|
|
|
|
|
|
দক্ষিন কলকাতা বেহালা ‘দৌরাত্ম্য’ |
বিপজ্জনক বাস |
স্বপন দাস |
যত পরিবার থাকার কথা, আছেন তার অনেক বেশি। পরিকাঠামোর অবস্থা এমনিতেই খারাপ, তার উপর অতিরিক্ত চাপে মুখ থুবড়ে পড়েছে পরিষেবা। এই হাল কলকাতা পুরসভার একটি শ্রমিক এবং একটি কর্মী আবাসনের। পুর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ‘বিপজ্জনক’ ঘোষণা করা সত্ত্বেও নড়ানো যায়নি এক জন আবাসিককেও।
আবাসন দু’টি যথাক্রমে ১২৮ ও ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডে। ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডে চারতলা দু’টি বাড়ির একটিকে ইতিমধ্যেই বিপজ্জনক ঘোষণা করে ঘর ছাড়ার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে পুরসভা। পাশাপাশি ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের পুরকর্মী আবাসনটি একতলা। ছাদ অ্যাসবেস্টসের। অভিযোগ, দু’টি আবাসনেই বহিরাগতের বসবাস।
অভিযোগ, বহিরাগতের বসবাসের জন্য প্রকৃত পুরকর্মী আবাসিকেরা ন্যূনতম পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আবাসনগুলি ১৯৭২ সালে উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়। এখন ঘরের সংখ্যা বেড়েছে। তবু আবাসনের ছাদও ‘দখলদারি’ থেকে বাদ যায়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। |
|
১২৮ নম্বর ওয়ার্ডের চারতলা বাড়ির ছাদ ভেঙে জল পড়ছে। হাতে গোনা শৌচাগার। বাসিন্দাদের অভিযোগ, উপরের ময়লা নীচে ফেলায় জঞ্জালের গন্ধে নীচের তলার আবাসিকদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। শৌচাগারের সামনে জল। ওপরের প্রায় সব পাইপ ফাটা থাকায় ময়লা জল জানলা দিয়ে ঢুকছে। এখানকার আবাসিক মানাদেবী বলেন, “বর্ষায় ছাদের চাঙড় পড়ছে। খাওয়ার জলের অভাব। বাইরের লোকও আছেন এখানে। ন্যূনতম পরিষেবাটুকু নেই।” আর এক আবাসিক বিমলাদেবী বলেন, “পুরসভা থাকতে দিয়েছে এমন পরিবার ৩২টির মতো। বাড়িতে ৬৪টি ঘর আছে। প্রতি ঘরে যদি একটি পরিবার থাকে, তা হলে ৬৪টি পরিবার থাকার কথা। কিন্তু দু’টি বাড়িতে তার অনেক বেশি আছে।” আবাসিক শ্রমিকেরা জানান, কয়েক বছর আগে ‘বেআইনি’ দখলদার থাকার জন্য বিদ্যুতের লাইনও কেটে দেওয়া হয়েছিল। অনেক চেষ্টায় পরে বিদ্যুৎসংযোগ আনা হয়।
কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, “অধিকাংশ কর্মীর সঙ্গে আত্মীয়স্বজন আছে। থাকার কথা কর্মী, তাঁর মা-বাবা, স্ত্রী ও সন্তানের।” |
|
১২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দোলা সরকার বলেন, “বার বার বলা সত্ত্বেও ওঠানো যাচ্ছে না বেআইনি দখলদারদের। আবাসনের দু’টি বাড়ির একটি ভয়ঙ্কর অবস্থায়। বাড়িটি ‘বিপজ্জনক’ ঘোষণা করার পরেও নড়েননি এক জনও। বেআইনি দখলদারের চাপে প্রকৃত পুরকর্মী আবাসিকরা ন্যূনতম পরিষেবাও পাচ্ছেন না। আমি এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারকে দেখিয়েছি। আবাসন দু’টি নরকের চেহারা নিয়েছে।”
১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের আবাসনটি পর্ণশ্রীর স্বামীজি রোডে ডিফাং মণিখালি খালের পাশে। খাল সংস্কার হয়নি। ফলে পচা জল খাল উপচে ঘরে ঢোকে। এখানকার আবাসনের দু’টি পাকা বাড়িতে থাকার কথা ৮টি পরিবারের। কিন্তু অভিযোগ, এখানে আছে প্রায় ৭০টি পরিবার। তার উপর পরিষেবাগত সমস্যা লেগেই আছে। প্রসঙ্গত, কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, “যা বলার ভারপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ বলবেন।”
এই বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার বলেন, “বেআইনি দখলদার হঠাতে কড়া পদক্ষেপ করেও কাজ হচ্ছে না। একটি বাড়িকে বিপজ্জনক ঘোষণার পরেও কেউ নড়েননি। আবাসনগুলিতে বেআইনি দখলদার আছে। পরিবেশও কিছুটা খারাপ। দেখছি কী করা যায়। অবসরের পরে কোয়ার্টার ছেড়ে দিলে তবেই পেনশন পাওয়া যায়। সে দিক দিয়েও ধরার চেষ্টা করেছি। ফল হচ্ছে না।”
|
ছবি: পিন্টু মণ্ডল |
|
|
|
|
|