, গ্যাস, এ সবের দাম বাড়ানোর আগে অনেক বার চিন্তাভাবনা করা দরকার।”
তৃণমূল নেত্রী এ কথা বললেও তিনিই যে হেতু এখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, তাই আগামী কয়েক দিনে তেল-রাজনীতির পারদ চড়া প্রায় অবধারিত! এ রাজ্যের সরকারে থেকে মমতা এ বার কী করেন, তা দেখতে চাইছে সিপিএম। তাঁর বৃহস্পতিবারের বক্তব্যেরই পুনরাবৃত্তি করে শ্যামলবাবু এ দিন বলেন, “বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী পক্ষে থাকার সময় তেলের দাম বাড়লেই দাবি করতেন, রাজ্য সরকার তাদের কর বা সেস প্রত্যাহার করে নিক। এখন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তিনি সেই কাজ করেন কি না, রাজ্যের মানুষ দেখতে চান!”
একের পর এক কেলেঙ্কারিতে ইউপিএ-র পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্যই সংসদের বাদল অধিবেশন পিছিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস। আগামী ১ অগস্ট সংসদের পরবর্তী অধিবেশন বসবে। তৃণমূলের বিরোধিতার নীতি দলের সাংসদেরা ওই অধিবেশনে তুলে ধরেন কি না, তা-ই এখন দেখার। ঠিক তেমনই রাজ্যে যে হেতু বিধানসভার অধিবেশন চলছে, বামফ্রন্ট সেখানে এই মূল্যবৃদ্ধিকে হাতিয়ার করার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইবে না। আজ, শনিবারই কলকাতায় বামফ্রন্টের যে পূর্বনির্ধারিত প্রতিবাদ মিছিল আছে, তাতে মূল্যবৃদ্ধি অন্যতম বিষয়। ডিজেল, কেরোসিন ও রান্নার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সর্বশেষ সিদ্ধান্তটি স্বভাবতই ওই প্রতিবাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। বাম শ্রমিক সংগঠনগুলির তরফে কী কর্মসূচি নেওয়া যায়, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হবে।
তেল সংস্থাগুলির সরাসরি লোকসানের কথা না-বলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়পাল রেড্ডি এ দিন নতুন একটি শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছেন ‘আন্ডার রিকভারি’। অর্থাৎ তেল সংস্থাগুলির যতখানি ক্ষতি পোষানো প্রত্যাশিত, তা হচ্ছে না।
এই যুক্তি উড়িয়ে দিয়ে শ্যামলবাবু বলেছেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের এখন যা দর, টাকায় রূপান্তর করলে কখনওই এই দাম হয় না। এটা আসলে একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া চলছে।
দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের আমলে এই নিয়ে আট বার পেট্রো-পণ্যের দাম বাড়ল। এবং এখানেই শেষ নয়! ভবিষ্যতে আরও বাড়বে!” তার মধ্যে রান্নার গ্যাসের এলপিজি সিলিন্ডারের দাম এক লাফে ৫০ টাকা করে কখনও বেড়েছে কি না, একলপ্তে মনে করতে পারছেন না প্রবীণ ট্রেড ইউনিয়ন নেতারাও! ডিজেলের দাম বাড়ায় বাস ভাড়া বাড়ানোর দাবি ওঠা একেবারেই অস্বাভাবিক নয়। গণ পরিবহণে প্রভাব পড়ে সাধারণ জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও সমূহ। মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে আপাতত এই পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে। বাস বা অন্য পরিবহণ সংগঠনগুলি এ দিন থেকেই ‘মা-মাটি-মানুষের নেত্রী’ মমতার মুখাপেক্ষী হওয়ার কথা বলতে শুরু করেছে।
তৃণমূলের এককালীন জোটসঙ্গী এসইউসি-র সাধারণ সম্পাদক প্রভাস ঘোষ প্রত্যাশিত ভাবেই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে ‘জনবিরোধী এবং পুঁজিপতিদের পক্ষে’ বলে বর্ণনা করেছেন। এর প্রতিবাদে আজ, শনিবার সারা দেশে রাজধানী শহরগুলিতে তাঁদের দল বিক্ষোভে নামছে। রাজ্য বিজেপি-র মহিলা মোর্চা কলেজ স্ট্রিটে পথ অবরোধ করে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন এবং ইউপিএ-র চেয়ারপার্সন সনিয়া গাঁধীর কুশপুতুল পোড়াবে। |
|
|
|
|
|