|
|
|
|
সরকারকে নিয়ে দলের মন্তব্যে রাশ সনিয়ার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
রামদেব পর্ব থেকে শুরু করে লোকপাল বিল—বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সরকার এবং দলের মধ্যে যে তীব্র মতান্তর শুরু হয়েছে, আজ কঠোর হাতে তার রাশ টানতে চাইলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকে জানিয়ে দিলেন, সঙ্কটের মুহূর্তে দল ও সরকারের সমন্বয়ই হওয়া উচিত মূল মন্ত্র। বিভিন্ন বিষয়ে সরকার যে নীতি নেবে, তা নিয়ে দলের কোনও নেতাই যেন ‘অহেতুক’ মন্তব্য না করেন। যদি কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে হয়, তা দেবেন দলীয় মুখপাত্ররাই।
ওয়ার্কিং কমিটি পুনর্গঠনের পর এই প্রথম তার কোনও সুসংহত বৈঠক হল। তার পর সাংবাদিক বৈঠকে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবেই দলের প্রধান মুখপাত্র জনার্দন দ্বিবেদী বলেন, “লোকপাল বিল নিয়ে সরকার এখনও পর্যন্ত যে অবস্থান নিয়েছে, দল তথা ওয়ার্কিং কমিটি তা সমর্থন করছে। এর পর সর্বদল বৈঠক ডেকে সরকার সর্বসম্মতিতে বিলের যে খসড়া প্রস্তুত করবে তাকেও সমর্থন জানাবে কংগ্রেস। তখন লোকপাল বিল নিয়ে কংগ্রেসের মত জানাতে পুস্তিকাও প্রকাশ করা হবে।” বৈঠকের পর সরকার এবং দলের সমস্ত বিষয় নিয়ে মুখ খুলতে অভ্যস্ত দিগ্বিজয় সিংহকে লোকপাল বিল নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি কোনও মন্তব্য করতেই রাজি হননি। কংগ্রেস সূত্রে বলা হয়, দশ জনপথের দাওয়াই যে কাজ করতে শুরু করেছে, তা দিগ্বিজয়ের আচরণেই প্রমাণিত। মতান্তর মেটানোর চেষ্টার পাশাপাশি, আন্না হাজারে ও তাঁর সমর্থকদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার জন্য, সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে ওয়ার্কিং কমিটি। কমিটির সিংহভাগ সদস্যেরই মত, নিজেদের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি হিসাবে দাবি করে কোনও গোষ্ঠী যদি সংসদীয় গণতন্ত্রের পথ এড়িয়ে চাপের রাজনীতি করে, সরকার যেন তা বরদাস্ত না করে। কেউ যদি শান্তিপূর্ণ ভাবে ‘সৎ ও সঙ্গত’ পরামর্শ নিয়ে আসেন, তাঁর জন্য সরকার ও দলের দরজা খোলা থাকবে। |
|
কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের পাশে
দলীয় সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে। এপি |
আন্না হাজারেদের সম্পর্কে সরকার এবং দলের এই অবস্থান নতুন নয়। কংগ্রেস কোর গ্রুপে আলোচনার মাধ্যমে আগেই এই অবস্থান নেওয়া হয়েছে। আজকের বৈঠকে মুখ্য বিষয়ই ছিল, সরকার ও দলের মধ্যে সমন্বয় ফেরানো। কারণ, রামদেব পর্ব হোক বা লোকপাল বিলসাম্প্রতিক অতীতে সরকার ও দলের একাধিক নেতা প্রকাশ্যে নানা মত দিতে শুরু করেছিলেন। ওয়ার্কিং কমিটির এক শীর্ষ নেতার কথায়, প্রতিটি ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, কী ভাবে কংগ্রেসের পরতে পরতে অন্তর্দ্বন্দ্ব বাসা বেঁধেছে। সামগ্রিক ভাবে কংগ্রেস সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে মানুষের কাছে।
এই পরিস্থিতিতেই ক’দিন আগে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে বৈঠক করেন সনিয়া গাঁধী। সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রীও সনিয়াকে জানান, কংগ্রেস নেতারা স্বাভাবিক ভাবেই রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে মুখ খুলবেন। কিন্তু দলের নেতাদের একাংশ যে ভাবে সরকারের সমালোচনা করছেন, তাতে সরকারের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। আজ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গ তোলেন সনিয়া। বলেন, সরকার দুর্নীতি দমনে বদ্ধপরিকর। জনহিতকর কাজও করছে। মতান্তর সরিয়ে রেখে বরং বেশি করে সেই কাজের প্রচার হওয়া উচিত। এর পরেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে লোকপাল বিল নিয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলেন কংগ্রেস সভানেত্রী। প্রণববাবু বলেন, এমন নয় যে লোকপাল বিল নিয়ে সরকার উদাসীন ছিল। ২০১০ সালেই এর একপ্রস্ত খসড়া সরকার রচনা করেছিল। তার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকার ফের আলোচনা শুরু করেছে। তার পরে কমিটির সদস্যরা নিজেদের মত দেন। তাতে অধিকাংশ সদস্যই লোকপাল বিলের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর পদ রাখার বিরোধিতা করেন। রাহুল গাঁধী কোনও মত দেননি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দলের মনোভাবকে তিনি মর্যাদা দিয়েই চলবেন।
চুম্বকে লোকপাল বিল নিয়ে সরকার এখনও পর্যন্ত যে অবস্থান নিয়ে চলেছে, তাই কংগ্রেসের অবস্থান। তবে এর পরেও কংগ্রেস এ ব্যাপারে সর্বদল বৈঠক ডেকে সর্বসম্মতি গড়ে তোলার দরজা কৌশলে খুলেই রেখেছে। সরকারের তরফে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী বীরাপ্পা মইলিও আজ বলেছেন, এখনও পর্যন্ত বিলের চূড়ান্ত খসড়া তৈরি হয়নি। তা হবে সম্ভবত ৩ জুলাই সর্বদল বৈঠকের পর। রাজনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, কংগ্রেস নেতৃত্বও জানেন, লোকপাল বিলের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর পদ রাখা বা আন্না হাজারের অন্য ‘অনায্য’ দাবি মানা বিজেপি-র পক্ষে মানা সম্ভব নয়। তাঁরা চাইছেন, বিজেপি-ও তা প্রকাশ্যে বলুক। সেই প্রেক্ষিতে সনিয়া গাঁধীও আজ তাই বুঝিয়ে দিয়েছেন, আগামী দিনে বিরোধীদের সঙ্গে সেই কৌশলের লড়াইয়ের আগে সরকার ও দলের সমন্বয় বজায় রাখাই এখন আশু প্রয়োজন। |
|
|
|
|
|