পূর্ব কলকাতা
ক্ষোভ
দাঁড়িয়ে শূন্যেই
লের সঙ্কট কাটেনি। চালু হয়নি চব্বিশ ঘণ্টার পুর-চিকিৎসা ব্যবস্থা। আবর্জনা অপসারণ নিয়ে সমস্যা রয়েছে। সৌন্দর্যায়ন কিংবা পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার কাজেও বিস্তর ত্রুটি রয়েছে। স্বাস্থ্য কিংবা শিক্ষা দু’জায়গাতেই রয়েছে সমস্যা। ‘পরিবর্তন’ বলতে শুধুই রাজনৈতিক পালাবদল। মোটের ওপর কার্যত ‘শূন্য’তেই দাঁড়িয়ে বিধাননগর। ‘পরিবর্তনের’ এক বছর পার হল বিধাননগরে।
গত বছর ১৭ জুন শপথ নিয়েছিলেন তৃণমূলের পুর-প্রতিনিধিরা। কিন্তু এক বছরে পুরসভার যা কাজ করার কথা ছিল, সেই নাগরিক পরিষেবায় সন্তুষ্ট নন স্বয়ং তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার উপদেষ্টারাই। সিপিএম পরিচালিত বিগত পুর-বোর্ডের সঙ্গে নতুন বোর্ডের বিশেষ ফারাক দেখতে পাননি তাঁরা।
উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “ভালও নয়, আবার মন্দও নয়। আগের থেকে বিশেষ কিছু আলাদা নয় এই বোর্ড। প্রতিশ্রুতি পালন করা হয়নি। সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের কাজও ভাল হয়নি। তবে কয়েকটি নির্বাচন ছিল। সে সব পর্ব মিটেছে। এখন নিশ্চয়ই কাজ হবে।”
ক্ষমতায় এসে গত বছর নতুন বোর্ড পর্যাপ্ত জল, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, পর্যাপ্ত আলো, সুন্দর রাস্তা, অটো ও রিকশার দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। প্রবীণ নাগরিকদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ‘অন কল’ চিকিৎসা পরিষেবা চালু করার কথা ঘোষণা করেছিলেন খোদ চেয়ারপার্সন অনিতা মণ্ডল। এর মধ্যে রাস্তা এবং আলোর ক্ষেত্রে অধিকাংশ কাজই হয়েছিল বিগত বোর্ড ক্ষমতায় থাকাকালীন। অন্যান্য প্রতিশ্রুতির কোনওটিই এ পর্যন্ত বাস্তবের মুখ দেখেনি। এত দিন স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্ব ছিল যাঁর হাতে, সেই চেয়ারপার্সন পারিষদ (স্বাস্থ্য) কৃষ্ণা চক্রবর্তী ‘অন কল’ চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি শুধু বলেন, “স্বাস্থ্য দফতর তখন আমার হাতে থাকলেও ওই প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন চেয়ারপার্সন। বিষয়টি উনিই বলতে পারবেন।”
পাশাপাশি পুরসভার কাজে গতি আনতে প্রয়োজনীয় স্ট্যান্ডিং কমিটিও তৈরি হয়েছে গত মাসে। ঝুপড়ি আটকানো যায়নি। বহু আইল্যান্ড এবং পার্ক এখনও বেহাল অবস্থায় পড়ে। রিকশার সরকারি ভাড়া ঠিক না হওয়ায় যাত্রীদের হয়রানির হালও আগের মতোই। কমেনি অটোর দৌরাত্ম্য। প্রবীণ নাগরিকদের নাম ও স্থায়ী ঠিকানার তালিকা এ পর্যন্ত তৈরি করা যায়নি। অথচ এ সবই ছিল প্রতিশ্রুতি এবং পরিষদীয় বৈঠকে আলোচনার পরে নেওয়া সিদ্ধান্ত।
ফলে সন্তুষ্ট নন বাসিন্দারাও। আবাসিক সংগঠন বিধাননগর (সল্টলেক) ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধুর কথায়, “পুরসভায় দফতরগুলির মধ্যে সমন্বয়ের অভাব আছে। অনেক কাজই হয়নি। জলের সমস্যা মেটেনি।” তবে রাজ্যে নতুন সরকার আসায় এ বার পুর-কর্তৃপক্ষের কাজেও গতি আসবে বলে আশা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের।
যদিও পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, দায়িত্ব নেওয়ার পরে গত এক বছরে তাঁরা ২৪টি ওয়ার্ড অফিসের মানোন্নয়ন, ৩টি নতুন ওয়ার্ড অফিস তৈরি, পুরসভার নিজস্ব দু’টি কমিউনিটি হল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করার কাজ, ফুটপাথ সৌন্দর্যায়ন, সিমেন্ট ও কংক্রিটের কাজ, ২৬টি পার্ক ও খেলার মাঠের সংস্কার, ৩৪,৯৬০ বর্গমিটার রাস্তা মেরামতি, নিকাশি সংস্কারে ২ কোটি টাকার কাজ, ভ্যাট সংস্কার ছাড়াও সাড়ে ৩ কোটি টাকার কাজ করতে সক্ষম হয়েছেন।
সদ্য বিদায়ী চেয়ারপার্সন অনিতা মণ্ডল বলেন, “প্রবীণ নাগরিকদের জন্য বৃদ্ধাবাস, লাইব্রেরি-সহ বিভিন্ন পরিকল্পনা জমির অভাবে কার্যকর হয়নি। এখন সরকারে আমাদের দল। ফলে আমরা আবার চিঠি-চাপাটি করে জমির জন্য আবেদন করব। অটোর বিষয়টি নিয়ে দ্রুত ইউনিয়নগুলির সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত রয়েছেন জল সরবরাহ বিভাগের দায়িত্বে। তিনি বলেন, “জলের সমস্যা বিক্ষিপ্ত ভাবে কোথাও কোথাও রয়েছে। কোনও বাড়িতে হয়ত জলের ফেরুল পরিষ্কার না থাকায় জল যাচ্ছে না। তবে কলকাতা থেকে কত জল আসছে, তা মাপার কোনও ব্যবস্থা সিপিএমের বোর্ড করেনি। এ বার মিটার বসানো হবে। তার পরে হয়তো সমস্যা কেটে যাবে।”
জল সঙ্কট কাটেনি
আবর্জনা অপসারণ সমস্যা মেটেনি
রাস্তা পর্যাপ্ত কাজ হয়নি
আলো সমস্যা রয়েছে


ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ
Previous Story

Kolkata

Next Story




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.