আলোচনা চায় টাটারা, খুশির হাওয়া সিঙ্গুরে |
গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় • সিঙ্গুর |
টানা চার বছরের ‘সংঘাত’ কেবলই অনিশ্চয়তা বাড়িয়েছে। এখন বরং কোনও ‘রফাসূত্র’ বেরোলেই নিশ্চিন্ত হয় সিঙ্গুর।
সিঙ্গুরে জমি ফেরত দেওয়ার আইনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে টাটা মোটরস আদালতে যাওয়ার পর থেকেই অনিশ্চয়তার কালো মেঘ ঝুলছিল সিঙ্গুরে। কিন্তু শুক্রবার টাটাদের আইনজীবী প্রয়োজনে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা তুলতেই মেঘ অনেকখানি কেটে গিয়েছে।
সিঙ্গুর কৃষিজমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক তথা হরিপালের তৃণমূল বিধায়ক বেচারাম মান্নার কথায়, “মামলার দড়ি টানাটানির বদলে টাটারা যদি আলোচনার টেবিলে আসেন, তাতে সব পক্ষেরই লাভ। আমরা তাকে স্বাগত জানাব।” অর্থাৎ, দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের বদলে টাটারা সমঝোতার পথে এলেই জমি ফেরতের বিষয়টি ত্বরান্বিত হতে পারে বলে ‘অনিচ্ছুক’ চাষিরা মনে করছেন। |
|
প্রকল্প এলাকায় পুলিশের নজরদারি। |
টাটাদের প্রকল্প এলাকায় সম্পত্তির নিরাপত্তার কী ব্যবস্থা হয়েছে, বৃহস্পতিবারই তা রাজ্যের কাছে জানতে চেয়েছিল হাইকোর্ট। তার পরেই গোটা কারখানা চত্বর নিরাপত্তার ঘেরাটোপে মুড়ে ফেলা হয়। টাটারা যাতে ফের নিরাপত্তার ফাঁকফোকর নিয়ে আদালতে নালিশ করার সুযোগ না পায়, মূল লক্ষ্য সেটাই। ইট চুরির অভিযোগে বৃহস্পতিবারই এক জনকে ধরা হয়েছিল। শুক্রবার সকালে মোটরবাইকে চড়ে প্রকল্প এলাকায় ঢুকে পড়ায় ফের দুই যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
নিরাপত্তা জোরদার করতে ইতিমধ্যেই প্রকল্প এলাকার ভিতরে চারটি প্রান্তে ‘ওয়াচ টাওয়ার’ বসানো হয়েছে। পুলিশকর্মীরা দূরবীন চোখে নজরদারি চালাচ্ছেন। জায়গায় জায়গায় পুলিশ চৌকিও বসেছে। ৯৯৭ একর এলাকার নানা প্রান্ত চষে বেড়িয়েছেন আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) জুলফিকার হাসান, ডিআইজি (বর্ধমন রেঞ্জ) জগমোহন এবং হুগলির পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী। প্রকল্প এলাকায় না ঢোকার আর্জি জানিয়ে ফের আশপাশের গ্রামগুলিতে প্রচার চালানো হয়েছে। গ্রামবাসীদেরও দিনভর ধারে-কাছে ঘেঁষতে দেখা যায়নি। |
|
সিঙ্গুরের কারখানার ভিতরে নিরাপত্তা। |
এই দমচাপা অবস্থার মধ্যে এক ঝলক স্বস্তির বাতাস বয়ে যায় টাটারা আলোচনার কথা তুলেছে বলে খবর আসতেই। বেড়াবেড়ি মৌজার ‘অনিচ্ছুক’ চাষি বাসুদেব দাসের তিন বিঘা জমি প্রকল্প এলাকায় গিয়েছে। তাঁর কথায়, “দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) জমি ফেরানোর কাজ শুরু করেছেন। টাটারা আদালতে যাওয়ায় সাময়িক ছেদ পড়েছে। আমরা নিশ্চিত, দিদি যখন আছেন জমি ফেরত পাবই।” একই বক্তব্য খাসেরভেড়ির যামিনী দাসেরও। সিংহেরভেড়ির চাষি গোপাল দাস বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই জমিহারারা ফয়সালার অপেক্ষায় আছেন।” কৃষিজমি রক্ষা কমিটির নেতা মানিক দাস বলেন, “আমরা চাইছি, আমাদের নেত্রী যে পথে এগোতে চাইছেন, সেই পথেই দ্রুত সমাধান সূত্র খুঁজে নিক সব পক্ষ।”
চার বছর কেটে গিয়েছে। সিঙ্গুরের ‘অনিচ্ছুক’ চাষিরা যে আর বেশি ধৈর্য ধরতে আগ্রহী নন, তা তাঁদের কথাতেই স্পষ্ট।
|
ছবি: তাপস ঘোষ। |
|