বেসরকারি হাসপাতালেও নজর
দিন, চিঠি পুত্রহারা বাবার

মমতা দেখুন
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছেন এক পুত্রহারা বাবা। তাঁর আর্জি, “সরকারি হাসপাতালগুলির হাল ফেরানোর জন্য আপনার এত চেষ্টা। দয়া করে বেসরকারি হাসপাতালগুলির দিকেও এক বার তাকান। সমস্যা এখানেও কিছু কম নেই।”
সোনারপুরের ঘোষপাড়ার বাসিন্দা ওই ব্যক্তির নাম উৎপল গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, চিকিৎসায় গাফিলতিতেই তাঁর ১৮ বছর বয়সী ছেলের মৃত্যু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে উৎপলবাবু জানিয়েছেন, ‘অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিস’-এ আক্রান্ত তাঁর একমাত্র ছেলে অর্ণবকে ই এম বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল গত ১৩ মে। এর আগে ২০০৭ সালেও অর্ণব এক বার ওই রোগে আক্রান্ত হয়ে সেই হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছিলেন। সেই সময়ে যে গ্যাসট্রো-এন্টেরোলজিস্ট তাঁকে দেখেছিলেন, এ বারেও সেই চিকিৎসকের অধীনেই তাঁকে ভর্তি করা হয়। উৎপলবাবুর অভিযোগ, ওই চিকিৎসক তাঁর ছেলের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েও তাঁদের না জানিয়ে শহরের বাইরে ছুটিতে চলে যান। সেই সময়েই অর্ণবের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সে বিষয়ে তাঁদের পুরোপুরি অন্ধকারে রেখেছিলেন। তার পরে এক প্রকার বিনা চিকিৎসায় দু’দিন কাটানোর পরে ১৫ মে অর্ণবের মৃত্যু হয়।
হাসপাতালের রিপোর্ট উদ্ধৃত করে উৎপলবাবু এ-ও অভিযোগ করেছেন, অর্ণবের প্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরীক্ষা সবই অত্যন্ত দেরিতে হয়েছে। এমনকী, ১৪ তারিখ রাতে তাঁর ছেলের অবস্থা যখন আরও খারাপ হচ্ছে, তখন কোনও গ্যাসট্রো-এন্টেরোলজিস্টকে না ডেকে এক জন নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া হয়।

অর্ণব গঙ্গোপাধ্যায়
উৎপলবাবুর অভিযোগ, অর্ণব বারবার তাঁর কষ্টের কথা চিকিৎসক এবং নার্সদের জানিয়েছিলেন। কিন্তু কেউ কান দেননি। তিনি বলেন, “ভিন্ রাজ্যের নার্সদের ওয়ার্ডে রাখা হত। তাঁরা বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি কোনও ভাষাই বোঝেন না। ১৪ তারিখ যখন আমার ছেলের অবস্থা খারাপ হচ্ছে, তখন আমরা বারবার চেষ্টা করেও নার্সদের তা বোঝাতে পারিনি।”

‘রবীন্দ্রনাথ টেগোর ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিয়াক সায়েন্স’ কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই অভিযোগ মানতে চাননি। মেডিক্যাল

সুপার জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, খুব সঙ্কটজনক অবস্থাতেই অর্ণবকে ভর্তি করা হয়েছিল এবং পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝেই তাঁকে আইটিইউ-তে স্থানান্তরিত করা হয়। তিনি বলেন, “অর্ণবের শারীরিক অবস্থা যে ক্রমশ খারাপ হচ্ছে, তা জানানো হয়েছিল রোগীর বাবাকে। আমরা ওঁকে বাঁচানোর সব রকম চেষ্টাই করেছিলাম।”
‘অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিস’-এর রোগীর চিকিৎসায় নিউরোলজিস্ট কেন ডাকা হল? জয়দীপবাবু জানান, আইটিইউ-তে অর্ণবের ‘কনভালশন’ হয়। তাই নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নেন তাঁরা। তবে, যে চিকিৎসকের অধীনে অর্ণব ভর্তি ছিলেন, তিনি কেন রোগীর বাড়ির লোককে না জানিয়েই ছুটিতে চলে যান? এ বিষয়ে অবশ্য কর্তৃপক্ষ কোনও জোরদার যুক্তি দিতে পারেননি। তাঁদের বক্তব্য, “তিনি অন্য এক চিকিৎসককে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েই গিয়েছিলেন।”
উৎপলবাবু বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের দ্বারস্থ হয়েছেন। জানিয়েছেন রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলকেও। কিন্তু কোনও তরফ থেকেই তাঁর সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করা হয়নি। পেশায় কলেজশিক্ষক উৎপলবাবুর কথায়, “বেসরকারি হাসপাতালের প্রসঙ্গ উঠলেই সকলে চুপ করে যান। তাদের কি যা খুশি তা-ই করার অধিকার রয়েছে? আমার ছেলে তো চলে গেল। কিন্তু আমার মতো অবস্থা আর কারও যেন না হয়, সেটাই চাইছি।”
কেন এমন একটি অভিযোগ সম্পর্কে কোনও তদন্ত শুরু হল না? স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, তাঁরা হাসপাতালের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে পাঠিয়েছেন। প্রক্রিয়া শুরু হবে। রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের কর্তারাও জানিয়েছেন, প্রক্রিয়া শুরু হতে কিছুটা সময় লাগবে। দিল্লিতে ‘মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া’র দ্বারস্থও হয়েছিলেন উৎপলবাবু। তারা রাজ্য কাউন্সিলকে আগামী ছ’মাসের মধ্যে বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে বলেছে।
যদিও একমাত্র সন্তানকে হারানোর পরে আর অপেক্ষা করার ধৈর্য নেই সন্তানহারা ওই দম্পতির। তাঁদের আশা, মুখ্যমন্ত্রী হয়তো এই আর্জি শুনবেন।
First Page Swasth Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.