বাম ঘনিষ্ঠতার জায়গা থেকে সরে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে শিলিগুড়ি পুরবোর্ড পুনর্গঠনের ব্যবস্থা না-করলে বাজেট সমর্থন করা হবে না বলে হুমকি দিল তৃণমূল কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব পূর্ত দফতরের বাংলোয় শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র, ডেপুটি মেয়র, মেয়র পারিষদ-সহ অফিসারদের নিয়ে বৈঠক ডাকেন। সেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের বরো চেয়ারম্যান কৃষ্ণ পাল-সহ চার জন কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী চলে যাওয়ার পরে কৃষ্ণবাবুরা মেয়রকে জানিয়ে দেন, তাঁরা বোর্ডে অংশগ্রহণ করতে চান। ৩০ জুন বাজেট পেশ হওয়ার কথা। তার আগেই অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত না হলে বাজেট সমর্থন করা হবে না।
কিন্তু, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বোর্ড পুনর্গঠনের সূত্র না-মিললে কী হবে? উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতমবাবু বলেন, “রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। আমি কলকাতায় গিয়ে উত্তরবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলীয় নেতা মুকুল রায়ের সঙ্গে কথা বলছি। কয়েকজন কাউন্সিলরও কলকাতায় যাচ্ছেন। আলোচনা হবে। তবে উন্নয়ন আর রাজনীতি একসঙ্গে চলবে না। অনেক হয়েছে। এখন থেকে আমি শিলিগুড়ি পুরসভার কাজকর্মের বিষয়টি নিজেই দেখভাল করব।” |
পুরসভা সূত্রের খবর, তৃণমূলের হুমকির জেরে বিব্রত মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত সঙ্গে সঙ্গেই কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। কিন্তু, সেখানে কোনও সমাধান সূত্র মেলেনি। বরং একপক্ষ বামেরা সমর্থন করলে বাজেট পাশ হয়ে যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুললে আর এক পক্ষ ইস্তফার হুমকি দেন। কাউন্সিলরদের একাংশ মেয়রের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মেয়র অবশ্য জটিলতার নিষ্পত্তি দ্রুত হবে বলে আশাবাদী। মেয়র বলেন, “দুই দলের রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যে আলোচনার পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। দলের তরফে যা নির্দেশ দেওয়া হবে তা পালন করা হবে।”
৪৭ আসনের শিলিগুড়ি পুরবোর্ডে কংগ্রেসের ১৫ জন, তৃণমূলের ১৪ জন এবং বামফ্রন্টের ১৭ জন কাউন্সিলর আছেন। এক জন তৃণমূল কাউন্সিলর ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছেন। ২০০৯ সালে পুরবোর্ড দখল করার পর মেয়র নির্বাচন প্রশ্নে দুই দলের সম্পর্কে ফাটল দেখা দেয়। ভোটাভুটিতে কংগ্রেসকে মেয়র নির্বাচনে বামেরা সমথর্ন করায় বোর্ডে যোগ দেয়নি তৃণমূল। পরে বহুবার দু’দলের নেতারা যোগদানের বিষয়টি নিয়ে আলোচনার করলেও কিছুই হয়নি। তবে বর্তমান মন্ত্রী তথা পুরসভার কাউন্সিলর গৌতমবাবুর নেতৃত্বে তৃণমূল কাউন্সিলরেরা বিভিন্ন সময়ে পুরবোর্ডকে সমর্থন করেছেন। গত আর্থিক বাজেটকেও সমর্থন করে পাশ করান তৃণমূল কাউন্সিলররা। এতদ্সত্ত্বেও মেয়র উন্নয়নের কাজে গতি আনা তো দূরের কথা, পুর-প্রশাসনও ঠিকঠাক চালাতে পারছেন না বলে জানতে পারেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী। তা জেনেই এ দিন প্রথমে পুরসভায় গিয়ে নিজে দলীয় কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক করেন। পরে পূর্ত দফতরের বাংলোয় মেয়র ও পুর অফিসারদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। ওই বৈঠকে গৌতমবাবু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বামেদের আমলে বোর্ড কী কাজে কত খরচ করেছে তা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে বলে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট নির্বাচনে প্রতিশ্রুতি দিলেও তা পালন হয়নি।” বোর্ড গঠনের পরে দেড় বছর গড়ালেও বাম ঘনিষ্ঠতার জন্য মেয়র তা করতে পারেননি বলে গৌতমবাবুর অভিযোগ। |