|
|
|
|
আরামবাগে সমস্যা একশো দিনের কাজের প্রকল্পে |
সুপারভাইজার বদলের দাবি তৃণমূলের, অভিযোগ |
পীযূষ নন্দী • আরামবাগ |
রাজ্যে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের জেরে বিভিন্ন এলাকায় পঞ্চায়েতে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। বহু ক্ষেত্রে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, বাম পঞ্চায়েত প্রধান-সহ সদস্যদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা হচ্ছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রধান ও সদস্যেরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সব মিলিয়ে রাজ্যের বহু বাম পরিচালিত পঞ্চায়েতে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। ১৩ মে ভোটের ফল প্রকাশের পর এমন সমস্যা হয়েছিল আরামবাগেও। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য বারে বারেই অভয় দিয়েছেন। পঞ্চায়েত প্রধানদের কাজে যোগ দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। কোথাও কাজে বাধা দেওয়া হবে না প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। সমস্যা অনেকটা কাটিয়ে ওঠা গেলেও কিছু ক্ষেত্রে তৃণমূলের ‘হস্তক্ষেপে’ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে এই মহকুমায়। তারই মধ্যে একটি হল মহাত্মা গাঁধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান বা একশো দিনের কাজের প্রকল্প।
আরামবাগ মহকুমার ৬৩টি পঞ্চায়েতের সব ক’টিই বাম পরিচালিত। বহু ক্ষেত্রে প্রধানদের অভিযোগ, একশো দিনের কাজের প্রকল্পের সুপারভাইজার বদলের দাবি তুলে তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব নিজেদের পছন্দের তালিকা অনুযায়ী সুপারভাইজার নিয়োগের জন্য চাপ দিচ্ছেন। যার জেরে কাজে সমস্যা হচ্ছে। কোথাও কোথাও ইতিমধ্যে সুপারভাইজারের প্যানেল বদলে ফেলতেও বাধ্য হয়েছেন প্রধানেরা। কোথাও আবার সুপারভাইজার বদল না করলে একশো দিনের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না বলে মনে করতে শুরু করেছেন তাঁরা। বিভিন্ন জায়গায় সুপারভাইজারদের উপরে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। প্রশাসনের বক্তব্য, একশো দিনের কাজের সুপারভাইজারদের প্রশিক্ষণ নিতে হয়। হঠাৎ করে তাঁদের বদলে ফেললে কাজে সমস্যা দেখা দিতে পারে। সমস্যার সমাধানে রাজনৈতিক নেতৃত্বদের কথা বলা হবে বলে প্রশাসনের তরফে প্রতিশ্রুতি মিলেছে।
সুপারভাইজার বদল চাই কেন?
আরামবাগের বাম পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলির বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন ধরেই নানা সময়ে অনৈতিকতা, স্বজনপোষণ, আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। নানা সময়ে অনেক পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ, ভাঙচুরও হয়েছে। একশো দিনের কাজের প্রকল্প নিয়েও দুর্নীতির অভিযোগ বিস্তর। কিছু ক্ষেত্রে প্রশাসনিক তদন্তে তার সত্যতাও ধরা পড়েছে। সুপারভাইজার পদটিও বাম-ঘনিষ্ঠরাই এত দিন পেয়ে আসতেন বলে অভিযোগ। এ বার রাজনৈতিক পালা বদলের পরে বামেদের আধিপত্য খর্ব করতে তৃণমূল উঠেপড়ে লেগেছে।
কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সার্বিক ভাবে প্রকল্পের কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। কী বলছেন তৃণমূল নেতৃত্ব?
