|
|
|
|
|
|
দক্ষিন কলকাতা গড়িয়া
সমাধান অধরা |
পরিষেবা সুদূর |
দেবাশিস দাস |
অনিশ্চয়তার ঘেরাটোপে প্রস্তাবিত পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্প। পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রস্তাবিত প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়িত না হলে রাজপুর-সোনারপুর পুরসভায় পানীয় জল সমস্যা ভবিষ্যতে ভয়াবহ হয়ে দাঁড়াবে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পানীয় জলের চাহিদা। এই সমস্যার সমাধানের জন্য ২০০৬ সাল নাগাদ রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার বামপন্থী পুরবোর্ড তৎকালীন রাজ্য সরকারের জনস্বাস্থ্য কারিগরী বিভাগের সঙ্গে একটি যৌথ প্রকল্প নিয়েছিল। প্রকল্প অনুযায়ী বজবজের নোদাখালি জলাধারের জল নিয়ে এসে পুর এলাকায় সরবরাহের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। পাইপ লাইনের কাজ করার কথা ছিল কলকাতা মেট্রোপলিটন ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন অথরিটির (কেএমডব্লিউএসএ)। |
|
এর মধ্যে পুরসভা কেএমডিএ-কে বুস্টার পাম্পিং ব্যবস্থার প্রস্তাব দেয়। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, কেএমডিএ ২০০৭ সাল নাগাদ রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার জন্য একটি নয় কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করে। এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ চলাকালীন জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশনের (জেএনএনইউআরএম) আওতায় পানীয় জল প্রকল্পের কথা জানতে পারে রাজপুর-সোনারপুর পুরসভা।
এর পরে পুরসভা গড়িয়া, মহামায়াতলা, বোড়াল এলাকায় পানীয় জল সরবরাহের জন্য ১৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাঠায় জেএনএনইউআরএম-এর কাছে, যা খারিজ হয়ে যায়। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রকল্প খারিজ করার পিছনে জেএনএনইউআরএম-এর যুক্তি ছিল আংশিক নয়, পুরসভার প্রতিটি ওয়ার্ড প্রকল্পের আওতায় আনতে হবে।
শর্ত মেনে আগামী পঁচিশ বছরের মধ্যে রাজপুর-সোনারপুর পুর এলাকায় প্রতি দিন গড়ে কত মিলিয়ন গ্যালন পানীয় জল প্রয়োজন হবে তা জানিয়ে জেএনএনআরইউএম এর কাছে পাঁচশো কোটি টাকার একটি প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠায় পুরসভা। এই প্রকল্পের প্রস্তাবে রয়েছে পুর এলাকায় ৩০টি ‘ওভারহেড রিজার্ভার’ এবং তিনটি ভূগর্ভস্থ জলাধার নির্মাণ, বুস্টার পাম্পিং স্টেশনের ব্যবস্থা। পুর এলাকার মূল রাস্তা ধরে যে পাইপ লাইন গিয়েছে তা নতুন করে বসানো, আদি গঙ্গার জল শোধন করে পুর এলাকায় সরবরাহের ব্যবস্থা করার প্রস্তাবও রয়েছে এই প্রকল্পে। প্রকল্পের প্রস্তাব কেএমডব্লিউএসএ এর কাছে পাঠানো হয় ২০০৮ সাল নাগাদ।
ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারের কাছে গার্ডেনরিচে এক বিঘা জমি দেওয়ার দাবি জানায় রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার তৎকালীন বামপন্থী পুরবোর্ড। প্রস্তাব দেওয়া হয় এই জমিতে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি করে গঙ্গার জল পরিশোধন করে সরবরাহ করার। |
|
২০০৯ সালে পুর নির্বাচনের আগে লস্করপুর পেয়ারা বাগানের জলাধার থেকে পুরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডে নোদাখালির জল সরবরাহ শুরু করে বামপন্থী পুরবোর্ড। এর পরে পুর নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল এবং কংগ্রেস জোট পরিচালিত বোর্ড। কিন্তু পুর নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই এই জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান বোর্ডের দাবি, নির্বাচনের আগে বাসিন্দাদের চমক দেওয়ার চেষ্টা করেছিল বামপন্থী পুরবোর্ড। তাই কয়েক মাস পরে আর জল সরবরাহ করা যায়নি।
এর পরে নতুন বোর্ডও প্রস্তাবিত জল প্রকল্পের পরিস্থিতি নিয়ে ২০০৯ সাল নাগাদ কেএমডব্লিউএসএ এর কাছে জানতে চায়। পুর কর্তৃপক্ষের দাবি এই প্রকল্প নিয়ে এখনও পর্যন্ত সাড়া দেয়নি কেএমডব্লিউএসএ। কেএমডিএর জনসংযোগ আধিকারিক সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “বিষয়টি সর্ম্পকে বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়া হবে।”
বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন জলের পাইপ লাইন সংস্কারের কাজ হয়নি। এলাকার অধিকাংশ নলকূপের জল ব্যবহার করা যায় না।
রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার অধিকাংশ পুর আধিকারিকের মতে, জল প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে পুরবোর্ডের উদ্যমের উপরে। কারণ জেএনএনইউআরএম এর শর্তানুযায়ী, প্রকল্পে যে অর্থ ব্যয় হবে তার ষাট শতাংশ রাজ্য, পঁয়ত্রিশ শতাংশ কেন্দ্র এবং পাঁচ শতাংশ পুরসভা বহন করবে। রাজ্য সরকারকে এ বিষয়ে রাজি করানোর জন্য পুরবোর্ডকেই আবেদন জানাতে হবে। |
|
পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান এবং বিরোধী দলনেতা সিপিএমের কমল গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পানীয় জল সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য বামপন্থী বোর্ড যে পরিকল্পনা নিয়েছিল তা কার্যকর করা গেলে এলাকায় পানীয় জল নিয়ে সমস্যা হত না। কিন্তু বর্তমান পুরবোর্ডের প্রচেষ্টায় কিছু ঘাটতি থাকার জন্যই এলাকায় পানীয় জলের ভবিষ্যৎ নিয়ে এই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।”
তবে জল প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে এই সমস্ত অনিশ্চয়তাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ বর্তমান তৃণমূল বোর্ডের চেয়ারম্যান ইন্দুুভূষণ ভট্টাচার্য। তিনি বললেন, “এই সমস্যার সমাধান আমি করবই।”
|
ছবি: পিন্টু মণ্ডল |
|
|
|
|
|