অভিযুক্ত সিপিএম নেতার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার ভক্তিনগরে
শিলিগুড়ি লাগোয়া ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি এলাকার এক সিপিএম নেতার ঝুলন্ত দেহ মিলল তাঁর ঘরেই। বৃহস্পতিবার ভোরে ভক্তিনগর থানার জনতানগরে ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম তপন দেবনাথ (৬১)। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের সন্দেহ, তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন।
ঘটনাচক্রে বুধবার তপনবাবুর বিরুদ্ধে বন্দুক দেখিয়ে জমি বিক্রিতে বাধ্য করানোর অভিযোগে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর দ্বারস্থ হন গায়ত্রী সাউ নামে এক মহিলা। গায়ত্রীদেবীকে থানায় নিয়ে গিয়ে পুলিশকে বিষয়টি দেখার নির্দেশ দেন মন্ত্রী। পরিবারের মতে, অভিযুক্ত তপনবাবুকে থানায় জেরা করে পুলিশ। রাতে খাওয়া-দাওয়া করে শুয়ে পড়লেও ভোরবেলা তাঁর দেহ ঝুলতে দেখেন বাড়ির লোকজন। তাঁরা ঘটনাটি লিখিত ভাবে থানায় জানান। পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠায়। রাতে তপনবাবুর ছোট ছেলে প্রসেনজিৎ থানায় ফের একটি আবেদন জমা দেন। তাতে এই ঘটনার পিছনে কোনও ষড়যন্ত্র বা প্ররোচনা আছে কিনা, তা তদন্ত করে দেখতে বলা হয়।

তপন দেবনাথ
প্রায় দু’দশক আগে বহরমপুর থেকে এসে জনতানগরে ডেরা বাঁধলেও সিপিএমের নেতা হওয়ার সুবাদে এলাকায় অত্যন্ত প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন তপনবাবু। এলাকায় তিনতলা বাড়ি, শহর ও লাগোয়া এলাকায় বেশ কিছু জমিজমা ও একাধিক দোকান রয়েছে মৃত তপনবাবু ও তাঁর পরিবারের লোকজনদের। দুই ছেলে ব্যবসা করেন। বড় ছেলে অজয় বলেন, “বছর দুয়েক আগে বাবার বুকে পেস মেকার বসানো হয়। থানা থেকে ফেরার পর থেকেই বাবা বেশ টেনশনে ছিলেন। ভোরে আমার স্ত্রী ভেজানোর দরজার ফাঁক দিয়ে ঝুলন্ত দেহ দেখতে পায়। আমরা কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করার কথা এখনও ভাবিনি।”
সিপিএমের দার্জিলিং জেলা কমিটি কিন্তু ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবিতে সরব হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে আজ, শুক্রবার ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডে ১২ ঘণ্টার বন্ধের ডাক দিয়েছে সিপিএম। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য ও জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকার দলীয় অফিসে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে অভিযোগ করেন, “দলের নেতা তথা কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ তুলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। থানায় ডেকে জেরার নামে মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। হত্যা, না আত্মহত্যা তা আগে নিশ্চিত হওয়া দরকার। হত্যা হলে যাঁরা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের হাত থাকতে পারে। আত্মহত্যা হলে কারও প্ররোচনা থাকাও বিচিত্র নয়। সে জন্যই উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হওয়া দরকার।”
এ দিন সকালে সরকারি বৈঠক চলাকালীন তপনবাবুর মৃত্যুর খবর পেয়ে অনুগামীদের মাধ্যমে তাঁর পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী। দুপুরে তিনি বলেন, “যে কোনও মৃত্যুর ঘটনাই দুর্ভাগ্যজনক। আমি ওঁর পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছি। উনি কোন দলের ছিলেন সেটা বড় কথা নয়। আমি শীঘ্রই ওঁর বাড়িতে গিয়ে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলব।” তিনি জানান, তপনবাবুর বিরুদ্ধে তাঁর কোনও অভিযোগ নেই। গৌতমবাবুর কথায়, “এক জন মহিলা এসে পুলিশের কাছে সুবিচার পাচ্ছেন না বলায় তাঁকে থানার সামনে নিয়ে গিয়েছিলাম। থানায় ঢুকিনি। পুলিশকে ডেকে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বলেছিলাম। এখন সত্যাসত্য পুলিশ তদন্ত করে দেখবে। প্রয়োজনে সবরকম তদন্ত হবে।”
পাশাপাশি, এক জন প্রৌঢ়ের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক লাভ তোলার চেষ্টা দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেন গৌতমবাবু। তিনি বলেন, “মৃতের বাড়ির লোকজন কোনও অভিযোগ করেননি। অথচ সিপিএমের কয়েকজন বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছেন। যা ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির সিপিএমের নেতা-কর্মীদের একাংশও ভাল চোখে দেখছেন না। তাঁরা সে কথা আমাকে জানিয়েছেন।” পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, তপনবাবুকে থানায় ডেকে পাঠানো হয়নি। হইচই শুনে তিনি নিজেই জমি কেনার প্রমাণ দাখিল করতে কিছু নথিপত্র নিয়ে রাতে থানায় হাজির হন। তাঁকে জেরা করা হয়নি বলে পুলিশের দাবি। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার আনন্দ কুমার বলেন, “আত্মহত্যার ঘটনা বলেই প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে। বুধবার এক মহিলা ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে জমি নিয়ে অভিযোগ করেছেন। তদন্ত শুরু হয়েছে।”
Previous Story Uttarbanga Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.