|
|
|
|
কাটোয়া পাশ, ভাতার ফেল |
দেরিতে আসায় স্বাস্থ্যকর্মীদের শো-কজ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বর্ধমান ও কাটোয়া |
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজে না আসায় ভাতার হাসপাতালের দুই কর্মীকে শো-কজ করলেন দুই স্বাস্থ্য কর্তা। বৃহস্পতিবার ভাতার ও কাটোয়া হাসপাতাল আচমকা পরিদর্শন করলেন রাজ্যের অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা (যক্ষ্মা) শ্যামাপদ বসাক এবং জেলার যক্ষা আধিকারিক অমিতাভ সাহা। ভাতারে কর্মীদের ভর্ৎসনা করলেও কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের পরিকাঠামো আগের থেকে উন্নত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
বৃহস্পতিবার পরিকাঠামো খতিয়ে দেখতে ভাতার চিত্তরঞ্জন গ্রামীণ হাসপাতাল ও কাটোয়া হাসপাতালে যান ওই দুই স্বাস্থ্য কর্তা। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ ভাতারে পৌঁছন তাঁরা। দুই অফিসার বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী হাসপাতাল পরিদর্শন করে রিপোর্ট দিতে হবে। সেই কাজেই এসেছি।” হাসপাতাল ঘুরে দেখে বেশ কিছু ত্রুটি নজরে পড়ে তাঁদের। এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু না জানাতে চাইলেও রিপোর্টে এই সব ত্রুটির উল্লেখ রাখা হবে জানিয়েছেন তাঁরা।
পরিদর্শন চলাকালীন সওয়া ১০টা নাগাদ তড়িঘড়ি হাসপাতালে ঢোকেন প্যাথলজি বিভাগের কর্মী সুধাকর পাল। স্বাস্থ্য কর্তাদের সামনেই তাঁকে ভর্ৎসনা করেন বিএমওএইচ হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়। সুধাকরবাবু দেরি করে এলেও এক্স-রে বিভাগের কর্মী স্বপন কুণ্ডু স্বাস্থ্য কর্তারা থাকাকালীন হাসপাতালে আসেননি। বিএমওএইচ-কে অবিলম্বে ওই দুই কর্মীকে শো-কজের নির্দেশ দেন আধিকারিকেরা। তাছাড়া দেরিতে আসা কর্মীদের তালিকা তৈরি করে জেলাশাসক ও মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে পাঠানোর নির্দেশও দেন তাঁরা। সুধাকরবাবু যেতে দেরি হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, “এর পরে নির্ধারিত সময়েই কাজে যাব।” পরিদর্শনের সময়ে উপস্থিত জনতা প্রশ্ন করে, অনেক চিকিৎসকই সময় মতো আসেন না। তাঁদের ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে? স্বাস্থ্য কর্তারা এ ব্যাপারে কিছু না বললেও বিএমওএইচ বলেন, “নিয়ম হল, চিকিৎসক-সহ সব স্বাস্থ্যকর্মীদের হাসপাতালের ৮ কিলোমিটারের মধ্যে থাকতে হবে। কিন্তু এখানে চিকিৎসক বা নার্সদের থাকার উপযুক্ত আবাসন নেই। তবে এই সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে।” |
|
আচমকাই হাজির রাজ্যের অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা।
বৃহস্পতিবার কাটোয়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র। |
অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা (যক্ষ্মা) শ্যামাপদবাবু জানান, মাসে এই হাসপাতালে প্রায় ১৬০ জনের থুতু পরীক্ষা করা হয়। তার মধ্যে যক্ষ্মায় আক্রান্ত বলে চিহ্নিত হন ১৬ থেকে ২০ জন। তিনি বলেন, “এখানে আরও তিন জন চিকিৎসক নিযুক্ত হবেন। এক জন শিশু চিকিৎসকও নিয়োগ করা হবে। শল্য চিকিৎসার জন্য অ্যানাস্থেটিস্ট নিযুক্ত হবেন। হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়ে যে সমস্যা আছে, তা-ও মিটিয়ে ফেলা হবে।” প্রসঙ্গত, কয়েক দিন আগে এই হাসপাতাল পরিদর্শন করে জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বিডিও, বিএমওএইচ এবং সিএমওএইচকে কয়েকটি ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরে জেলাশাসক জানিয়েছেন, বিডিও এবং সিএমওএইচ-কে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তা তাঁরা করে ফেলেছেন। কিন্তু বিএমওএইচ-কে হাসাপাতালে ওটি ও প্যাথলজি সংক্রান্ত পরীক্ষা নতুন করে চালু করার দায়িত্ব দেওয়া হলেও তিনি তা করেননি। এ দিন বিএমওএইচ হারাধনবাবু বলেন, “ওটি তৈরি আছে। তবে প্যাথলজির কাজ যাদের দিয়ে করানোর কথা, তারা যোগাযোগ করেনি। তাই অন্য সংস্থার খোঁজ চলছে।”
এ দিন ঘণ্টাখানেক ভাতার হাসপাতাল পরিদর্শনের পরে দুই স্বাস্থ্য কর্তা যান কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে। ছিলেন কাটোয়ার এসিএমওএইচ শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে হাসপাতালের বহির্বিভাগ পরিদর্শন করেন তাঁরা। প্যাথলজি বিভাগে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শ্যামাপদবাবু। তিনি জানান, যক্ষ্মা নির্ণয়ের জন্য থুতু ঠিক ভাবে সংগ্রহ করা হচ্ছে না। ওই বিভাগের কর্মীদের এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পরামর্শও দেন তিনি। শিশু বিভাগের একটি ঘরে বিছানায় দু’টি বিড়ালকে শুয়ে থাকতে দেখে প্রশ্ন করেন আধিকারিকেরা। হাসপাতালের সহকারী সুপার (নন-মেডিক্যাল) অনন্য ধর অবশ্য বলেন, “ওই ঘরে তো কোনও শিশু থাকে না।”
তবে কাটোয়া হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা-সহ বেশ কিছু পদ্ধতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন দুই অধিকর্তা। শ্যামাপদবাবু বলেন, “এর আগে তিন বার এখানে ঘুরে গিয়েছি। এখন তার থেকে অনেকটা উন্নতি হয়েছে।” |
|
|
|
|
|