|
|
|
|
আয়বৃদ্ধির জোড়া উৎস |
শেয়ার লেনদেনে কর চায় রাজ্য, জোর মিউটেশনেও |
শ্যামলেন্দু মিত্র • কলকাতা |
অর্থসংস্থানের জন্য কেন্দ্রের কাছে দরবারের পাশাপাশি রাজ্যের নিজস্ব আয়ের নতুন উৎসের সন্ধানে নেমেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। আর এই উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গের সামনে অন্যতম অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে মহারাষ্ট্র।
পশ্চিমবঙ্গের নতুন সরকারের প্রতি দিল্লি ‘সহানুভূতিশীল’ ঠিকই। কিন্তু তার সুবাদে রাজ্যের অর্থসঙ্কট কেন্দ্র দরাজ হাতে ঘুচিয়ে দেবে, এমনটা ভাবা অবাস্তব। কারণ, এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রেরও সীমাবদ্ধতা আছে। তারা যে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর আর্থিক নিয়ম-কানুনের বাইরে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গকে সাহায্য করতে পারবে না, তা বুঝেই নিজস্ব আয় বৃদ্ধির তোড়জোড় শুরু করেছে রাজ্য সরকার।
এবং এরই প্রেক্ষিতে প্রাথমিক ভাবে চিহ্নিত হয়েছে নিজস্ব আয়ের বড় দু’টো নতুন উৎস। এক, মহারাষ্ট্র সরকারের ধাঁচে শেয়ার কেনা-বেচার উপরে কর বলবৎ, এবং দুই, রেজিস্ট্রেশনের সঙ্গে সঙ্গে জমি-বাড়ির মিউটেশন করিয়ে কর আদায়। এই দু’টি নতুন পথে রাজ্যের কোষাগারে বছরে বাড়তি অন্তত দু’হাজার কোটি টাকা আসতে পারে বলে অর্থ দফতরের অভিমত।
তবে ইচ্ছে করলেই শেয়ার কেনা-বেচায় কর বসানো যায় না। এ জন্য রাজ্যকে আইন তৈরি করতে হবে। যেমন মহারাষ্ট্র সরকার করেছে। তারা নিজেরা সংশ্লিষ্ট আইন প্রণয়ন করে এই উৎস থেকে বিস্তর আয় বাড়িয়েছে। পশ্চিমবঙ্গও এখন সেই পথে হাঁটতে চাইছে। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রের আলোচনা চলছে। পশ্চিমবঙ্গের যে সব বাসিন্দা শেয়ার কেনা-বেচা করেন, তাঁদের নতুন করের আওতায় আনা হবে। করের হার হবে খুবই কম মাত্র ০.০০৫%। অবশ্য শেয়ার কেনা-বেচায় যে হেতু বিরাট অঙ্কের লেনদেন হয়, তাই হার কম থাকলেও এই খাতে আদায় কম হবে না বলে অর্থ দফতর সূত্রে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
ঘটনা হল, রাজ্য সরকারগুলোর জন্য শেয়ার লেনদেনে কর আরোপ সংক্রান্ত একটি অভিন্ন আইন প্রণয়নের কথা কেন্দ্রও ভাবছে। এবং এ ক্ষেত্রে মহারাষ্ট্র সরকারের আইনটাকেই ‘মডেল’ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
অন্য দিকে জমি-বাড়ি কেনা-বেচার সময়ে রাজ্য সরকার ‘রেজিস্ট্রেশন ফি’ পেয়ে থাকলেও সেই সব সম্পত্তির মিউটেশন বাবদ আয় বাড়ছে না। কারণ, মালিকদের মধ্যে জমি-বাড়ির মিউটেশন করানোর প্রবণতাই কম। এমন বহু লোক আছেন, যাঁরা তিন পুরুষ ধরে সম্পত্তি ভোগদখল করছেন, অথচ মিউটেশন করাননি। এ বার রাজ্য চাইছে মিউটেশন থেকে আয় যতটা সম্ভব বাড়াতে। তাই স্থির হয়েছে, সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে সঙ্গেই মিউটেশন করানো আবশ্যিক করে দেওয়া হবে। পাশাপাশি মালিকদের ‘অনীহা’ দূর করতে মিউটেশন প্রক্রিয়া সরল করার কথাও ভাবা হচ্ছে।
|
হিসেব খাতা* (২০১১-১২ অর্থবর্ষ) |
আয় |
ব্যয় |
আয়কর থেকে প্রাপ্য |
৩৮০৮ |
বেতন ও পেনশন (জেনারেল সার্ভিস) |
৩০০০০ |
কেন্দ্রীয় শুল্ক ও কোম্পানি |
৭৭৪৩ |
প্রভিডেন্ট ফান্ড, বিভিন্ন ভাতা |
২৮৬৯৬ |
কর থেকে প্রাপ্য |
সাহায্য ও অনুদান (ইকনমিক সার্ভিস) |
৮৬৫৩ |
বাণিজ্যিক কর |
১৮৩৬০ |
ঋণ পরিশোধ |
৬১৪৯ |
জমি-বাড়ি কেনাবেচার ডিউটি |
৩৩০৬ |
গাড়ি খরিদ, ভাড়া ও জ্বালানি |
২০০ |
জমির খাজনা |
১৭৫৫ |
অন্যান্য |
৪৯৩ |
মোটরযান শুল্ক |
১৩৫৮ |
|
বিদ্যুৎ শুল্ক |
১১৬৬ |
সার্ভিস ট্যাক্স |
১৮৭৯ |
কাস্টমস আদায় |
৩২৪৫ |
কেন্দ্রীয় এক্সাইজ |
২৪৭৪ |
রাজ্য এক্সাইজ |
২৫৩৩ |
কেন্দ্রীয় ঋণ |
৯৫০০ |
ব্যাঙ্ক ঋণ |
১৩৫৪৮ |
* আনুমানিক হিসেব, কোটি টাকায় |
সূত্র: রাজ্য অর্থ দফতর |
|
অর্থ দফতর সূত্রের খবর: বিগত বামফ্রন্ট সরকার বছরের পর বছর পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতে ব্যয় বাড়িয়ে যাওয়ায় উন্নয়নে অর্থের জোগান কমে গিয়েছিল। কর্মীদের বেতন-পেনশন-গ্র্যাচুইটি-প্রভিডেন্ট ফান্ড ও হরেক ভাতা দিতেই আয়ের সিংহভাগ খরচ
হয়ে যাচ্ছে। এ দিকে এই বিশাল
ব্যয়ভার ঝেড়ে ফেলাও সম্ভব নয়। এ হেন ‘সঙ্কটজনক’ পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবর্ষের রাজ্য বাজেট তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। দফতরের অফিসারদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকে বসছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক-পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে
প্রাথমিক আলোচনা করেছেন। দিল্লি গিয়ে বৈঠক করেছেন রাজ্যের অর্থ-সচিব সি
এম বাচোয়াত।
নিজস্ব আয়ের দুই নতুন উৎসের সন্ধান এই সব উদ্যোগেরই ফলশ্রুতি। অদূর ভবিষ্যতে সঙ্কট পরিত্রাণে যা বড় ভূমিকা নেবে বলে সরকারি মহলের আশা। |
|
|
|
|
|