|
|
|
|
|
|
দক্ষিন কলকাতা
এসএসকেএম |
স্বাস্থ্য জঞ্জালে |
অনুপ চট্টোপাধ্যায় |
মেয়েকে সিজারের জন্য ঢোকানো হয়েছে অপারেশন থিয়েটারে। উদ্বিগ্ন মা অপর্ণা বসু খোলা দরজায় উঁকি মেরে এক বার মেয়েকে দেখার চেষ্টা করছেন। তাঁকে ধমক দিয়ে সরিয়ে দিলেন ওটি’র এক কর্মচারী। ঝাঁঝালো গলায় বললেন, “এখান থেকে চলে যান। জীবাণু ছড়াতে পারে। রোগীদের ক্ষতি হবে।” কথা মেনে মুখ ফিরিয়েই অপর্ণাদেবী দেখতে পেলেন পাশেই আবর্জনার স্তূপ। ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, “এখান থেকে কি জীবাণু ছড়াচ্ছে না?” এ ছবি এসএসকেএম-এর স্ত্রী ও প্রসূতি (গাইনি) ওয়ার্ডের। |
|
হাসপাতালসূত্রে খবর, অনেক দিন থেকেই এসএসকেএমের গাইনি ওয়ার্ডের তিন তলায় লিফ্টের পাশেই জঞ্জাল পড়ে রয়েছে। অপারেশন থিয়েটারে ঢোকার মুখে জমে আছে চায়ের কাপ, আধপোড়া সিগারেট, খাবারের ঠোঙা, উচ্ছিষ্ট-সহ আরও নানা ধরনের আবর্জনা। রয়েছে বাঁশ, পুরনো ভাঙা আলমারি, বাতিল হওয়া কাঠ, নোংরা সোফার স্পঞ্জ, এমনকী ময়লা বিছানাও।
হাসপাতালেরই এক লিফ্টম্যানের কথায়: “বছর দুয়েক ধরে এ ভাবেই পড়ে আছে। ডাক্তার, নার্স থেকে শুরু করে প্রায় প্রত্যেকেই এই হাল দেখতে অভ্যস্ত।” কোলে সদ্যোজাতকে নিয়ে পায়চারি করছিলেন বেহালার প্রতিমা দত্ত। তাঁর কথায়: “বিকেলে কিছু ক্ষণ ছেলেকে কোলে নিয়ে হাঁটাহাঁটি করি। ডাক্তারের নির্দেশ। জানি এখানে জীবাণু ভর্তি। কিন্তু কী আর করব? সংক্রমণের ভয়ে এই গরমেও যতটা পারি ছেলেকে ঢেকেঢুকে রাখার চেষ্টা করি।”
ওটি’র সামনে জঞ্জালের স্তূপ নিয়ে অতিষ্ঠ এই ওয়ার্ডের একাধিক চিকিৎসকও। কর্তব্যরত এক মেডিক্যাল অফিসার বললেন, “প্রতি দিনই এই ওয়ার্ডের অপারেশন থিয়েটারে বাচ্চা জন্মাচ্ছে। জন্মগ্রহণের পরে এই পরিবেশের মধ্যে দিয়েই তাদের নিয়ে যেতে হয়। ডাক্তারি নিয়মে যা কখনই উচিত নয়। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে তা করতে হচ্ছে।” |
|
শুধু সদ্যোজাতই নয়, মহিলাদের জটিল রোগের নানা অস্ত্রোপচারও করা হয় এখানে। ওই বিভাগের এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, “আমরা রোগীদের সজাগ হওয়ার নির্দেশ দিই। কিন্তু খাস অপারেশন থিয়েটারের সামনে এই হাল দুর্ভাগ্যজনক। কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানোও হয়েছে।”
স্ত্রী ও প্রসূতি বিভাগসূত্রে জানা গিয়েছে, গাইনি ওয়ার্ডের ওই হাল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হাসপাতাল প্রশাসন। তা সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ওয়ার্ড মাস্টার শিবেন্দু দাস বলেন, “ওয়ার্ড পরিচ্ছন্ন রাখতে চাই আমরাও। কিন্তু প্রয়োজনীয় কর্মীর অভাব। প্রশাসনকে বার বার জানিয়েছি। এখনও কিছু হয়নি।” বিষয়টি জানেন না এসএসকেএমের ডেপুটি সুপার দিলীপ ঝা। তিনি বলেন, “ওখানে কাজ চলছে। তাই হয়তো জঞ্জাল জমে রয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই জঞ্জাল সরানোর ব্যবস্থা করা হবে।”
|
ছবি গৌতম বসুমল্লিক |
|
|
|
|
|