শহরের বাণিজ্যিক এলাকায় বেআইনি নির্মাণ ভাঙার কাজ থমকে থাকায় শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্তকে ভর্ৎসনা করলেন রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। বৃহস্পতিবার পূর্ত দফতরের বাংলোয় শিলিগুড়ির পুরসভার কাজকর্ম খতিয়ে দেখতে বৈঠক ডাকেন মন্ত্রী। সেখানে মেয়র, ডেপুটি মেয়র, মেয়র পারিষদ, বরো চেয়ারম্যান-সহ আধিকারিকেরা উপস্থিত ছিলেন। পুরসভার আর্থিক অবস্থা, বিভিন্ন প্রকল্পে, বিভাগের কাজকর্মের খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি বেআইনি নির্মাণ ভাঙার বিষয়টি জানতে চান গৌতমবাবু। পুরসভার ওই অভিযান শুরু করার পরে হঠাৎ করে কেন তা থমকে রয়েছে তা জানতে চান মন্ত্রী। সেই সঙ্গে যত উপর মহলেই হাত থাকুক না কেন বেআইনি নির্মাণ ভাঙা নিয়ে কারও সঙ্গে আপস করা হবে না বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন। বিষয়টি মেয়র ঠিকঠাক না দেখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন দ্রুত তা শুরু করার জন্য নির্দেশ দেন গৌতমবাবু। তিনি বলেন, “সম্প্রতি কিছু বেআইনি নির্মাণ ভাঙা হয়েছে। কিন্তু এখনও অনেক বাকি রয়েছে। বসতি এলাকায় অতটা কঠোর না হলেও বাণিজিক্য এলাকায় বেআইনি নির্মাণ সব ভাঙা হবে। যে যা খুশি করবেন এটা মানা হবে না। অনেক হয়েছে। মেয়রকে এই বিষয়ে উদ্যোগে হতে হবে।” উল্লেখ্য, পুরসভার বিল্ডিং বিভাগটি মেয়র গঙ্গোত্রী দেবীর অধীনেই রয়েছে। মেয়র অবশ্য জানান, ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙা হয়েছে। ফের অভিযান শুরু হবে। এ দিনের বৈঠকে পুরসভার আর্থিক অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ ছাড়া বিগত বাম বোর্ড কেন্দ্রীয় প্রকল্পের প্রায় ৩০-৩৫ কোটি টাকা অন্যখাতে ব্যায় করেছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে তা ‘ক্যাগ’কে দিয়ে তদন্ত করানোর কথা বলেছেন মন্ত্রী। সেই সঙ্গে পূর্ত, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ, জল প্রকল্প, সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের মত বিষয়গুলির কাজে গতি আনার কথা বলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী। তিনি বলেন, “পুরবোর্ডকে গতিশীল করতে হবে। নতুনভাবে মানুষের সামনেই আনতেই হবে। বাম বোর্ড পুরসভাকে কার্যত দেউলিয়া করে গিয়েছে। আর্থিক অবস্থার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকার, প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলব। একাংশ পুর অফিসার ঠিকঠাক কাজ করছেন না। পুরসভার কাজকর্ম খতিয়ে দেখতে প্রতি দুই মাসে একবার অন্তত বৈঠক করব।” শহরের দূষণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মন্ত্রী জানান, শহরের গাড়ির সংখ্যা হু হু বাড়ছে। সেই তুলনায় নতুন রাস্তাঘাট নেই। বিকল্প রাস্তাঘাট করতে হবে। ডাম্পিং গ্রাউন্ড বিষয়টি দেখা হচ্ছে। আগামী মাসে ওমান থেকে একটি প্রতিনিধি দল আসছেন। এ ছাড়া পার্কিং জোন, ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট এবং গ্রিন পুলিশের কাজ দ্রুত সেরে ফেলতে হবে। বিধান মার্কেট আধুনিকীকরণ, পুরসভার উদ্যোগে নতুন হাসপাতাল নির্মাণ, বকেয়া কর আদায়ের জন্য পুরসভা উদ্যোগী হতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ি শহরকে একসঙ্গে নিয়ে ‘জহরলাল নেহেরু আর্বান রিনিউয়ান মিশনে’র আওতাভুক্ত করার জন্য রিপোর্ট, দুই শহরে নাগরিক কনভেনশন করার কথাও বৈঠকে মন্ত্রী বলেন। পুরসভা সূত্রের খবর, পুরসভার বিভিন্ন মামলার অবস্থা, আইনজীবীদের প্যানেলকে নতুন করে ঢেলে সাজার কথাও মন্ত্রী বলেন। এ ছাড়া সংযোজিত এলাকার জন্য আলাদা প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ে পুরসভা এতদিনে কী করেছে তা জানতে চান। ডিআই ফান্ড মার্কেটগুলি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনে আনা নিয়েও আলোচনা হয়। পুরসভার জঞ্জাল বিভাগের তরফে রাজ্যের কাছে পাওনা প্রায় সাড়ে ৩৯ লক্ষ টাকার কথাও মন্ত্রীকে জানানো হয়। |