উত্তর কলকাতা
নিত্য দুর্ভোগ
জটের গেরোয়
পাঁচ মাথার মোড় থেকে হাতিবাগান। দিনের ব্যস্ত সময়ে প্রায় দিন যানজটে নাকাল হতে হচ্ছে যাত্রীদের। অভিযোগ, ফুটপাথ দখল এবং কোনও কোনও এলাকায় গাড়ির অবাধ পার্কিংই এর মূল কারণ।
বিধান সরণির দু’পাশের ফুটপাথ দখল হয়েছে আগেই। বাজার চত্বর হওয়ায় প্রতি দিন অসংখ্য মানুষের আনাগোনা এই পথে। ক্রেতার ভিড়ে পথচলতি মানুষ তাই বাধ্য হন রাস্তা ধরে হাঁটতে। বরাহনগর থেকে বাজার করতে আসা সীমা বিশ্বাস বললেন, “দোকানের ভিড়ে ফুটপাথ দিয়ে হাঁটাই যায় না। তাই রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হয়।” কিন্তু রাস্তার ধার ধরে দাঁড় করানো থাকে গাড়ি। আর জি কর রোডের বাসিন্দা প্রশান্তকুমার রায় বলেন, “মার্চ মাসের ঘটনা। ফুটপাথের ভিড় এড়াতে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম। এক দিকে লাইন করে মোটর সাইকেল রাখা ছিল। পিছন থেকে কলেজ স্ট্রিট মুখী বাস আসছিল। বাঁ দিক ঘেষতেই বাইকের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ি।”
কিন্তু কেন এ ভাবে রাখা হচ্ছে গাড়ি? হাতিবাগানমুখী বিধান সরণির বাঁ দিক কলকাতা পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। ডান দিক ১০ নম্বর ওয়ার্ডের। চার-পাঁচ বছর আগে বিধান সরণির ১১ নম্বর ওয়ার্ডের দিকটিকে পার্কিং জোন হিসাবে ঘোষণা করেছিল পুরসভা। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সকাল সাতটা থেকে রাত্রি ন’টা পর্যন্ত ৮০ নম্বর বিধান সরণি থেকে ১০০ নম্বর বিধান সরণি পর্যন্ত গাড়ি পার্ক করার অনুমতি দিয়েছে কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ। পুরসভা নির্দিষ্ট সংস্থাকে ভার দিয়েছে পুরসভার নির্ধারিত পার্কিং ফি আদায় করার। নির্ধারিত সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ন’টার পরে কেউ গাড়ি রাখলে দায়িত্ব তাঁদের নয়। অভিযোগ, প্রায়ই দেখা যায় সিনেমা হলের দর্শকদের ক্ষেত্রে রাত প্রায় দশটা হয়ে যায় গাড়ি সরাতে।
বিধান সরণির এই রাস্তায় বাস ও অন্যান্য গাড়ির পাশাপাশি ট্রামও চলে। বেশ কয়েকটি সিনেমা হল ও বাজারের কারণে সব সময় পথচারীর চাপ লেগেই থাকে। পুজো-পার্বণে ভিড়ের চাপে গাড়ি নড়ার উপায় থাকে না। “পাঁচ মাথা থেকে হাতিবাগান গাড়িতে যেতে কখনও ঘণ্টাখানেকও লেগে যায়। রাস্তার ধার ধরে গাড়ির সারি এর একটা বড় কারণ। এর জন্য তাড়াহুড়োর সময়ে ধাক্কাধাক্কি তো লেগেই থাকে,” বলছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী তপন সাহা।
কিছু ক্ষেত্রে অবৈধ পার্কিং যে হচ্ছে তা স্বীকার করে নিয়েছেন, পার্কিং ফি আদায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য, ‘৮০ থেকে ১০০ নম্বর বিধান সরণির বাইরে পার্কিং-এর দায়িত্ব পুরসভা কাউকে দেয়নি। ওই অবৈধ পার্কিং-এর ব্যাপারে বহু বার পুর প্রতিনিধিকে জানিয়েছি। পুজো-পার্বণে পুলিশ একটু নড়েচড়ে বসে। তা ছাড়া সারা বছর যে-কে-সেই।” ফুটপাথ দখল প্রসঙ্গে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের পুর প্রতিনিধি (তৃণমূল) করুণা সেনগুপ্ত বলেন, “বাম পুর বোর্ডের সময় থেকেই ওঁদের এতটা ছাড় দেওয়া হয়েছে। ফুটপাথের হকারদের নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে খুব শীঘ্র নির্দিষ্ট কিছু নীতি গ্রহণ করবে বর্তমান পুর-বোর্ড। তখন পথচারীদের যাতায়াতের সুবিধের দিকটি বিবেচনা করা হবে।” অবৈধ পার্কিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “নির্দিষ্ট অভিযোগ এলে আমি সরিয়ে দিই। তা সত্ত্বেও বেনিয়ম হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সচেতনতা আর সহযোগিতা দরকার।” পার্কিংয়ের কারণে অসুবিধার কথা মানছেন ১১ নম্বর ওয়ার্ডের পুর প্রতিনিধি (তৃণমূল) অতীন ঘোষ। তিনি বলেন, “বাজারে আসা ক্রেতাদের কথা ভেবেই পার্কিংয়ে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। পার্কিং সমস্যার স্থায়ী সমাধানে অর্থ ও পরিকাঠামোর পাশাপাশি প্রয়োজন অনেক জায়গার। উত্তর কলকাতায় এই স্থানাভাবটাই আসল বাধা।”
মেয়র পারিষদ (পার্কিং) রাজীব দেব। তিনি বলেন, “পার্কিংয়ে বৈধতা দেওয়ার আগেও ওখানে গাড়ি থাকত। দোকান, বাজার, সিনেমাহলে আসা মানুষ তা না হলে কোথায় গাড়ি রাখবেন? তবে অবৈধ পার্কিং দেখার দায়িত্ব ট্রাফিকের।”
বিধান সরণির কিছু জায়গায় অবৈধ পার্কিং-এর অভিযোগ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাফিক দফতরের ভারপ্রাপ্ত এক আধিকারিক বলেন, “মোড় থেকে একশো গজের মধ্যে গাড়ি রাখা যায় না। এ ছাড়াও অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য নিয়মিত কেস দেওয়া হয়। একশো টাকা নো পার্কিং ফাইন এবং ঘণ্টা প্রতি পঞ্চাশ টাকা জরিমানা দিয়েও যদি কেউ গাড়ি রাখেন তবে ট্রাফিক দফতরের কিছু করার থাকে না।”

ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ
First Page

Kolkata

Next Story




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.