|
|
|
|
|
|
দক্ষিন কলকাতা
সমাধান দূর অস্ৎ |
বেহাল পলিটেকনিক |
গৌতম বসুমল্লিক |
পাঁচটি বিভাগ মিলিয়ে ছাত্রছাত্রীসংখ্যা প্রায় সাড়ে সাতশো। ক্লাসও হয় নিয়মিত। কিন্তু অভিযোগ, পরিকাঠামো বেহাল।
মোমিনপুর অঞ্চলের ময়ূরভঞ্জ রোডের জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ পলিটেকনিকে দেখা গেল একটি গভীর নলকূপ ছাড়া কলেজ-প্রাঙ্গণে আর কোনও পানীয় জলের উৎস নেই। নেই নিকাশি ব্যবস্থাও। প্রাত্যহিক বর্জ্য জমা হয় কলেজের মধ্যেই। কিছু কাল আগেও ক্লাস হত যে মূল ভবনটিতে সংস্কারের অভাবে সেটি এখন পরিত্যক্ত। প্রাঙ্গণের অন্য বাড়িগুলিতে কোনও মতে পড়াশোনা চলছে। |
|
১৯৫৯-এ ১৬ সেপ্টেম্বর ওড়িশার ময়ূরভঞ্জরাজের কলকাতার বাড়িতে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় পলিটেকনিকটি। বাইশ বিঘা জমির উপর চারি দিকে ফলের গাছ ঘেরা পুকুর, বাগান-সহ বাড়িটি কেনা হয়েছিল নয় লক্ষ একাত্তর হাজার টাকায়। আরও সাত লক্ষ টাকা খরচ করা হয়েছিল ওয়ার্কশপ, ল্যাবরেটরি, আসবাবপত্র কেনা ইত্যাদির জন্য। প্রথমে এটি ছিল সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত, ১৯৭৫-এ সরাসরি রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন পলিটেকনিকে রূপান্তরিত হয় এটি।
এখন কিন্তু এখানে ক্লাস করাটাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানকার প্রাক্তন ছাত্র তথা প্রাক্তন শিক্ষক দেবরঞ্জন চক্রবর্তী বললেন, ‘‘কলেজ আরম্ভ হওয়ার দু’বছরের মাথায় ১৯৬১-তে আমি এখানে আসি ছাত্র হিসেবে। তার পরে এখানেই শিক্ষকতা করে ২০০৫-এ অবসর নিই। এই কলেজের উত্থান-পতনের প্রায় সবটাই আমার চোখের সামনে ঘটেছে। আমরা তো বটেই, পরবর্তী কালের ছাত্ররাও যে পরিবেশের মধ্যে এখানে পড়াশোনা করত, এখন তার কিছুই অবশিষ্ট নেই। আমাদের ক্লাস হত রাজবাড়িতে। শিক্ষক হিসেবে আমাদের বসার ঘর ছিল ওখানেই। এখন বাড়িটি ভেঙে পড়ছে বলে বন্ধ করে রাখা আছে। জল নেই, সুষ্ঠু নিকাশি-ব্যবস্থাও নেই। প্রাক্তন ছাত্র-সমিতির সদস্য হিসেবে আমরা বিভিন্ন জায়গায় দরবার করেও কোনও ফল পাইনি।’’ |
|
সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ পলিটেকনিকের রক্ষণাবেক্ষণের ভার রাজ্য পূর্ত দফতরের। ওই দফতরের কনস্ট্রাকশন বোর্ডের নির্বাহী বাস্তুকার মৃণাল দাস বললেন, ‘‘রাজবাড়ি বা মূল ভবনটির অবস্থা খুব খারাপ। তাই বাড়িটি আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। অধ্যক্ষকে সারাইয়ে কত খরচ হতে পারে তা জানিয়েছি। এ বার কারিগরি শিক্ষা দফতর টাকা পাঠালেই কাজ আরম্ভ করা যাবে।”
পলিটেকনিকের ওই দুরবস্থার কথা স্বীকার করে অধ্যক্ষ তারককুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “পূর্ত বিভাগ থেকে রাজবাড়ি সারানোর জন্য খরচের যে হিসেব দিয়েছে, সেটা কারিগরি শিক্ষা দফতরে পাঠিয়ে দিয়েছি। এ ছাড়াও পুরো চত্বরের রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ আরও টাকার আবেদন জানিয়েছি। টাকা এলেই কাজ শুরু হবে।” আর কলেজের জল ও নিকাশি ব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বললেন, “এখানকার পুর-করের বিষয়টি নিয়ে কিছু পদ্ধতিগত জটিলতা রয়েছে। সেই কারণে জল ও নিকাশির ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত
সমস্যা তৈরি হয়েছে। কী ভাবে বিষয়টি মেটানো যায় দেখছি।” প্রযুক্তি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক দফতরের মন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বললেন, “সরকারি পলিটেকনিকগুলোয় নানা সমস্যা আছে। এগুলো খতিয়ে দেখতে একটা ইনস্পেকশন টিম তৈরি করছি। তারা সব কলেজ ঘুরে দেখে রিপোর্ট পেশ করবে। তার পরে কী ব্যবস্থা করা যায় দেখব। সেই সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিকগুলোর অধ্যক্ষদের সঙ্গেও আলাদা বৈঠক করব।”
|
ছবি গৌতম বসুমল্লিক |
|
|
|
|
|