আজ পূর্ণিয়া উপনির্বাচন
অস্তিত্ব রক্ষায় লালু-রামবিলাস, প্রচারে নামতে হল নীতীশকেও
বিজেপি বিধায়ক রাজকিশোর কেশরী হত্যা ও তার বিরুদ্ধে লাগাতার যৌন নিগ্রহের অভিযোগ কি পূর্ণিয়ার বিজেপি ভোট-ব্যাঙ্কে প্রভাব ফেলবে? ফারবিশগঞ্জে পুলিশের গুলিতে চার জনের মৃত্যুর পরে পূর্ণিয়ার সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কি শাসক জোটের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে? বাংলায় সাম্প্রতিক ভরাডুবির কারণে পূর্ণিয়ায় সিপিএমের প্রভাব কি আরও কমবে? অন্য দিকে, কেন্দ্রে পর পর দুর্নীতির অভিযোগে পূর্ণিয়ায় কংগ্রেসের পায়ের নীচে জমি কি আরও সরবে?
আগামীকাল, ২৫ জুন পূর্ণিয়া বিধানসভার উপনির্বাচন এ সবের উত্তর দেবে।
গত ৪ জুলাই যৌন নিগ্রহের অভিযোগ তুলে বিজেপি বিধায়ক রাজকিশোর কেশরীর উপরে হামলা চালান স্থানীয় স্কুল-শিক্ষিকা রূপম পাঠক। ওই হামলায় মৃত্যু হয় বিধায়কের। এ বারে প্রয়াত বিধায়কের স্ত্রী কিরণ কেশরীকেই প্রার্থী করেছে বিজেপি। রূপম পাঠকের অভিযোগ খণ্ডন করে যিনি বলছেন, “পূর্ণিয়ার মানুষ এ নিয়ে কোনও আলোচনাই করছেন না। তাঁরা সবই জানেন।” আর ফারবিশগঞ্জের ঘটনা? কিরণের উত্তর, “ওটা তো পূর্ণিয়ার ঘটনাই নয়। বিরোধীদের ও-সব প্রচারে পূর্ণিয়ার মানুষ কান দেবেন না।”
কিন্তু রাজনীতির ময়দানে ‘নবীন’ কিরণ যতই দাবি করুন না কেন, বিহারের শাসক জোটের নেতারা আশঙ্কায় রয়েছেন। বুঝতে পারচ্ছেন, সংখ্যালঘু ভোট সরে গেলে সর্বনাশ। তাই শেষ মুহূর্তে খোদ নীতীশ কুমারকে পূর্ণিয়ায় উড়িয়ে এনেছিলেন বিজেপি নেতারা। সেখানে সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে নীতীশের দাবি, “ঘাবড়াবেন না। ফারবিশগঞ্জে গুলি চালনার জন্য যে বা যারা দায়ী তাদের আমি চরম শাস্তি দেবই। আপনারা শুধু একটু ধৈর্য্য ধরুন।” প্রাক্তন সতীর্থ রাজকিশোর কেশরী সম্পর্কেও দরাজ সার্টিফিকেট নীতীশের, “ওঁর মৃত্যুর পর অনেক কথা উঠেছিল। তাই আমি পুরো ঘটনার তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছি। কেশরী খুবই সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন। সব সময়ে পূর্ণিয়ার উন্নয়নের কথা ভাবতেন।”
আর এ কথা বলেই ফাঁপড়ে পড়েছেন নীতীশ। প্রয়াত ডাকসাইটে নেতা অজিত সরকারের ছেলে এবং পূর্ণিয়ার সিপিএম প্রার্থী অমিত সরকার বলছেন, “গত বছর তো ওঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে বলে মুখ্যমন্ত্রী এক বার রাজকিশোরকে মঞ্চ থেকেই নামিয়ে দিয়েছিলেন। এখন অন্য রকম বলছেন কেন!” তবে সামগ্রিক ভাবে রূপম পাঠকের মামলা নিয়ে রা কাড়ছেন না অমিত। তাঁর কথায়, “ব্যক্তিগত কোনও ঘটনা নিয়ে আমি রাজনীতি করতে চাই না। আমার কাছে অনেক বড় বিষয়, গত ছ’মাস ধরে সীমাঞ্চল এলাকায় বারবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপরে সরকারপক্ষের হামলা নেমে এসেছে। ফারবিশগঞ্জে পুলিশ কী করেছে, তা তো সবাই নিজের চোখেই দেখেছেন। বর্তমান সরকার এখন আকণ্ঠ দুর্নীতিতে ডুবে রয়েছে। তাই এই সরকারকে ধাক্কা দেওয়া দরকার।”
আর সেই ধাক্কাটা সিপিএমের দ্বারা হবে না বলেই দাবি করছেন কংগ্রেস প্রার্থী রামচরিত্র যাদব। তাঁর কথায়, “বাংলায় সিপিএম তো ধুয়েমুছে গিয়েছে। পূর্ণিয়ার আর কেমন করে থাকবে! এখানে বিরোধী শক্তি আমরাই। পূর্ণিয়ার মানুষ আমাদেরই ভোট দেবেন।”
সিপিএমের ভরাডুবির কথায় একটু ব্যাকফুটে অস্ট্রেলিয়া থেকে মোটা মাইনের চাকরি ছেড়ে পূর্ণিয়ায় রাজনীতি করতে আসা অজিত-পুত্র। তাঁর কথায়, “এটা বলার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু আমার সাফ কথা, বাংলায় যখন সিপিএমের রমরমা ছিল তখন কি সবাই দু’হাত তুলে আমাদের সমর্থন করেছিলেন। এখন খারাপ সময়েই বা তার প্রভাব পড়বে কেন? এখানকার সিপিএম পার্টি আর বাংলার সিপিএম, এক নয়।” অন্য দিকে, দুর্নীতির প্রশ্নে কংগ্রেস প্রার্থীর ঢাল মনমোহন-সনিয়া। তিনি বলছেন, “দুর্নীতি তো হয়েইছে। কিন্তু মনমোহন সিংহ এবং সনিয়া গাঁধী কখনওই দুর্নীতির সঙ্গে আপস করেননি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকেও জেলে পুরেছেন।”
এ সব তো গেল বাইরের লড়াই। পূর্ণিয়ার উপনির্বাচন ঘিরে আরও একটা লড়াই চলছে নেপথ্যে। বিধানসভা নির্বাচনের পরে এই প্রথম জোট ভেঙেছে লালু-রামবিলাসের। লালু সমর্থন করেছেন তাঁর পুরনো বন্ধু সিপিএম-কে। আর কেন্দ্রে প্রভাব বজায় রাখতে রামবিলাস কংগ্রেসের সঙ্গে। পূর্ণিয়ায় কংগ্রেস-সিপিএম লড়াইয়ের মধ্যে পরোক্ষ লড়াই চলছে লালু-রামবিলাসেরও। দু’পক্ষের রাজ্যস্তরের নেতারা কিন্তু পুরো শক্তি লাগিয়েছেন নিজেদের সমর্থিত দলকে জেতাতে। এখন দেখার, এই মর্যাদার লড়াইয়ে কে জয়ী হন, নীতীশ, লালু না রামবিলাস।
Previous Story Desh Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.