উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
আশঙ্কা
‘অনাথ’ সেতু
দায়িত্বে এসে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, রাস্তাঘাট, সেতু-সহ পরিকাঠামোর বিভিন্ন দিক বিভিন্ন দফতরের আওতায়, সমন্বয়ের অভাবে কাজ হয় না। সেই অভাবটাই প্রকট হয়ে উঠল ৭৭ বছরের পুরনো চিৎপুর রোড ওভারব্রিজ নিয়ে।
চিৎপুরে দু’টি রোড ওভারব্রিজ আছে। একটি পুরনো সেতু, এটি এক দিকে ক্ষীরোদ বিদ্যাবিনোদ অ্যাভিনিউ থেকে কাশীপুর রোডে মিশেছে, আর একটি নতুন, মিশেছে বিটি রোডে।
পুরনো সেতুটির অবস্থা বেহাল। কোথাও রেলিং ভাঙা, কোথাও বেরিয়ে পড়েছে রড। রেলিং-এর গায়ে গোবর, ঘুঁটের স্তূপ। এখানেই কিছু দিন আগে রেলিং ভেঙে ঝুলছিল একটি গাড়ি। মারা যান এক মহিলা, আহত হন অনেকে। কিন্তু তার পরেও হুঁশ ফেরেনি প্রশাসনের।
অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে কোনও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না এই সেতুর। তার উপর জরাজীর্ণ এই সেতু মূলত মালবোঝাই লরির করিডর হিসেবেই চিহ্নিত। সেতুর মাঝে আপ-ডাউন লেনও ভাগ করা নেই। গাড়িগুলিও বেপরোয়া ভাবে চলাচল করে।
সেতুর নীচেই বসবাস করে অনেক পরিবার। সেতু ভেঙে পড়ে বড়সড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তাঁরা। কাশীপুরের বাসিন্দা সুরিন্দর সিংহ বলেন, “চিৎপুর লকগেটের উপর নতুন একটি উড়ালপুল হলেও পুরনো এই সেতু দিয়েই সব পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করে। কিন্তু সেতুর অবস্থা খুব খারাপ। রেলিং এর অনেকাংশ ভাঙা। কিন্তু মেরামতির কোনও উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।”
বাসিন্দাদের দাবি, ব্রিজের দায়িত্ব রেলের। পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামী বলেন, “সেতুটি পুরোপুরি রেলের আওতায় নয়। লকগেট উড়ালপুল তৈরি হয়েছিল চিৎপুর রোড ওভারব্রিজের পরিবর্তে। তখন চিৎপুর ব্রিজটি বন্ধ করার কথা ছিল। কিন্তু স্থানীয় মানুষ সেই ওভারব্রিজ ব্যবহার করেন। তখন দাবি উঠেছিল মেরামতির। আমরা সিঁড়ি করে দিই। বাকিটা রাজ্য সরকারের অধীন।”
এই পুরনো সেতুটির দেখভালের দায়িত্ব কার তা স্থানীয় পুরপ্রশাসন থেকে রাজ্য সরকার কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি। পূর্ত দফতর বলছে, ওই সেতুর মেরামতির দায়িত্ব কলকাতা পুরসভার। কিন্তু পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, সেতুটি রেলমন্ত্রকের আওতাধীন। রেলের দাবি, কিছুটা তাঁদের দেখার কথা, বাকিটা রাজ্য সরকারের। রাজ্য সরকার এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেনি, জানিয়েছে, খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। স্থানীয় ১ নম্বর বরোর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কংগ্রেসের সুমন সিংহ বলেন, “আমি এর আগে রেলকে চিঠি দিয়েছি। তাঁরা জানিয়েছেন, সেতু তাঁদের আওতায় নয়। পূর্ত দফতরকেও বলেছি। তাঁরাও একই কথা বলেছেন। রেলমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলাম, আবার দেব। মুখ্যমন্ত্রীকেও চিঠি দেব।”
১ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তরুণ সাহা বলেন, “ব্রিজ কার আওতায় আমরা জানি না। তবে ব্রিজের বিষয় নিয়ে আমরা উচ্চমহলে যাব। কারণ স্থানীয় বাসিন্দারা দুর্ঘটনার আশঙ্কায় রয়েছেন।” পূর্তমন্ত্রী সুব্রত বক্সী বলেন, “খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।”

ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ
Previous Story

Kolkata

Next Story




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.