পুড়শুড়ার বিধায়ক পারভেজ রহমান, খানাকুলের বিধায়ক ইকবাল আহমেদ এবং আরামবাগের বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরার বক্তব্য, “পঞ্চায়েত প্রধান এবং সদস্যেরা অধিকাংশ সময়ে অফিসে গরহাজির থাকছেন। তাঁদের নির্ভয়ে এবং নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করার আবেদন আমরা বারবারই জানাচ্ছি। যারা গোলমাল সৃষ্টি করছে তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি থানায় অভিযোগ জানাতে বলেছি। সেই সঙ্গে আমাদেরও জানাতে পরামর্শ দিয়েছি। আমরা চাই, একশো দিনের কাজের প্রকল্প-সহ পঞ্চায়েতের যাবতীয় কাজে গতি আসুক।’’
কিন্তু প্রধানদের বাস্তব অভিজ্ঞতা অন্য কথাই বলছে।
আরামবাগের সালেপুর ২ পঞ্চায়েতের কথাই ধরা যাক। এখানে রাতারাতি ৩০ জন সুপারভাইজারকে বদলে ফেলে তৃণমূলের পছন্দ মতো সুপারভাইজার নিয়োগ করতে হয়েছে বলে অভিযোগ। পঞ্চায়েত প্রধান সিপিএমের নয়ন সাঁতরা বলেন, “ব্লকের অনুমতি না নিয়েই আমাকে এই পরিবর্তন করতে হয়েছে। গ্রামোন্নয়নের স্বার্থে অন্যায় জুলুম মেনে নিতে হয়েছে।” মলয়পুর ২ পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের সহদেব সামন্ত বলেন, “এখনও একটাও কাজ শুরুই করতে পারিনি। সুপারভাইজার পরিবর্তনের জন্য আলাদা তালিকা দিয়েছে তৃণমূল। ওদের সঙ্গে কয়েক বার বসেও ফয়সালা হয়নি। অগত্যা সুপারভাইজার পাল্টানো ছাড়া কোনও রাস্তা নেই।” খানাকুল ২ ব্লকের নতিবপুর ১ পঞ্চায়েতের প্রধান জাকির হোসেন, পুড়শুড়ার শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের প্রধান দীনবন্ধু পাকিরা, গোঘাটের হাজিপুর পঞ্চায়েতের প্রধান জগন্নাথ দলুই প্রমুখের বক্তব্য, সুপারভাইজার পরিবর্তনের দাবি আছে। আলোচনা চলছে।
এ বিষয়ে বিডিওদের বক্তব্য, পঞ্চায়েতগুলিকে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে, উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে তবেই সুপারভাইজার বদল করতে হবে। এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রধানদের একাংশ অবশ্য মনে করছেন, বিডিওরাও এ কথা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন, চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে উপায় নেই। ফলে, ‘সঙ্গত কারণ’ খুঁজে বের করে সুপারভাইজার বদল গ্রামের উন্নয়নের স্বার্থে করতেই হবে। গত কয়েক মাস ধরে একে তো ভোট নিয়ে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ব্যস্ততা ছিল, তার উপরে বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনার ফলেও কাজে প্রচুর সমস্যা হয়েছে। ভোটের ফল প্রকাশের পরে আবার সমস্যার মাত্রা অন্য। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, একশো দিনের কাজের অগ্রগতি খুবই খারাপ এই মহকুমায়। শীঘ্রই পরিস্থিতি শুধরাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন এই প্রকল্পের জেলা নোডাল অফিসার মৃদুল হালদার। তিনি বলেন, “সুপারভাইজার বদলকে কেন্দ্র করে গোলমালের কোনও খবর লিখিত ভাবে না পেলেও বিষয়টি অজানা নয়। সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত এবং বেনিফিসিয়ারি কমিটি বসে বিষয়টির সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আমরা ঘন ঘন সুপারভাইজার বদলাতে বারণ করেছি। বিশেষ প্রশিক্ষণ ছাড়া এই কাজ সম্ভব নয়।” গত ৬ জুন জারি করা এক নির্দেশে আরামবাগের মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগীও জানান, কারণ ছাড়া সুপারভাইজার বদলানো যাবে না। তারপরেও পরিস্থিতি অপরিবর্তিত। |
|
|
|
|
|