|
|
|
|
বাম শিক্ষাকর্মী ইউনিয়নে ভাঙন খড়্গপুর কলেজে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
ক’দিন আগেই বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক অ্যাসোসিয়েশন (ভুটা) দখলে এসেছে তৃণমূলপন্থী শিক্ষকদের। এ বার ভাঙন বামপন্থী ‘পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষাকর্মী ইউনিয়ন’-এর খড়্গপুর কলেজ ইউনিটেও। ইউনিটের ৩২ জন সদস্য তৃণমূলের সংগঠনে যোগ দিতে চেয়ে আবেদন করেছেন। সেই দলে রয়েছেন ইউনিট সম্পাদক উৎপল বিশ্বাস, বিপ্রদাস সেনের মতো নেতারাও। এই দু’জন আবার সিপিএমের লোকাল কমিটির সদস্যও।
এক সঙ্গে ৩২ জন সদস্য সংগঠন ছেড়ে যাওয়ায় সিপিএমের অন্দরেও শোরগোল পড়েছে। শুরু হয়েছে চাপানউতোর। তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়েছেন, ওই ৩২ জনের তৃণমূল-সংগঠনে যোগ দিতে চাওয়ার আবেদন রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠানো হয়েছে। নেতৃত্ব অনুমতি দিলে তাঁদের তৃণমূলের সংগঠনের সদস্য করা হবে। আপাতত, শিক্ষাকর্মী ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এসে ‘খড়্গপুর কলেজ এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন’ নামে নতুন একটি সংগঠন তৈরি করেছেন উৎপলবাবুরা। তৃণমূলের শিক্ষা সেলের পক্ষে মধুসূদন গাঁতাইত বলেন, “শুধু খড়্গপুর নয়, মেদিনীপুর, পিংলা-সহ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষাকর্মীরাই তৃণমূলের সংগঠনে আসতে চাইছেন। আমরা তাঁদের আবেদন করতে বলেছি। রাজ্য নেতৃত্বই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।”
এত দিন খড়গপুর কলেজের অন্দরে তৃণমূলের কোনও প্রভাবই ছিল না। তা সে ছাত্র সংগঠনই হোক কিংবা শিক্ষাকর্মী সংগঠন। আধিপত্য ছিল একা সিপিএমেরই। কলেজের শিক্ষাকর্মী ইউনিয়নও ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণে। পদাধিকার বলে কলেজ পরিচালন সমিতির সদস্য ছিলেন ইউনিয়নের সম্পাদক। অথচ এমনিতে রেলশহরের রাজনীতিতে প্রভাব বেশি কংগ্রেস-তৃণমূলেরই। আসলে শহরে প্রভাব থাকলেও এই দু’দল এত দিন কলেজে সংগঠন বাড়ানোর প্রায় কোনও চেষ্টাই করেনি। রাজ্যে পালাবদলের পর অবশ্য পরিস্থিতি বদলেছে। কলেজের অধ্যাপক-শিক্ষাকর্মীরাও তৃণমূলের সংগঠনে নামে লেখাতে চাইছেন। সূত্রের খবর, কর্মীদের পদোন্নতির দাবি ঘিরে বেশ ক’দিন ধরেই কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চাপানউতোর চলছিল শিক্ষাকর্মী ইউনিয়নের। এমনকী সিপিএম নেতৃত্বের সঙ্গেও বিরোধ দেখা দেয় ইউনিয়ন সম্পাদকের। এর পরই আলোচনায় বসে সিপিএম নিয়ন্ত্রিত সংগঠনের নেতারা নতুন সংগঠন গড়ার সিদ্ধান্ত নেন।
সূত্রের খবর, খড়্গপুর কলেজে স্থায়ী শিক্ষাকর্মীর সংখ্যা ৩৬। অস্থায়ী ১০। তাঁদের মধ্যে থেকেই সব মিলিয়ে ৩২ জন এমপ্লিয়জ ইউনিয়ন নামের এই নতুন সংগঠনে যোগ দিয়েছেন। পাশাপাশি, তৃণমূলের সংগঠনে যোগ দিতে চেয়ে আবেদনও করেছেন। উৎপলবাবু প্রায় ২৫ বছর ধরে শিক্ষাকর্মী ইউনিয়নের খড়গপুর কলেজ ইউনিটের সম্পাদক ছিলেন। পরে সিপিএমের লোকাল কমিটিরও সদস্য হয়েছিলেন। তাঁর কথায়, “পার্টির একাংশ নেতা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। অথচ দলে তাঁদেরই গুরুত্ব বাড়ছে। এর প্রতিবাদেই দল ছেড়েছি।” এ প্রসঙ্গে সিপিএমের খড়্গপুর শহর জোনাল কমিটির সম্পাদক মনোজ ধর বলেন, “কলেজের শিক্ষাকর্মীরা নতুন সংগঠন গড়েছেন বলে শুনেছি। আমাদের দলের লোকাল কমিটির দুই সদস্যও দল ছেড়েছেন। ওঁদের বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরেই নানা অভিযোগও আসছিল।”
এ দিকে, পালাবদলের পরে যে ভাবে সিপিএম ছেড়ে অনেকে তৃণমূলে আসছেন, তাতে নতুন শাসকদলের পুরোনো নেতাদের একাংশ আবার ক্ষুব্ধ। তাঁদের বক্তব্য, দীর্ঘ দিন যাঁরা সিপিএমের ছত্রছায়ায় থেকে দুর্নীতি করেছেন, তাঁদের দলে নেওয়া অনুচিত। কেউ আসতে চাইলেই সঙ্গে সঙ্গেই মাথায় তোলা উচিত নয়। সব দিক খতিয়ে দেখেই দলে বা দলীয় সংগঠনে নেওয়া উচিত।” |
|
|
|
|
|